​সর্ষের মধ্যেই ভূত

নিজেকে নির্দোষ দাবি করার একদিনের মধ্যে চিনের সংস্থায় লগ্নির নতুন অভিযোগ উঠল সেবি-র কর্ণধার মাধবী পুরী বুচের বিরুদ্ধে। দেশের শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি)-র প্রধান গত ২০১৭ সালে সর্ব সময়ের সদস্য থেকে আজ সেবি-র চেয়ারপার্সন সদস্য হয়েছেন। সেবি-র একজন প্রধান হিসেবে দায়িত্বে থেকে তিনি শেয়ার কারবারে বিনিয়োগ করতে পারেন কিনা সেই প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের দাবি, শুধু যে তিনি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাটির পদে থেকে গোপন তথ্য জানার সময়ে নথিভুক্ত শেয়ারে ৩৬.৯ কোটি টাকা লেনদেন করেছেন, তা-ই নয়। চিন-ভারত সম্পর্কের উত্তেজনার মধ্যেই টাকা ঢেলেছেন পড়শি দেশের তহবিলে। এটা মাধবীর স্বার্থের সংঘাতকেই তুলে ধরে। গত কয়েক সপ্তাহে বুচের বিরুদ্ধে একাধিক স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ উঠেছে। তাতে নাম জড়িয়েছে তাঁর স্বামী ধবল বুচেরও।

কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ প্রধানমন্ত্রী মোদীর দিকে আঙুল তুলে প্রশ্ন করেছেন, মাধবীর নথিভুক্ত শেয়ার লেনদেনের কথা কি তিনি জানতেন? বিদেশে কবে কোথায় শেয়ারে বিপুল টাকা ঢেলেছেন তা কি তাঁর অজানা বা চিনা সংস্থায় লগ্নি করার কথাও কি তিনি জানতেন না? কংগ্রেসের পবন খেরা আবার তুলে ধরেছেন মাধবীর লগ্নির তথ্য। তাঁর দাবি, ভ্যানগার্ড টোটাল স্টক মার্কেট ইটিএফ, এআরকে ইনোভেশন ইটিএফ, গ্লোবাল এক্সএমএসসিআই চায়না কনিজিউমার এবং ইনভেস্কো চায়না টেকেনোলজি ইটিএফে লগ্নি করেছেন মাধবী। এটা খুবই উদ্বেগের যে সেবির কর্ণধার চিনা ফান্ডে টাকা ঢেলেছেন। ২০১৭-২১ পর্যন্ত বিদেশে সম্পত্তি ছিল মাধবীর।

কংগ্রেস জানিয়েছে, শেয়ার বাজারে মাধবী বুচের লগ্নি নিয়ে সরাসরি স্বার্থের সংঘাতের নতুন তথ্য আবার সামনে এসেছে। প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই আদানির শেয়ার জালিয়াতির ঘটনাতেও নাম জড়িয়েছে মাধবী বুচের। আদানির শেয়ার কারবারে শিখণ্ডি সংস্থায় তাঁর যুক্ত থাকার সংবাদ ফাঁস হয়ে গিয়েছে। আদানির শেয়ার জালিয়াতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট সেবিকে তদন্তের নির্দেশ দিলেও সেই তদন্ত করেনি সেবি। মাধবী নিজের স্বার্থে এই তদন্ত এড়িয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আদানি মোদীর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তাঁর শিখণ্ডি সংস্থায় যুক্ত মাধবীকে সেবির প্রধান হিসেবে নিয়োগ করে প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ কমিটি। তাই বুচের নিয়োগ থেকে শেয়ার বাজারে দেদার বেনিয়ম নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছেই প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস।


আদানি শিল্প গোষ্ঠীর সঙ্গে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি-র প্রধান মাধবী বুচের যোগসাজশে গৌতম আদানি ধনকুবের তালিকায় ক্রমশ উঠে চলেছেন। আদানি গোষ্ঠী দেউলিয়া কোম্পানি কিনে দুই বছরে তার সম্পত্তি বাড়িয়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। শেয়ার বাজারের কারচুপিতে বিপুল সম্পদ বৃদ্ধির নতুন উদাহরণ তুলে ধরেছেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। তিনি বলেছেন আদানির শেয়ার কারবারে সেবি প্রধাননের যোগাযোগ ফাঁস হয়ে গেলেও তা নিয়ে তদন্তে রাজি নন মোদী। আদানি গোষ্ঠীর কেনা নতুন শিল্পের দেদার বকেয়া ঋণ মকুব হয়ে যায়। শেয়ার বাজারে আদানির কেনা দেউলিয়া কোম্পানির সম্পদ বিপুল বেড়ে যায়। বেআইনি সম্পদ বৃদ্ধির বিষয়ে মোদী নীরব। একইভাবে মুখে কুলুপ সেবি প্রধান মাধবীর। এই কেলেঙ্কারির যোগ নিয়ে ফের যৌথ সংসদীয় তদন্তের দাবি জানালেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো আদানির শেয়ার কারচুপি কেলেঙ্কারি তদন্ত দুই মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ থাকলেও ১৮ মাস পেরিয়ে গিয়েছে, আজও তা শেষ হয়নি। এই তদন্ত আদৌ শেষ হবে কিনা সে সম্পর্কেও নিশ্চুপ মাধবী বুচ। রমেশের অভিযোগ, সেবি প্রধান শুধু আদানি নয় শেয়ার বাজারের তালিকায় থাকা কোম্পানির উপদেষ্টা হয়েও অর্থ তুলেছেন। যা স্বার্থের সংঘাতের কারণে সেবি আইন বিরোধী। উদাহরণ হিসাবে তিনি তুলে ধরেন সেবি প্রধান শেয়ার বাজার উপদেষ্টা সংস্থা এগোরা প্রাইভেট লিমিটেডের শেয়ার বাজার সংক্রান্ত পরামর্শ নিয়ে থাকে মাহিন্দ্র অ্যান্ড মাহিন্দ্র, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, ড. রেড্ডি পিডি রাইট সংস্থাকে। সেবির সর্বসমেয়ের সদস্য হলেও ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই সংস্থা বুচ। সেবির সদস্য হিসাবে বেতনের টাকা তুলে ফের শেয়ার বাজারের তালিকায় থাকা সংস্থা থেকে পরামর্শদাতা হিসাবে বেতন নেওয়া বেআইনি। একই সঙ্গে বেআইনিভবে দু’জায়গা থেকে বেতনের টাকা তোলা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলেও মুখ খোলেননি বুচ। আদানির শেয়ার রাজার দুর্নীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে সেবি প্রধানের। তাঁকে সেবি প্রধান হিসাবে নিয়েগে জড়িত মোদী। তাই আদানির শেয়ার বাজারে জালিয়াতি কারচুপির তদন্তে যৌথ সংদসীয় কমিটি গঠনের দাবি তুলেছে কংগ্রেস সহ বিরোধী জোট। সেবির স্বচ্ছতা প্রমাণে এটা অবশ্যই জরুরি।