জঙ্গলের মধ্যে দুই যুবতীকে যৌন হেনস্তায় উত্তপ্ত  এলাকা

কাজ সেরে বাড়ির পথে যাওয়ার সময় দুই আদিবাসী যুবতীকে যৌন হেনস্তার অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে আদিবাসী প্রধান বীরভূমের সদাইপুরের আদিবাসী মহল্লাগুলি। যে দুই যুবকের বিরুদ্ধে দুই আদিবাসী যুবতীকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে, সেই দুই যুবকের সন্ধান পেতে তল্লাশী চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

দুই আদিবাসী যুবতী দুবরাজপুরে কাজ সেরে ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা নামার কিছু আগে চিনপাই পেট্রোল পাম্পের কাছের  বাসস্ট্যাণ্ডে বাস থেকেনামেন। সেখান থেকে বাড়ির পথে হেঁটে যাওয়ার সময় একটি মোটরবাইকে চেপে দুই যুবক তাঁদের পিছু নেয় বলে অভিযোগ। তাঁরা নানাভাবে ওই দুই যুবতীকে উত্যক্ত করতে থাকে। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাওয়া রাস্তায় প্রায়  মাইল দুয়েক যাওয়ার পরে  মোটরবাইক আরোহী ওই দুই যুবক প্রথমে দুই আদিবাসী যুবতীর হাত ধরে টানাটানি শুরু করে এবং পরে তাঁদের যৌন হেনস্তা  করে বলে অভিযোগ। এরপর ওই দুই যুবক আদিবাসী যুবতীদের হুমকি দেয় যে, এই কথা কাউকে জানালে এবার তাঁরা যখন জঙ্গলের পথে আসবে তখন তাঁদের প্রাণে মেরে ফেলা হবে।

কিন্তু ওই দুই যুবতী সেই হুমকি উপেক্ষা করে বাড়ি ফিরে পরিবারের লোকজনদের সমস্ত বিষয়টি জানানোর পরেই এলাকার গোটা আদিবাসী মহল্লায় খবর ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই আদিবাসী মহল্লার মহিলারা লাঠি-বাঁশ হাতে নিয়ে হাজির হন রানিগঞ্জ-মোড়গ্রাম ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে। তাঁদের সঙ্গে বহু আদিবাসী পুরুষও আসেন। তাঁরা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকলে জাতীয় সড়কের দু’প্রান্তে আটকে পড়ে বহু সংখ্যক গাড়ি। খবর পেয়ে সদাইপুর থানার পুলিশ এসে অবরোধ হঠাতে গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আদিবাসী মহিলারা অভিযোগ করেন যে, এখানকার পেট্রোল পাম্পের পাশেই  একটি মাদকদ্রব্যের ঠেক রয়েছে। সেখানে মাদকাসক্তরা যেমন থাকে তেমনি,  এখান থেকেই  মাদকের বড় কারবারও  চলে।


এমন কী, আদিবাসীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় যে,  এখানে যে সিভিক ভলান্টিয়ার থাকেন, তিনিও এই মাদক কারবারীদের সঙ্গ দেওয়ায় এলাকার পরিস্থিতি এত খারাপ হয়েছে।  ক্ষুব্ধ আদিবাসী মহিলারা সেখানকার গুমটিগুলি ভাঙতে গেলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়।  তারপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আর তা ক্রমে সদাইপুর  থানার পুলিশের পক্ষে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে। সদাইপুর থানা থেকে আরও পুলিশ গিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খায়। খবর পেয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে দুবরাজপুর ও সদাইপুর থানার ওসিরা বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান।

ডিএসপি আখতার আলি,  সদর সার্কেল ইন্সপেক্টরও পুলিশ বাহিনী নিয়ে সেখানে পৌঁছে আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে এবং অভিযুক্ত দুই যুবককে গ্রেপ্তারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে  আনেন। পুলিশের পক্ষ থেকে তার আগে থানায় যৌন হেনস্তার অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়। রাতেই সেই অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরই পুলিশ দুই অভিযুক্তকে হাতে পেতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ওই এলাকার পেট্রোল পাম্প এবং এলাকায় অন্য যে সব সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে, তার ছবি খতিয়ে দেখেই পুলিশ অভিযুক্ত দুই ব্যক্তির নাগাল পেতে চাইছে ।