আসানসোল জেলা হাসপাতালে রোগী মৃত্যুতে বিক্ষোভের রেশ মঙ্গল, বুধের পর বৃহস্পতিবারেও অব্যাহত রইল। মৃত রোগী বছর ২০ র সুরজ রুইদাসের মৃতদেহ গাড়িতে রেখেই বুধবার দুপুর দুটো থেকে বিক্ষোভে নামেন পরিবারের সদস্য ও এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের সঙ্গে কাকলি ঘোষ সহ বেশ কয়েকজন বিজেপির নেতা ও নেত্রীর ছিলেন। তাঁরা আসানসোলের জেলা হাসপাতালের মেন গেটের সামনে রাস্তা অবরোধ করেন। এই রাস্তা অবরোধের ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে আসানসোলের অন্যতম ব্যস্ততম রাস্তা এস বি গড়াই রোড। গোটা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ইন্সপেক্টর ইনচার্জ কৌশিক কুন্ডুর নেতৃত্ব আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ। পুলিশের হস্তক্ষেপে বেশ কিছুক্ষন পরে রাস্তা অবরোধ সরলেও হাসপাতালের মুল প্রবেশদ্বার বা মেন গেটে অবরোধ শুরু করেন পরিবারের সদস্য ও এলাকার বাসিন্দারা। মৃত রোগীর বাবা ভরত রুইদাস ও বিক্ষোভকারীদের দাবি, আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন চিকিৎসার গাফিলতির কারণেই মৃত্যু হয়েছে যুবকের। তাই তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশকে এফআইআর করে তদন্ত শুরু করতে হবে।
পাশাপাশি জেলা হাসপাতালের সুপারকে তাঁদের কাছে এসে কথা বলতে হবে। কিন্তু জেলা হাসপাতালের তরফে তাঁদের সঙ্গে কথা বলার জন্য কেউ আসেননি। শেষ পর্যন্ত বিকেল চারটে নাগাদ মৃত যুবকের বাবা ও তিন আত্মীয় গোটা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আসানসোল দক্ষিণ থানায় যান। সেখানে তাঁরা পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ আধিকারিকরা তাঁদেরকে বলেন, তাঁরা তো আগেই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এবার তাঁরা যুবকের মৃতদেহর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থানায় জমা দিন। তার ভিত্তিতে মেডিকেল বোর্ড করে তদন্ত করা হবে। এই আশ্বাস পাওয়ার পরে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ যুবকের পরিবারের সদস্যরা মৃতদেহ সহ গাড়ি আসানসোল জেলা হাসপাতালের সামনে থেকে নিয়ে চলে যান। কিন্তু বৃহস্পতিবারও ঘটনার রেশ কাটেনি। এলাকা থমথমে।
প্রসঙ্গত, আসানসোলের হিরাপুর থানার বার্ণপুরের রাধানগর রোডের সাঁতা বস্তির বাসিন্দা সুরজ রুইদাস নামে ঐ যুবক গত ১৪ অক্টোবর সোমবার সকালে জ্বর ও পেটের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন আসানসোল জেলা হাসপাতালে। কিন্তু জেলা হাসপাতালের মেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডে চিকিৎসারত অবস্থায় মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ ঐ যুবকের মৃত্যু হয়। এর পরেই মৃত্যুর কারণ জানতে আসানসোল জেলা হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন মৃত যুবকের পরিবারের সদস্য ও এলাকার বাসিন্দারা। যে চিকিৎসক ঐ যুবকের চিকিৎসা করছিলেন তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি বলে দাবি পরিবারের সদস্যদের।
তাঁরা সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাসের সঙ্গেও কথা বলেন। তারপরও জট কাটেনা। মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত জেলা হাসপাতালে বিক্ষোভ চলে। এরপর মঙ্গলবার রাতেই গোটা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চেয়ে আসানসোল দক্ষিণ থানায় অভিযোগ করেন মৃত যুবকের বাবা ভরত রুইদাস।
বুধবার দুপুরে যুবকের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয় আসানসোল জেলা হাসপাতালে। তারপরই সেই মৃতদেহ গাড়িতে রেখে আসানসোল জেলা হাসপাতালের মেট গেট আটকে রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখানো শুরু হয়।
এই প্রসঙ্গে পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, গোটা ঘটনা নিয়ে একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। মৃতদেহর ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। সবকিছু দেখে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।