এক নিঃসন্তান বৃদ্ধ দম্পতির অসহায়তার সুযোগ নিয়ে তাদের জমি বাড়ির দলিল চুরি করে নিজেদের নামে করে নেওয়ার অভিযোগ উঠল এক তৃণমূল নেতা এবং তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে । অমিত পান্ডে নামে ওই অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এদিকে তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জেলা তৃণমূলের অন্দরমহলে।
খড়্গপুরের ইন্দা সারদাপল্লীতে থাকেন বৃদ্ধ নিঃসন্তান দম্পতি ৮৫ বছরের জয়দেব ঘড়ুই এবং তার স্ত্রী ৭২ বছরের মিতা ঘড়ুই। মিতা দেবীর অভিযোগ, তার বোনের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে তৃণমূল নেতা অমিত পান্ডে তার বাড়িতে আসা-যাওয়া শুরু করে। তার ও তার স্বামীর স্বাস্থ্য সাথী, আধার কার্ড, বার্ধক্য ভাতা করিয়ে দেবার কথা বলে সরকারি ফর্মের নামে বেশ কিছু কাগজপত্রে আঙ্গুলের ছাপ এবং সই করিয়ে নেয়। ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর তাদের বাড়ির দলিল চুরি যায়। তিনি খড়গপুর টাউন থানায় দলিল চুরির অভিযোগ দায়ের করেন। ২০২৩ সালের ২৮ এপ্রিল মিতা দেবী জানতে পারেন তাদের বাড়ি ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর ইন্দা মালিবাগানের বাসিন্দা জনৈক অমল কর্মকারের নামে হয়ে গিয়েছে। এরপর খোঁজখবর নিয়ে মিতা দেবী আরো জানেন অমিত পান্ডে জাল মোক্তারনামার ভিত্তিতে তাদের জমি সহ বাড়িটি অমল কর্মকারকে দশ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে। সেই বিক্রি দলিলে দুজন সাক্ষীও দিয়েছে।
এরপরে তিনি ও তার স্বামী বারংবার অমিত পান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু অমিত তার রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করে তাদের পাল্টা হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। থানায় অভিযোগ জানিয়েও কোন লাভ না হওয়ায় শেষ অব্দি খড়্গপুরের দেওয়ানী আদালতে অমিত সহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন মিতা দেবী। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া অব্দি মিতা দেবী ও তার স্বামীকে বাড়িতেই বহাল রাখার সিদ্ধান্তের কথা আদালত পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে। আদালত একথাও জানিয়েছে অভিযুক্তদের কাছে বৈধ নথি রয়েছে। এই ঘূর্ণিপাক থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসবেন বৃদ্ধ নিঃসন্তান দম্পতি তাই নিয়েই চিন্তিত আত্মীয়-স্বজনেরা। মিতাদেবীর ভাই দেবব্রত পাত্র বলেন, মানুষের অসহায়তা এবং ভালো মানুষীর সুযোগ নিয়েছে অমিত পান্ডে। রাজ্যের শাসকদলের নেতা পরিচয় দিয়ে আমার বোন এবং স্বামীকে পাল্টা হুমকিও দিয়েছে। আমরা রাজনীতি বুঝিনা। তাই আইনের আশ্রয় নিয়েছি।
অন্যদিকে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা অমিত পান্ডে বলেন, কিছু লোক পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে। জেঠু, জেঠিমার সঙ্গে আমার সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো ছিল। আমাকে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দেওয়া হয়েছিল । সেই ক্ষমতা বলে আমি জমি বিক্রি করি। বিক্রির মূল্য হিসেবে উনাদের যা প্রাপ্য তার থেকে কিছুটা কম উনারা পেয়েছেন। তার পিছনে একটাই কারণ, ওনারা যতদিন জীবিত থাকবেন ততদিন ওই বাড়িতেই থাকবেন এবং ওদের দেখাশোনার ভারও আমি নেব। আদালতে ব্যাপারটি রয়েছে। সেই জন্য এখন আমার পক্ষে গিয়ে দেখাশোনা করা সম্ভব হচ্ছে না।