৬ বছর পর আবারও বাঘের আতঙ্ক গ্রাস করল ঝাড়গ্রাম জেলার ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওড়িশার সিমলিপালের রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে বেরিয়ে বাঘটি ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়া এলাকায় বনাঞ্চলে রয়েছে। চাকুলিয়ার সীমান্তে রয়েছে ঝাড়গ্রামের জামবনি ব্লক। জামবনি ব্লকের চাকুলিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে রয়েছে ওড়, আমতোলিয়া, বাঘাখন্দর, দর্পশিলা, চিচিড়া,বাঁকড়া, ফুলবেড়িয়া সহ বিভিন্ন গ্রাম। এই গ্রামগুলির সাথে চাকুলিয়ার দূরত্ব দেড় কিমি থেকে তিন চার কিমির মধ্যে। আর তাই জামবনি ব্লকের গিধনি এবং জামবনি সহ অন্যান্য রেঞ্জগুলির অফিসার, বনকর্মীরা নিজের মধ্যে সমন্বয় বজায় রেখে ঝাড়খণ্ড সীমানা এলাকায় নজরদারি চালাচ্ছেন। এই পুরো বিষয়টির নেতৃত্বে রয়েছেন ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমাম।
বনদপ্তর সূত্রে খবর, ওড়িশার সিমলিপাল অভয়ারণ্য থেকে দু-তিন দিন আগে একটি বছর তিনেকের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বনাঞ্চল ধরে এগিয়েছে ঝাড়খণ্ডের দিকে। বাঘটি পুরুষ না কি স্ত্রী, তা নিয়ে ঝাড়গ্রাম বনদফতরের আধিকারিকেরা নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারেন নি। তবে অন্য একটি সূত্রে জানা গিয়েছে বাঘটি স্ত্রী।
প্রসঙ্গত, বছর ছয়েক আগেই লালগড়ে বাঘ এসেছিল। বাঘটি প্রায় ২ মাস লালগড় থানা এলাকা, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন জঙ্গলে ঘোরাফেরা করত। তার আক্রমণে মানুষের আহত হওয়ার ঘটনার পাশাপাশি মারা পড়েছিল বহু গবাদি পশু। তাই স্বভাবতই ঝাড়খণ্ড সীমানা এলাকার জামবনি ব্লকের গ্রাম গুলিতে একটা আতঙ্ক দানা বেঁধেছে। যদিও, বনদপ্তর মানুষজনকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য বার্তা দিয়েছে। বনদপ্তরের পক্ষ থেকে চব্বিশ ঘণ্টা মনিটরিং চলছে ওই ওই সব এলাকায়। উল্লেখ্য ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম লালগড় থানা এলাকার বিভিন্ন গ্রামে বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে ছিল। রামগড়, লক্ষণপুর, ভাউদি, করমশোল, রাঙামেটিয়া, পাথরপাড়া, আমলিয়া-সহ বিভিন্ন গ্রামের গোয়ালে থাকা, বাড়ির সামনে বাঁধা গরু, ছাগল, ভেড়া-সহ বিভিন্ন গবাদি পশু অজানা জন্তুর হামলার শিকার হতে থাকে। জঙ্গলে চরতে গিয়ে মারা পড়ে বিভিন্ন গবাদি পশু, বুনো শুয়োর-সহ বিভিন্ন জন্তু। তাদের হাড়গোড় মিলতে থাকে। এরপর পায়ের ছাপ মিলতে থাকে। বেশ কিছু গ্রামবাসী বাঘ দেখেছেন এমনও বলেছিলেন। কিন্তু বনদপ্তর নিশ্চিত হতে পারছিল না। খাঁচা পেতেও কোন লাভ হয়নি।
এদিকে বিভিন্ন গ্রামে হামলার ঘটনা ঘটতেই থাকে। এরপর বনদপ্তর বিভিন্ন গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে ট্র্যাপ ক্যামেরা বসায়। সেই ট্র্যাপ ক্যামেরার মধ্যে একটিতে ওই বছরই ২ মার্চ মেলখেড়িয়ার জঙ্গলে প্রথম রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ছবি ধরা পড়ে। এরপর বনদপ্তর তৎপরতার সঙ্গে বাঘটিকে জীবন্ত ধরার চেষ্টা চালিয়ে যায়। ড্রোন উড়িয়ে বাঘের অবস্থান বোঝার চেষ্টা চলতে থাকে। কিন্তু সব চেষ্টা বিফল হয়ে যায়।
১৩ এপ্রিল মেদিনীপুরের সদর ব্লকের চাঁদড়ার বাঘঘোড়ার জঙ্গলে শিকারিদের হাতে মারা পড়ে বাঘটি। ছয় বছর আগের ওই ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেই জন্য সতর্ক পদক্ষেপ ফেলছে বনদপ্তর। ঝাড়গ্রামের এক বনকর্তা জানান ‘চাকুলিয়ার জঙ্গলে বাঘটি রয়েছে। বনদপ্তর সতর্ক নজর রাখছে। তিন থেকে চারটি রেঞ্জের মধ্যে কোঅর্ডিনেশন রেখে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে।’