পাথর বোঝাই গাড়ি আটকে যাওয়ায় মার খাচ্ছে পাথর শিল্পাঞ্চল

ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবেই শুধু নয়, বিভিন্ন দিক থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে রয়েছে বাণিজ্যিক আদান-প্রদান। সেই সূত্রেই বীরভূম জেলার সঙ্গেও প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের রয়েছে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা। কিন্ত গত ৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে অস্থিরতা বাইরে চলে এসেছে তাতে, বিভিন্ন দিক থেকেই নানাবিধ সমস্যা দেখা দিয়েছে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে বীরভূম জেলাকেও।

এজেলার নলহাটি ও মুরারই এলাকায় যে পাথর শিল্পাঞ্চল রয়েছে তার অর্থনীতির উপরে বিশাল প্রভাব ফেলেছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। কৃষি প্রধান জেলা হিসেবে বীরভূম পরিচিত। এজেলায় তেমন কোনও শিল্প নেই। ডা. বিধানচন্দ্র রায় মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে জেলার আমোদপুরে স্থাপিত হয়েছিলো আমোদপুর সুগার মিল আর রাজনগর শিসল ফার্মকে কেন্দ্র করে শিসল বা কোঙার দড়ি তৈরীর কারখানা। কিন্তু দু’টি কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে এজেলা বর্তমানে শিল্পবন্ধ্যা জেলা হিসেবে পরিচিত হয়েছে। এরমধ্যেই এজেলায় টিকে রয়েছে নলহাটি ও মুরারই এলাকার পাথর শিল্পাঞ্চল। প্রাকৃতিক সম্পদ পাথর উত্তোলন করে তা পাথরভাঙা কল বা ক্রাশারের মাধ্যমে বিভিন্ন আকারে ভেঙে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। সেই পাথরেরই ৭০ শতাংশ সড়ক পথে ট্রাক-ডাম্পার ভর্তি হয়ে চলে যায় প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে। এখানকার উন্নতমানের পাথরের বিপুল চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। সড়ক পথে দৈনিক প্রায় দু’ হাজার ট্রাক-ডাম্পারে বালুরঘাটের হিলি সীমান্ত, বনগাঁ, বসিরহাট ও মালদহ হয়ে এই পথে পাথর সরবরাহ করা হয় বাংলাদেশে।

এছাড়াও রাজগ্রাম ও নলহাটি থেকে রানাঘাট হয়ে রেলপথে পাথর যায় বাংলাদেশের। কিন্তু বর্তমানে সড়ক পথে মাত্র শ’তিনেক ট্রাকে বাংলাদেশে পাথর যাওয়ার ফলে, এই জেলার পাথর শিল্পাঞ্চলে বিরাট সঙ্কট ও সমস্যা তৈরী হয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এই পাথর শিল্প, পরিবহন ব্যবসা-সহ অন্যান্যভাবে যুক্ত প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ। সরবরাহ ব্যবস্থা মার খাওয়ায় পাথরের মজুতও বেড়ে যাচ্ছে। এখানকার পাথর শিল্পাঞ্চলে প্রতিবেশি ঝাড়খণ্ড রাজ্যের যে সব শ্রমিকরা এসে কায়িক শ্রমের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন, তাঁরাও কর্মহীন হয়ে পড়ায় নিজরাজ্যে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এরফলে পাথরের দামও পড়ে যাচ্ছে। আগে প্রতিটন পাথর যেখানে ৬৫০ টাকা থেকে ৭৩০ টাকায় বিক্রি হতো মাপ অনুযায়ী, বর্তমানে সেই পাথর বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকার মধ্যে। যা আগে কখনও হয়নি। পাথর খাদান ও ক্রাশার মালিকরা মনে করছেন, এরফলে এখানকার পাথর ব্যবসায় দৈনিক গড়ে আট থেকে দশ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তাঁদের। মার খাচ্ছে পরিবহন ব্যবসা। সেইসাথে ৭০ শতাংশ পাথর বাংলাদেশে রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, জেলার ক্ষেত্রে পাথর শিল্পাঞ্চল থেকে সরকারি কোষাগারে যে বিপুল পরিমাণের রাজস্ব জমা পড়তো তাও এসে তলানিতে ঠেকেছে। এটি আন্তজার্তিক সীমানা বিষয়ক সমস্যা হওয়ার কারণে জেলা প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে কোনও পদক্ষেপও নিতে পারছে না বলে জানা যাচ্ছে।