ধান সংগ্রহের পর সেই ধান ভাঙিয়ে চাল তৈরি করে সরকারি কাজে লাগানো হয়। খাদ্য দপ্তর সেই চাল সংগ্রহ করে রাইস মিলগুলির মাধ্যমে। কিন্তু এবার সেই কাজে বেঁকে বসেছে চালকল মালিকদের সংগঠন। রবিবার তারা সাফ জানিয়ে দেয়, তাঁদের বেশ কিছু শর্ত পূরণ না হলে তাঁরা এবার সরকারের খাদ্য দপ্তরের ধান ভাঙিয়ে চাল তৈরি করতে পারবে না।
এই নিয়ে চলতি বছর দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। কিন্তু কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি। এদিকে ২ নভেম্বর থেকে সরকারিভাবে ধান কেনা হবে বলে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। ঠিক তার আগে চুক্তি না হলে শুধুমাত্র রেশন ব্যবস্থাই নয়, সব ক্ষেত্রেই ঘোর সংকট নেমে আসতে চলেছে। আর রাজ্যের খাদ্য ভাণ্ডার পূর্ব বর্ধমান জেলার রাইস মিল মালিকরাই এই দাবি নিয়ে সবথেকে বেশি সোচ্চার। এই জেলায় একদিকে যেমন সবথেকে বেশি ধান উৎপাদন হয়, তেমনই সরকার বেশি ধানও সংগ্রহ করে। এখান থেকেই রাজ্যের ৮টি জেলায় সরকারি প্রয়োজনে সব চাল সরবরাহ করা হয়। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধান থেকে চাল তৈরি করা না গেলে সরবরাহ আটকে যাবে। এর মধ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকও হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী জটিলতা কাটাতে খাদ্য দপ্তরের আধিকারিক ও মন্ত্রীকে দায়িত্বও দেন। তবে সর্বশেষ বৈঠকে কোনও সুরাহা হয়নি বলে জানা গেছে।
চলতি বছরের গোড়ায় বর্ধমান জেলা রাইস মিল অ্যাসোসিয়েশন ও বেঙ্গল রাইস মিল অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। মোট ৯ দফা দাবিতে তাঁরা সোচ্চার। দীর্ঘদিন ধরে চালকল মালিকরা ধান ভেঙে যে টাকা পান তা খুবই কম। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী, রাজ্যের কাছে রেট বৃদ্ধির জন্য আবেদন রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, সরকারের কাছে এক কুইন্টাল ধান কিনে তা থেকে চাল তৈরি করতে খরচ ১১০ টাকা। কিন্তু চালকল মালিকদের পাওনা মাত্র ৩০ টাকা। কেন্দ্র দেয় ২০ ও রাজ্য দেয় ১০ টাকা। রাইস মিলারদের ওই টাকা বাড়িয়ে নূন্যতম ৬০ করা হোক।
বর্ধমান জেলা রাইস মিল অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি কিরণ শঙ্কর মণ্ডল বলেন, রেট বৃদ্ধি না হওয়ায় ফলে লোকসান বাড়ছে। তাই সমস্যার সমাধান না হলে তাঁরা নতুন করে খাদ্য দপ্তরের সঙ্গে চুক্তিতে যেতে রাজি নন। রাইস মিল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন , এ ব্যাপারে রাজ্যের মুখ্য সচিবকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তবে দাবি পূরণ হয়নি। যদিও মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ৯ দফা দাবিতে মুখ্য সচিবের কাছে যে আবেদন পাঠানো হয়েছিল তা নিয়ে আলোচনা হয়। দাবিগুলি না মানা হলে চালকল মালিকরা খাদ্য দপ্তরের সঙ্গে ধান ভাঙানোর চুক্তিতে যেতে রাজি নন বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে চালকল মালিকদের যে পরিবহণ খরচ দেওয়া হয় তা অতি সামান্য। মান্ডি থেকে একবার ধান নিয়ে আসা আবার চাল নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার খরচ অনেক। এমনকি এ জেলা থেকে ভিন জেলায় চাল পাঠাতেও যে টাকা দেওয়া হয় তাতে মিল মালিকদের পকেটের টাকা চলে যায়। পাশাপাশি ধান ভেঙে ৬৮ শতাংশ চাল দিতে হয় সরকারকে। কিন্তু এখানকার ধানে প্রায় ৬৪ শতাংশ চাল পাওয়া যায়। কিন্তু ৪ শতাংশ চাল বেশি দিতে গিয়ে লোকসান হচ্ছে।
এদিকে রাইস মিল মালিকদের সঙ্গে রাজ্যের খাদ্য দপ্তরের চুক্তি না হলে চাল উৎপাদনে ব্যাপক ঘাটতি দেখা যাবে রাজ্যে। প্রতি বছরই প্রায় কমপক্ষে ৩০ লক্ষ টন চাল প্রয়োজন। এই চাল থেকে একদিকে যেমন রেশন দোকানে সরবরাহ হয়, একইসঙ্গে মিড ডে মিলের কাজেও দেওয়া হয়ে থাকে। ধান ভাঙানোর চুক্তি না হলে সব ক্ষেত্রেই সংকটে দেখা দিতে পারে। যদিও রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, ডিসেম্বর মাসে ধান কেনা শুরু হবে। তার আগে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। অন্যদিকে সূত্রের খবর, কলকাতার নিউটাউন বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে রাইস মিল মালিকরা বৈঠক বসেন। তাতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ২০ অক্টোবরের মধ্যে ধান ভাঙানোর চুক্তি না হলে তাঁরা মানবেন না। তবে মুখ্যসচিব ডাকলে তাঁরা বৈঠকে যোগ দেবেন।