বন্যার জল কিছুটা নামতেই পূর্ব বর্ধমানের দামোদর নদে দেদার বালি চুরি শুরু হয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের গলসি এলাকায় এই বালি চুরি নিয়ে এবার সরব হয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরা জেলার ভূমি ও রাজস্ব দপ্তরে অভিযোগ জানালেন। ভূমি রাজস্ব দপ্তরের আধিকারিকরা এই বালি চুরি নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও তাঁরা জানান যে, এখন ওই অঞ্চলে কোনও বৈধ বালি খাদান নেই। একই সঙ্গে বালি তোলার জন্য এখনও নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
গতবারের নিম্নচাপের বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর ডিভিসির জল ছাড়ার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ায় পরই গলসি এলাকার দামোদর নদের জলস্তর কিছুটা কমেছে। অভিযোগ, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফের নদী থেকে বালি চুরি করে পাচার শুরু করে দিয়েছে এক শ্রেনীর বালি মাফিয়ারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গলসির গোহগ্রাম বাবুপাড়ার ঢাল সংলগ্ন টেনি যাদবের ঢাল নামে পরিচিত ওই এলাকা দিয়ে নদীর চর থেকে ট্রাক্টরে করে বালি চুরি করে পাচার চলছে অবাধে। দিনরাত নদী থেকে বেআইনি ভাবে বালি তুলে ট্রাক্টরের মাধ্যমে গোপডাল, বাঁশতলা সহ একাধিক জায়গায় মজুত করার পর সেই বালি সন্ধ্যার পর রাতের অন্ধকারে বিনা চালানে প্রতিদিন পাচার চলছে। গোহোগ্রাম এলাকায় এই মুহূর্তে কোনও বৈধ বালি খাদ নেই বলেই ভূমি রাজস্ব দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
এলাকাবাসীদের অভিযোগ এই ভাবে বেআইনি কারবারের পিছনে স্থানীয় এক প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য সহ একাধিক সিভিক ভলান্টিয়ার সরাসরি যুক্ত রয়েছে। ফলে স্থানীয় এলাকাবাসী সব কিছু দেখেও প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। স্থানীয়দের অনেকেই জানিয়েছেন, দিনের বেলায় গলসির রাস্তায় সচরাচর বালির গাড়ি দেখতে পাওয়া যায় না। কিন্তু রাত বাড়লেই গলসি চৌমাথা দিয়ে একের পর এক বালির গাড়ি অনায়াসে বেরিয়ে যায়। তাঁদের অনেকের অভিযোগ, যদি বৈধভাবেই বালির কারবার চলতো তাহলে দিনের বেলায় গাড়ি চলাচলের অসুবিধা কোথায়! নাকি, রাতের অন্ধকারে অবৈধ কারবারিদের সঙ্গে গোপন লেনদেনের সুবিধা হবে বলেই এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
এদিকে রাতের দিকে বালি পাচারের ফলে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তবে দীর্ঘদিন ধরেই গোহগ্রামের গোপডাল বাঁশতলা এলাকার দামোদর নদ থেকে এই বালি চুরির বেআইনি কারবার চলে আসছে বলেই অভিযোগ করেছেন খোদ স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কানন মাঝি। তিনি বলেন, ‘এর আগেও পুলিশ ও প্রশাসন কে একাধিকবার অভিযোগ জানিয়েছি। সংবাদ মাধ্যমেও এই এলাকার বালি চুরির খবর প্রকাশিত হয়েছে।
খোদ সাংসদ এই অবৈধ কারবারের রাশ টানতে পুলিশের আধিকারিকদের ফোন করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছেন। কিন্তু কয়েকদিন অতিবৃষ্টির কারণে বন্ধ থাকার পর নদীর জল কিছুটা কমতেই ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে অসাধু কারবারিরা। অবিলম্বে পুলিশ ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা উচিত।