অর্চিষ্মান ঘোষ
গত ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে উত্তর ২৪ পরগণার সোদপুরের পানশিলা অঞ্চলের এক সভাকক্ষে আয়োজিত হল একটি আলোচনাসভা। উদ্যোক্তা ছিল সোদপুরেরই পানিহাটি অঞ্চলের রোকেয়া-চর্চা কেন্দ্র ‘রোকেয়া ইনস্টিটিউট অফ ভ্যালু এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ বা RIVER।
গানে-কবিতায়-গল্পে-আলোচনায়-বক্তৃতায় রোকেয়াকে নানাভাবে স্মরণ করা হল। তবে শুধুই রোকেয়া নন, বার বার ঘুরে ফিরে আসলেন রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, মল্লিকা সেনগুপ্ত। তবে কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন রোকেয়াই। উপস্থিত ছিলেন রিভারের সভাপতি এবং পানিহাটি পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শ্রী সুনীল পাল, সেক্রেটারি এবং খড়দহের কল্যাণনগর বিদ্যাপীঠ ফর বয়েজ-এর ইংরেজির শিক্ষক শ্রী কৃশানু ভট্টাচার্য্য, সহ-সভাপতি কল্পনা বসু এবং ট্রেজারার পূর্ণিমা রায়চৌধুরী।
বর্তমান যুগে রোকেয়ার প্রাসঙ্গিকতা কতটা, তাই নিয়ে বক্তব্য রাখলেন টাকি গভঃ বয়েজ স্কুলের ইংরেজির শিক্ষিকা শ্রীমতি নিবেদিতা রায় চ্যাটার্জি। তাঁর বক্তব্যে, ‘রোকেয়া এক মহাসমুদ্র, যার সব ঢেউ গোনা যায় না।’ রোকেয়া কীভাবে মেয়েদের শুধুমাত্র শিক্ষাই নয়, বরং জোর দিতেন মেয়েদের ‘সঠিক’ শিক্ষার উপরে, তাও জানালেন তিনি। দৈনিক স্টেটসম্যানকে তিনি জানালেন, ‘শিক্ষা মানে কিন্তু শুধু ডিগ্রি নয়। ডিগ্রিধারী বহু মানুষেরই কিন্তু সংকীর্ণ মানসিকতা আছে। রোকেয়া কিন্তু বার বার একটা সঠিক শিক্ষা, যে শিক্ষা মানুষের বোধকে ভীষণভাবে সমৃদ্ধ করবে, তার কথা বার বার বলেছেন।’ মেয়েদের সেল্ফ-ডিফেন্স শেখবার প্রয়োজনীয়তার কথাও জানালেন তিনি।
নারীর শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং বেগম রোকেয়ার ভূমিকা প্রসঙ্গে একটি নাতিদীর্ঘ এবং সুচিন্তিত প্রবন্ধ পাঠ করল খড়দহের কল্যাণনগর বালিকা বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণির পড়ুয়া স্বর্ণালী ঘোষ। দৈনিক স্টেটসম্যানকে সে জানায়, ‘আজ আমি বা আমাদের মতো যারা পড়াশুনো করছি, উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণ করছি, তার জন্য রোকেয়ার অবদান অনস্বীকার্য।… গ্রামের দিকে, বা শহরেরও কিছু অংশে বহু মেয়েরা এখনো শিক্ষার আলো দেখতে পায়নি। তাদেরকে শিক্ষার গুরুত্ব বোঝানোর জন্য এই ধরনের অনুষ্ঠান আরও হওয়া উচিত।’
কর্মক্ষেত্রে নারীর সুরক্ষার মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এলো আইনজীবী মিঠু দাসের বক্তব্যে। তিনি বিশাখা কমিটি, পশ আইন, মেটারনিটি বেনিফিট আইন, পকসো আইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করলেন। কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার মত কোনও ঘটনা দেখলে যাতে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়, সেই ব্যাপারটা সুনিশ্চিত করার পরামর্শ দিলেন তিনি।
সেক্রেটারি কৃশানু ভট্টাচার্য্য জানালেন, ‘১৯৯৭ সালে সুনীল পাল মহাশয়, পানিহাটি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ইরা চক্রবর্তী এবং সেক্রেটারি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় মিলে সোদপুরে রোকেয়াচর্চা শুরু করেন। আসলে, তখন জানা গিয়েছিল, পানিহাটিতেই কোথাও একটা রোকেয়ার সমাধি রয়েছে। অনেক নথিপত্র ঘেঁটে এবং সাবস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্সের ভিত্তিতে পানিহাটি বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গনকেই চিহ্নিত করা হয়, সেখানে রোকেয়ার স্মৃতিফলক প্রতিষ্ঠা করা হয়। তারপর থেকে প্রতিবছরই এই আলোচনা সভা আয়োজিত হত, কিন্তু কোনও সংগঠিত রূপ ছিল না। ২০১০ সাল নাগাদ আমরা ভাবি, ব্যাপারটাকে একটা সংগঠিত রূপ দেব। তখনই তৈরি হয় রিভার। তারপর থেকে আমরা নিয়মিত আলোচনাসভার আয়োজন করি। তবে কোভিডের কারণে কিছু বছর তা বন্ধ ছিল।’