পার্কিংয়ের নামে শান্তিনিকেতনের রতনপল্লী এলাকার কোয়ার্টারগুলিতে বসছে পিকনিকের আসর। চলেছে দেদার রান্নাবান্না। আর পিকনিকের পর সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা প্লাস্টিক থার্মোকলের থালা, গ্লাস থেকে ছড়াচ্ছে দূষণ। যা দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রবীণ আশ্রমিকেরা। পর্যটকদের পিকনিকের সময় হইহুল্লোড়, চিৎকার, চেঁচামেচি আর চরা সুরের গানের জেরে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা সমস্ত ঘটনা জানিয়েছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনকে। তাঁদের বক্তব্য, এই বিষয়ে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে, তাঁরা বিক্ষোভের পথে যেতে বাধ্য হবেন।
শান্তিনিকেতনে রতনপল্লীর মাঠ, পরিত্যক্ত কোয়াটার গুলির সামনে পার্কিং এর নামে বাস, চারচাকা গাড়ি প্রবেশ করিয়ে রমরমিয়ে চলছে পিকনিক। এই পার্কিং এর নামে কোয়াটারগুলির সামনে বাস ও চারচাকা গাড়ি প্রবেশ করিয়ে দিয়ে পিকনিক করানোর অভিযোগ উঠছে বোলপুর পুরসভার পুরকর আদায়কারী ও পার্কিং ঠিকাদার ব্যবসায়ী নাসির শেখের বিরুদ্ধে। যদিও ওই ব্যবসায়ীকে কেন্দ্র করে আগেও পুরকর বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। কিন্তু পুরকর নিয়ে বিতর্ক থাকার পরেও তিনিই এ বছরে বিশ্বভারতীর পার্কিং আদায়েরও বরাত পেয়েছেন। মূলত বিশ্বভারতীতে বছর ভর পর্যটকদের ছোট বড় গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে বরাত দেওয়া হয়। কিন্তু বিতর্ক দানা বেধেছে সেখানেই, যেখানে টেন্ডারে উল্লেখ না থাকা মাঠগুলোও পার্কিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিশ্বভারতী পার্কিংয়ের টেন্ডার দিলেও শান্তিনিকেতনের রতন পল্লী ও পরিত্যক্ত কোয়ার্টারগুলির সামনে বাস, চারচাকার গাড়ি ঢুকিয়ে চড়ুইভাতি বা পিকনিক করার অনুমতি গিয়েছে কে?
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ সমস্ত কিছু জানা সত্ত্বেও পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের এই বিষয়ে কোনও হেলদোল নেই। বৃহস্পতিবার সকালে দেখা যায়, শান্তিনিকেতনের রতন পল্লীর মাঠ ও কোয়াটারগুলির সামনে বাস ও পর্যটকেরা পৌঁছে রান্নাবান্না, খাওয়া দাওয়া করছেন। একইসঙ্গে হৈ হুল্লোড় এবং নাচাগানাও হচ্ছে। পর্যটকদের এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তাঁরা জানান, ‘পার্কিংয়ের জন্য ৫০০ টাকা ও কোয়াটারের সামনে রান্না ও খাওয়ার জন্য ৫০০ টাকা দেওয়া হয়েছে।’ এই বিষয়ে বিতর্কিত পার্কিং ঠিকাদার ব্যবসায়ী নাসির শেখ জানিয়েছেন, ” নিয়ম মেনে বিশ্বভারতী থেকে টেন্ডার পেয়েছি, তাই পার্কিং করেছি। যদি কোনও সমস্যা হয় বিশ্বভারতীর সঙ্গে বোঝাপড়া করে নেব।”
রতন পল্লীর বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ মিত্র, ও সন্দীপ সিংহ, কবিদ চক্রবর্তীরা জানিয়েছেন, “পাঁচ বছর পার্কিং ছিল না। হঠাৎই পার্কিং এর নামে পর্যটকদের হট্টগোলে সকলেই অতিষ্ঠ। বিশেষ করে শুক্র থেকে রবি সপ্তাহের এই তিন দিন। এখানে সাঁওতালি বিভাগসহ উচ্চপদস্থ আধিকারিক, প্রাক্তনী ও প্রবীণ আশ্রমিকদের বসবাস। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন পার্কিং কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নজর দিক। নাহলে আমরা প্রতিবাদে স্মারকলিপি জমা ও বিক্ষোভের পথে যেতে বাধ্য হব।” ঠাকুর পরিবারের সদস্য তথা প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর আক্ষেপের সুরে বলেন, “বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসের ২০০ মিটারের মধ্যে পার্কিং এর নামে শান্তিনিকেতনে যা খুশি তাই চলছে। কেউ দেখাশুনা করার নেই। আমরা সমস্যায় পড়েছি।” বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ জানান, “এমন যদি ঘটে থাকে একেবারেই অবাঞ্ছিত ঘটনা।”