নানা প্রতিবেশী রাজ্য থেকেও লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম পুরুলিয়ার মৌতোড় কালীপূজায়

এ বছরের কালী পূজাতেও লক্ষাদিক ভিড়ে উপচে পড়লো মন্দির চত্বর। প্রায় দু থেকে তিন হাজারেরও বেশি বলিদান হয়ে থাকে এই কালীপূজায় আর এই মহাকালীর পুজো উপভোগ করতে দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ ভক্তদের সমাগম হয়ে থাকে এই মন্দিরে। শুধু সারা রাজ্য নয় ওড়িশা, ঝাড়খন্ড, বিহার থেকেও ভক্তদের ভিড় উপচে পড়লো পুরুলিয়া জেলার সুবিখ্যাত রঘুনাথপুর ২ নম্বর ব্লকের মৌতোড়ের কালী মন্দিরে। ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে রাজ্য পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে পুলিশের বড় আধিকারিকরা সরাসরি এই মন্দিরের পুজো এবং মেলার নিরাপত্তায় রয়েছেন।পুরুলিয়া জেলা তথা পশ্চিমবঙ্গের সমীক্ষা তো এই কালীপূজা প্রায় ৫৫০ বছরে পা দিল এবছর। এই গ্রামের ভট্টাচার্য এবং ব্যানার্জী পরিবারের পক্ষ থেকে এই পূজা করা হয়। এখানে মা কালী উগ্র মহাকালী রূপে পুজো হয়ে থাকে। কথিত রয়েছে বহু বছর পূর্বে এই স্থানটি ছিল জঙ্গলে ঘেরা এই জায়গায় মহাকালীর পূজা করতেন সাধক বামাক্ষ্যাপার মতই তন্ত্রসাধক বাঘাম্বর ভট্টাচার্য। তিনি তার সাধনার মাধ্যমে দর্শন লাভ করেন মা মহাকালীর। পঞ্চ মন্দির আসনে উপবিষ্ট হয়ে মহাকালীর মহাসাধনায় লিপ্ত হয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে ওই জায়গায় দক্ষিণেশ্বরের আদলে মন্দির নির্মাণ হয়। গ্রামবাসীদের মুখে শোনা যায় এই কালী পূজায় এখনো সূরা দিয়ে মায়ের পূজা করা হয় সেই সময় হাঁড়ি হাঁড়ি সুরা দিয়ে মায়ের পুজো চলছিল, সেই খবর পেয়ে কাশিপুর রাজবংশের রাজা সেই স্থানে আসে এবং তন্ত্র শক্তি বলে সেই সূরা তথা মদ দুধে পরিণত হয় এবং সেই দুধ থেকে ঘি এবং সেই ঘি থেকে যোগ্য অনুষ্ঠান হয়। সারা বছরই প্রত্যেক দিন এখানে কালীপুজো হয় নিয়ম করে। ছাগ বেশ ও মহিষ বলি হয় ২০০০ এরও বেশি। বিভিন্ন রাজ্য থেকেও এই ছাগল বলি দিতে আসে এই কালীমন্দিরে। আগে এই কালী মূর্তি উগ্র মহাকালীর রূপ মৃন্ময়ী অর্থাৎ মাটির প্রতিমা ছিল। সম্প্রতি এখানে শিলা মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই দীপাবলীর কালীপূজায় লক্ষ লক্ষ ভিড় সামলাতে নাজেহাল হয় পুলিশ প্রশাসন। মন্দির চত্বর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন করা থাকে। রাজনৈতিক উচ্চপদস্থ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক আধিকারিক পুলিশ আধিকারিকরা এই কালীমন্দিরে পূজা দিতে আসে। ভক্তদের কাছ থেকে জানা যায় এই কালী মন্দিরের পূজা দিলে মনস্কামনা পূর্ণ হয়ে থাকে। হাতেনাতে ফল পাওয়া যায় তার দু-তিন লক্ষেরও বেশি ভক্ত এই কালী পুজোয় অংশগ্রহণ করে থাকে। এই গ্রামে ভট্টাচার্য ব্যানার্জি পরিবারের পক্ষ থেকে এই কালীপুজো চালানো হয়। যে পুরোহিত রয়েছে এই কালীপুজো করার জন্য বংশ পরম্পরায় সেই পুরোীতেই বংশধরনেরাই পূজো করে আসছেন এই মা কালীর। মা ভক্তদের মায়ায় এখানে বাধা পড়ে আছে বলে এই মন্দির কে বাঁধা মৌতোড়ের কালিও বলা হয়। শুধু দীপাবলীর কালী পূজার দিনে নয় প্রত্যেক দিন ছাক বলি হয়ে থাকে মেষ বলি হয়ে থাকে এই মন্দিরে। মন্দির চত্বরের সামনে রক্তে ভিজে থাকে মাটি। কালী পূজার নিয়ম অনুযায়ী যোগ্যা অনুষ্ঠান করার পরদিন হাজার হাজার লোককে প্রসাদ খাওয়ানো হয়, এই মন্দির কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। শুধু পুরুলিয়া জেলা নয় পশ্চিমবঙ্গের এক অন্যতম পূজা হিসেবে গণ্য করা হয় পুরুলিয়ার এই মৌতোড় গ্রামের কালীপুজোকে। শুধু পুজো এবং মানুষের ভিড় নয় কালীপূজা উপলক্ষে এই কার্তিক মাসে দীপাবলীর সময় একটি মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এই মন্দির চত্বরে প্রায় ৫ শতাধিকেরও বেশি দোকান বসে থাকে এই মেলায়। বিভিন্ন ধরনের দোকান বসে থাকে বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা দোকানদারীদের। তাই এই আকর্ষণীয় মেলায় অনেক ভিন্ন সামগ্রী কেনাকাটার জন্য মানুষ এসে থাকে এই গ্রামে। কালীপুজোর তিনদিন বড় পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ থাকে এই সড়ক দিয়ে।