• facebook
  • twitter
Saturday, 19 October, 2024

কৃষ্ণনগরে তরুণীর অর্ধনগ্ন-অর্ধদগ্ধ দেহ উদ্ধার, ধর্ষণ, খুন বলতে নারাজ পুলিশ

উদ্ধার সমস্ত প্রমাণ ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করানো হবে। গোটা অপরাধের সঙ্গে একা তরুণীর প্রেমিকই যুক্ত নাকি তার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত রয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান এসপি।

পুজোর মণ্ডপ ফাঁকা। উমা বিসর্জনের পর যখন কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর প্রস্তুতি চলছে, ঠিক তখনই ফাঁকা বেদীর পাশে পড়ে রয়েছে তরুণীর নিথর দেহ। অর্ধদগ্ধ, অর্ধনগ্ন! কৃষ্ণনগরের আশ্রমপাড়া বারোয়ারি পুজো মণ্ডপের সামনে এই দৃশ্য দেখে চমকে উঠেছিল এলাকাবাসী। আরজি কর কাণ্ডের আবহে যেখানে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদের আগুন, সেখানে ফের প্রশ্নের মুখে নারী নিরাপত্তা। কৃষ্ণনগরে তরুণীর দেহ উদ্ধারের ঘটনা সেই প্রশ্ন যেন আরও জোরালো করে দিল। ধর্ষণ করে খুন? নাকি অস্বাভাবিক মৃত্যু? প্রশ্ন উঠেছিল অনেক। তবে কৃষ্ণনগরের ওই তরুণীর মৃত্যুকে এখনই খুন বলতে নারাজ পুলিশ।

সূত্রের খবর, বুধবার সকাল ৭টা নাগাদ কৃষ্ণনগরের রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমপাড়া এলাকায় এক তরুণীর অর্ধদগ্ধ দেহ পড়ে থাকতে দেখেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এলাকাটি কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশ সুপারের অফিস থেকে ৫০০ মিটার দূরে। ওই এলাকা লাগোয়া আশ্রমপাড়া বারোয়ারির মণ্ডপও রয়েছে। পুজো শেষ। প্যান্ডেলও এখনও খোলা হয়নি। তার আগেই প্যান্ডেলের পাশে তরুণীর দেহ উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায়। দেহ পড়ে থাকতে দেখে তড়িঘড়ি পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রাই। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে অর্ধনগ্ন এবং অর্ধদগ্ধ অবস্থায় তরুণীর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশের প্রাথমিক অনুমান ছিল ধর্ষণ করে খুনের পর তরুণীর পরিচয় লুকোতেই তাঁর মুখে অ্যাসিড ঢেলে বা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও দেহ উদ্ধারের সময় তাঁর জামাকাপড় অবিন্যস্ত ছিল। কিছুটা ছেঁড়া, আবার কিছুটা পোড়া। তবে প্রাথমিক তদন্তের পর কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার কে অমরনাথ জানান, যতক্ষণ না পর্যন্ত তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ নিয়ে স্পষ্টত কিছু বলা যাবে না। তবে প্রাথমিক তদন্তের পর মৃতার শরীরে পোড়া দাগ ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে মৃতার শেষ ফেসবুক পোস্ট ঘিরেও ঘনীভূত হচ্ছে রহস্য। পোস্টে উল্লেখ, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। তোমরা ভালো থেকো।’ সেই পোস্ট আদৌ তরুণী করেছিলেন নাকি তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য কেউ করেছিল তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তরুণীর প্রেমিককে। আটক করে অভিযুক্তের মা-বাবাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

পরিবারের অভিযোগ, প্রেমিক ও তার বন্ধুরা মিলে তাঁদের মেয়েকে গণধর্ষণ করে খুন করেছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, খুব শীঘ্রই তাঁদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। পুজোর সময় প্রেমিকের সঙ্গে পিৎজা খেতে বেরিয়েছিলেন ওই তরুণী। কিন্তু রাত বাড়তে থাকলেও মেয়ে বাড়ি না ফেরায় অভিযুক্তকে ফোন করেন বাবা-মা। প্রথমে ফোন না তুললেও পরে ফোন ধরে তরুণীর মা-বাবাকে গালিগালাজ করার অভিযোগ ওঠে তরুণীর প্রেমিকের বিরুদ্ধে। পরিবারের তরফে আরও জানা যায়, প্রথমে সম্পর্ক নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিবাদ থাকলেও পরে তা মিটিয়ে নেন। এর পরই বুধবার অর্ধনগ্ন এবং অর্ধদগ্ধ অবস্থায় তরুণীর দেহ উদ্ধার হয়।

এ বিষয়ে কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার কে অমরনাথ জানান, নির্যাতিতার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতেই নির্দিষ্ট ধারা যুক্ত করে তদন্ত শুরু হয়েছে। বেশ কিছু সাক্ষ্যপ্রমাণও মিলেছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ। এছাডাও ঘটনাস্থলে ডগ স্কোয়াড নিয়ে যাওয়া হয়। ঘিরে ফেলা হয় গোটা এলাকা। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার সমস্ত প্রমাণ ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করানো হবে। গোটা অপরাধের সঙ্গে একা তরুণীর প্রেমিকই যুক্ত নাকি তার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত রয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান এসপি। আদৌ ধর্ষণ করে খুন নাকি আত্মহত্যা তা তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত জানা যাবে না বলেই স্পষ্ট করেছে পুলিশ।

এদিকে ঘটনার পর থেকেই এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই দোষীর শাস্তির দাবিতে কোতোয়ালি থানার সামনে বিক্ষোভ দেখায় নাগরিক সমাজ। দীর্ঘক্ষণ চলে থানা ঘেরাও। পরে অবশ্য বিক্ষোভ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা। এর পর মৃতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন বিজেপি বিধায়ক লকেট চট্টোপাধ্যায়। পরিবারের পাশে থেকে সুবিচারের দাবি জানাবেন বলে জানান লকেট।