• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

নশিপুর রেলব্রিজ দিয়ে ছুটল প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন, খুশির হাওয়া জেলা

এ আর খানের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে সেই ১৯৯৯ সাল থেকে এই রেলব্রীজ নিয়ে অধীর চৌধুরী লড়াই-আন্দোলন করছেন। রেলমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব থেকে বর্তমান রেলমন্ত্রীর কাছেও তিনি এ নিয়ে দরবার করেছেন।

মুর্শিদাবাদের নশিপুর -আজিমগঞ্জ রেলব্রিজের ওপর দিয়ে ছুটল যাত্রীবাহী ট্রেন । প্রায় দীর্ঘ আড়াই দশক অপেক্ষার পরে এই ব্রিজের ওপর দিয়ে যাত্রীদের নিয়ে ছুটল ট্রেন। বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ট্রেনের উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। আজিমগঞ্জ জংশন থেকে যাত্রীবাহী উদ্বোধনী স্পেশাল মেমো ট্রেন ছুটল কাশিমবাজার পর্যন্ত। উদ্বোধনের মুহূর্তে আজিমগঞ্জ জংশন স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাংসদ তৃণমূল কংগ্রেসের আবু তাহের খান, স্থানীয় বিধায়ক বি জে পি-এর গৌরীশঙ্কর ঘোষ, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান প্রসেনজিৎ ঘোষ এবং রেলের আধিকারিকরা। সবুজ পতাকা নেড়ে ট্রেন চলাচলের সূচনা করেন তাঁরা।

এছাড়াও এদিন উপস্থিত ছিলেন এই রেলব্রীজ চালুর জন্য দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করা প্রয়াত এ আর খান প্রতিষ্ঠিত ‘রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার্স এ্যাসোসিয়েশন’ এর সম্পাদক, সভাপতি সহ অন্যান্য পদাধিকারীরা। ব্রীজের ওপর দিয়ে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন দেখতে রেল লাইনের দু’পাশে ভিড় করেন বহু মানুষ। তারা ট্রেনের যাত্রীদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন ৷ কেউ মোবাইলে ছবি তুলে রাখেন। কেউ আবার যাত্রাপথের পুরোটা ভিডিও করে রাখেন। ইতিহাসের সাক্ষী থাকার জন্য অনেকেই টিকিট কেটে ট্রেনে চাপেন।

প্রসঙ্গত, এবছরের ২ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে এই রেলব্রীজের উদ্বোধন করেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দীর্ঘ আড়াই দশক পরে শেষ পর্যন্ত এই রেলব্রীজ দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন ছোটার কথা ঘোষণার পরে স্বভাবতই এই খুশির হাওয়া জেলাবাসীর মধ্যে। এরপর নিয়মিতভাবে এই রেলব্রিজ দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হলে, উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা ত্বরান্বিত হবে এবং মুর্শিদাবাদ জেলার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে বলে মনে করছেন মানুষ।

এর আগে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি মালগাড়ি ট্রেন চালানো হলেও, ভাগীরথী নদীর উপর নির্মিত এই রেলব্রীজ দিয়ে এই প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন ছুটল ৷ আজিমগঞ্জ জংশন থেকে নশিপুর রেলব্রীজের ওপর দিয়ে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেনটি মুর্শিদাবাদ স্টেশন হয়ে ছুটল কাশিমবাজার পর্যন্ত। এদিনই আবার কৃষ্ণনগর সিটি স্টেশন থেকে দুপুর ১২ টায় ছাড়া হয় আজিমগঞ্জ প্যাসেঞ্জার ট্রেন। এই ট্রেনটিও কাশিমবাজার, মুর্শিদাবাদ স্টেশন হয়ে নশিপুর রেলব্রীজের ওপর দিয়ে আজিমগঞ্জ জংশনে পৌঁছায় দুপুর ৩ টায় ।

এদিকে উদ্বোধনের দিনও এই রেলব্রিজ চালুর কৃতিত্ব নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস, বি জে পি এবং কংগ্রেস নেতৃত্বের -এর মধ্যে চাপান-উতোর লক্ষ্য করা যায়। স্টেশনে দাঁড়িয়ে আবু তাহের খান বলেন, “আজকে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে মোট চারটি ট্রেনের সূচনা করেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। এই ট্রেনগুলি নশিপুর রেলব্রীজের ওপর দিয়ে চলাচল করবে। আমি মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের সাংসদ হিসেবে আজিমগঞ্জ জংশন স্টেশন থেকে একটি ট্রেনের সূচনা করেছি। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পরে এই রেলব্রীজ দিয়ে অবেশেষে ট্রেন চলাচল শুরু হল। আমরা খুশি। শিয়ালদহ থেকে উত্তরবঙ্গ যাওয়া-আসার আরেকটা রুট খুলে গেল। আগামী দিনে উত্তরবঙ্গের বহু ট্রেন এই রেলব্রীজের ওপর দিয়ে যাতায়াত করবে। এর ফলে মুর্শিদাবাদের মানুষ ভীষণই উপকৃত হবেন।”

স্থানীয় বিধায়ক বি জে পি-এর গৌরীশংকর ঘোষ আবার বলেন, “এই জেলার মানুষ বি জে পি’কে ভোট দিয়েছে। নরেন্দ্র মোদি রয়েছে বলেইপদ্মফুলে ভোট দিয়েছে। তারা কেন ভোট দিয়েছে? অশ্বিনী বৈষ্ণব রয়েছে বলে । নতুন নতুন ট্রেন চলবে বলে। আমরা সেদিন কথা দিয়েছিলাম, নশিপুর রেলব্রীজের ওপর দিয়ে ট্রেন চলবে। সেই কথা আমরা রাখতে পেরেছি। রেলব্রীজের ওপর দিয়ে ট্রেন ছুটছে। আজকে কৃতিত্ব নেওয়ার জন্য অনেকেই ময়দানে নেমেছে। আমি তাদেরকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি ২০২১ এর ১০ ডিসেম্বরের আগে পর্যন্ত কেউ রেলমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেনি। এই ব্রীজ চালুর জন্য আবেদন করেনি। লড়াই করেনি। জমিদাতাদের সঙ্গে বসে জমিজট মেটায়নি। এই সমস্ত কাজগুলি বি জে পি বিধায়ক, সাংসদরা করেছেন। তাই আজ ট্রেন ছুটছে।”

আবার জিয়াগঞ্জ থানা কংগ্রেস কমিটির প্রাক্তন সভাপতি সন্তোষ সিং চাওলা, শিক্ষক নেতা রতন বালা আবার বলেন, “এ আর খানের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে সেই ১৯৯৯ সাল থেকে এই রেলব্রীজ নিয়ে অধীর চৌধুরী লড়াই-আন্দোলন করছেন। রেলমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব থেকে বর্তমান রেলমন্ত্রীর কাছেও তিনি এ নিয়ে দরবার করেছেন। কেন্দ্রে যখন কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল এবং প্রণব মুখোপাধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গেও এই রেলব্রীজ চালুর ব্যপারে বার বার কথা বলেছেন। অসংখ্যবার রেলমন্ত্রককে চিঠি পাঠিয়েছেন। বহুবার রেলের আধিকারিকদের নিয়ে রেলব্রীজ পরিদর্শন করেছেন। এমনকি অধীরবাবু যখন রেল প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, তখন রেলব্রীজ সংলগ্ন রাস্তা তৈরির জন্য যে জমিজট তৈরি হয়েছিল, তার সমাধান করেছিলেন প্রত্যেক জমিদাতাকে চাকরি এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মধ্য দিয়ে। আজ যারা এই রেলব্রীজ চালু নিয়ে কৃতিত্ব দাবী করছেন, তখন তারা কোথায় ছিলেন?”