সাম্প্রতিক সময়কালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার্থীদের এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে পেশাগতভাবে যুক্ত ব্যক্তিদের জীবনশৈলী সংক্রান্ত নানান সমস্যা দেখা দিচ্ছে। শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক, আধিকারিক, শিক্ষাকর্মীরাও বর্তমান দ্রুতগতির জীবনে প্রায়শই ভুলে যায় সুস্থ জীবন-যাপন। শুধুমাত্র চিকিৎসা নির্ভর নয়, বরং তার শুরু হয় প্রতিদিনকার ছোট ছোট সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে। একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্যকর, সচেতন, ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাত্রার জন্য দৈনন্দিন সুঅভ্যাস ও তার আচরণগুলোকে পরিকল্পিতভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিকল্পনা করা উচিত। এর মাধ্যমেই পড়ুয়া থেকে শুরু করে যে কোন ব্যক্তিই শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে পারবে। এরকম সামাজিক প্রেক্ষাপটে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় শ্রীধাম মায়াপুরের ইসকনের সহযোগিতায় শুক্রবার লাইফ স্টাইল ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে আলোচনাচক্র অনুষ্ঠিত হল।
মূল উদ্যোগ গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিবিদ্যা-চর্চা কেন্দ্র ও ইসকন। সহযোগিতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকসংস্কৃতি বিভাগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, শারীরশিক্ষা বিভাগ ও জাতীয় সেবা প্রকল্প। আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করেন কলকাতা ইসকনের সহ-সভাপতি অনঙ্গমোহন দাস। ইসকনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন তীর্থংগা নিতাই দাস। প্রধান বক্তা হিসেবে আলোচ্য বিষয়ে আলোকপাত করেন কলকাতার কলকাতা ইসকনের সহ-সভাপতি অনঙ্গমোহন দাস। আলোচ্য সভায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক উদ্দ দেবাংশু রায়, কলা ও বাণিজ্য অনুসরণ সাবিত্রী নন্দ চক্রবর্তী এবং অন্যান্য বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমেশিক্ষার্থীদের অনেক ধরনের সমস্যার কথাও উঠে আসে। সেগুলিরও নিরসনের কথা অনঙ্গমোহন দাস প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যাখ্যা করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে সংস্কৃতিবিদ্যা-চর্চার কেন্দ্রের যুগ্ম অধিকর্তা ও লোকসংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক সুজয়কুমার মণ্ডল বলেন, অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আমরা এই আলোচনা চক্রের আয়োজন করেছি। জীবন শৈলী সংক্রান্ত নানান সমস্যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি। লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট বিলাসিতা নয় বরং নিজেকে সময় দেওয়া উচিত। সচেতন সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ধৈর্য ও অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনকে সুস্থ, সুন্দর ও অর্থবহ করতে পারি। ভবিষ্যতে লাগাতারভাবে শিক্ষার্থীদের উপকারের জন্য এই ধরনের বিষয়ে কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ শিবিরেরও আয়োজন করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, শারীরিকভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের সুস্থ থাকতে হবে। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে তবেই তারা যথাযথভাবে পঠন-পাঠন ও গবেষণার কাজ করতে পারবে। এই বিষয়টিকে নজর রেখেই আমরা এই ধরনের আলোচনা চক্রের আয়োজন করেছি। আলোচনা সভাটির আনুষ্ঠানিক সঞ্চালনা করেন লোকসংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. দেবলীনা দেবনাথ। আলোচনাচক্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের থেকে প্রায় ৬০০জনের বেশি পড়ুয়া অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্য থেকে লোকসংস্কৃতি বিভাগের গবেষিকা শিপ্রা ঘোষ, অমৃতা মিশ্র ও কাইনাত খান একযোগে বলে, এই আলোচনা চক্রের মাধ্যমে আমরা ভীষণভাবে উপকৃত হলাম। এ সংক্রান্ত আলোচনা শুনে যা জানতে পারলাম তা আমাদের খুব কাজে লাগবে।
ইসকনের পক্ষ থেকে তীর্থংগা নিতাই দাস জানান, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের এই কর্মপ্রয়াস খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রী ও গবেষক-গবেষিকাদের মধ্যে এ বিষয়ে আগ্রহ দেখতে পেলাম। মায়াপুরেও আমাদের এ বিষয় সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ শিবিরের ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানেও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারে। এদিন ইসকনের পক্ষ থেকে অতিথিদের শ্রীমদ্ভগবদগীতা প্রদান করা হয়।