খড়গপুর বিদ্যাসাগর শিল্প তালুকে স্টেডিয়াম তৈরির কাজ নয় বছরেও শেষ করা যায়নি। শিল্প তালুকের জমিতে ভুতুড়ে কাঠামো হয়ে এই অর্ধ সমাপ্ত স্টেডিয়াম পড়ে রয়েছে। কবে স্টেডিয়াম তৈরীর কাজ শেষ হবে, সেই বিষয়ে পূর্ত দফতরের বক্তব্য আমাদের দিক থেকে যে কাজ করার কথা ছিল আমরা তা করে দিয়েছি। কিন্তু যুব কল্যাণ দপ্তরকে বারবার বলা সত্ত্বেও আমাদের হাত থেকে এখনো স্টেডিয়াম গ্রহণ করেনি।
খড়গপুর শহরে খেলাধুলার ইতিহাস অনেকটাই রেল কেন্দ্রিক। ফুটবল, ক্রিকেট ,ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, বিলিয়ার্ডস সবকিছুই রেলের স্টেডিয়াম এবং রেলের অন্যান্য পরিকাঠামোর উপর নির্ভর করে এই রেল শহরে ডালপালা ছড়িয়েছে। রেলের বাইরে বিচ্ছিন্নভাবে খেলাধুলা হলেও তার উপযুক্ত পরিকাঠামো কখনোই তৈরি হয়নি।
ফলে খেলাধুলার আসর আয়োজন করতে হলে রেলের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া শহরবাসীর হাতে বিকল্প কোন ব্যবস্থা ছিল না। খড়গপুর শহরে ভারত এবং পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেট খেলোয়াড়দের একটি ম্যাচ হয় চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে। সেই ম্যাচের আয়োজনও রেলের স্টেডিয়ামেই করতে হয়। মহম্মদ আজহারউদ্দিন, জাহির আব্বাস, ওয়াকার ইউনুস, ভেঙ্কটপথী রাজু, আরশাদ আয়ুবের মতো খেলোয়াড়েরা রেলের স্টেডিয়ামে খেলে গিয়েছেন। রেলের এই স্টেডিয়ামে হকি খেলে ভারতীয় হকি দলের অধিনায়ক এবং চারটি অলিম্পিক পদক লাভ করেছেন লেসলি ক্লডিয়াসের মত খেলোয়াড়। আবার রেলের স্টেডিয়ামে অনুশীলন করেই প্রাক্তন রেল কর্মী মহেন্দ্র সিং ধোনি ভারতীয় ক্রিকেট দলের শুধু অধিনায়ক নয় ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম আইকন হয়ে গিয়েছেন।
প্রদীপ সরকার পুরপ্রধান হওয়ার পর একজন দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে রেলের এই পরিকাঠামোর বিকল্প হিসেবে পুরসভার অধীনে একটি স্টেডিয়াম তৈরি করার জন্য উদ্যোগ নেন। পুরপ্রধান হওয়ার পরে পরেই ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে মেদিনীপুর শহরে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আরজি জানিয়ে তাকে দিয়ে খড়গপুর শহরে স্টেডিয়াম তৈরির জন্য পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ করিয়ে নেন। প্রথমে স্টেডিয়াম তৈরির জন্য বিদ্যাসাগর শিল্প তালুকের রূপনারায়ণপুর এলাকায় জমি ঠিক হয়। পরে স্টেডিয়ামের জন্য ইন্দা লাগোয়া একটি জমি প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঠিক করে দেওয়া হয়। স্টেডিয়ামের কাজের দায়িত্ব পায় পূর্ত দপ্তর। প্রদীপ সরকার বলেন, প্রথম দফায় পাঁচ কোটি টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আরো প্রায় ২ কোটি টাকা স্টেডিয়ামের জন্য মঞ্জুর করিয়ে আনি। এখন স্টেডিয়াম তৈরি হয়ে গিয়েছে। সামান্য কিছু কাজ রয়েছে। আমরা চাইছি স্টেডিয়ামের দায়িত্ব খড়গপুর পুরসভার হাতে দেওয়া হোক। কিন্তু বর্তমান পুর প্রশাসন এই দায়িত্ব নিতে একেবারেই ইচ্ছুক নন। কোনোরকম উৎসাহও তারা দেখাচ্ছেন না ফলে স্টেডিয়াম তৈরীর পিছনে যে আবেগ কাজ করছিল সেটা হারিয়ে যেতে বসেছে।
পূর্ত বিভাগের কার্যনির্বাহী আধিকারিক বাস্তুকার অতনু মাইতি বলেন, আমাদের স্টেডিয়াম তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। টেন্ডার অনুযায়ী আমরা কাজ শেষ করে দিয়েছি। আমরা যুব কল্যাণ বিভাগকে স্টেডিয়ামের দায়িত্ব নিতে বারবার অনুরোধ করছি। কিন্তু তারা এখনো অব্দি কোনরকম উৎসাহ দেখাননি। আমরা জেলাশাসককে বিষয়টি জানিয়েছি। এখন অপেক্ষা করছি।
খড়গপুর শহরের আরেক ক্রীড়া সংগঠক অমিতেশ কুন্ডু বলেন, পুরসভার এই অর্ধ সমাপ্ত স্টেডিয়ামের অবস্থা এখন ‘ভাগের মা গঙ্গা পায় না’র মতন। কেউ দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। বর্তমান পুরপ্রধান ফান্ড নেই বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন। ফলে অর্ধ সমাপ্ত স্টেডিয়ামের গায়ে সর্বত্র অযত্নের ছাপ। বাধ্য হয়েই রেলের ঘরে মোটা অংকের টাকা জমা করে রেলের স্টেডিয়ামে কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হচ্ছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক।