পূর্ণিমা কান্দুর মৃত্যু ঘিরে ঘনাচ্ছে রহস্য

আড়াই বছর আগের কথা। পুরুলিয়ার ঝালদায় পুরবোর্ড গঠনের মুখে আততায়ীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন কংগ্রেসের পুর-প্রতিনিধি তপন কান্দু। এ বছর দুর্গাপুজোয় তপন কান্দুর স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দুর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরেও শুরু হয়েছে জোর চর্চা। কীভাবে মৃত্যু? পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে? খুন হলেও নেপথ্যে কী কারণ? ষড়যন্ত্রে কাদেরই বা হাত? লম্বা হচ্ছে প্রশ্নের তালিকা। পূর্ণিমা কান্দুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আবারও সরগরম পুরুলিয়া জেলার রাজনীতি।

তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই স্পষ্ট হচ্ছে খুনের তত্ত্ব। ইতিমধ্যেই পূর্ণিমা কান্দুর মৃত্যুর কারণ নিয়ে তপন কান্দুর ভাইপো মিঠুন কান্দু বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তাঁর কথায়, খুন করা হয়েছে পূর্ণিমা কান্দুকে। অভিযোগ, আর্থিক লেনদেনের জন্য তাঁর কাকিমাকে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপ দেওয়া হত। শেষমেশ তাঁকে খুন করা হয়। খুনের নেপথ্যে কার হাত রয়েছে তা স্পষ্ট না করলেও খুনিকে যে তিনি চেনেন তা উল্লেখ করেছেন মিঠুন কান্দু। সময় মতো সেই নাম সামনে আনবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ঝালদা থানার পুলিশ। মেডিক্যাল টিমের তত্ত্বাবধানে মৃত্যুর আসল কারণ জানতে পূর্ণিমা কান্দুর দেহের ময়নাতদন্তও করা হয়েছে। গত রবিবারই পূর্ণিমা কান্দুর বাড়িতে পৌঁছয় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার এবং পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো। পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি শুভঙ্কর সরকার দাবি করেন, তপন কান্দু হত্যা মামলার সঙ্গে পূর্ণিমা কান্দুর অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলাও যুক্ত করা হোক। একইসঙ্গে এই মামলার তদন্ত করুক সিবিআই। সর্বোপরি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান শুভঙ্কর সরকার।


প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে পুরসভা নির্বাচনের পর দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হন ঝালদা পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু। এই খুনের মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। এই মামলায় ইতিমধ্যেই অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই খবরের শিরোনামে উঠে আসে ঝালদা পৌরসভা। সরগরম হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। পরবর্তীকালে ওই ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে পুনর্নির্বাচিত হন তপন কান্দুর ভাইপো মিঠুন কান্দু। রাজনৈতিক দলবদল ও পৌর প্রধানের নির্বাচনকে ঘিরে একাধিকবার বোর্ড পরিবর্তন হতে দেখা যায় ঝালদা পৌরসভায়।

ঝালদার রাজনীতিতে পূর্ণিমা কান্দু নেহাতই এক সাধারণ রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু স্বামী তপনের কান্দুর হত্যার পর বদলাতে থাকে পরিস্থিতি। রাজনীতির এক সাধারণ কর্মী থেকে তিনি হয়ে ওঠেন এক প্রতিবাদী নারী। কখনও হাইকোর্টে তপন-হত্যার বিচার চেয়ে, আবার কখনও মহিলাদের নিয়ে ঝালদার রাজপথে প্রতিবাদ মিছিলে নামতেও দেখা গিয়েছে পূর্ণিমা। এর পর একে একে পৌরপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়া এবং পরে ইস্তফা দেওয়া সহ বিভিন্ন ভূমিকায় দেখা গিয়েছে পূর্ণিমাকে। স্বামীর হত্যার বিচারের জন্য আদালতের উপরও ভরসা রেখেছেন তিনি। তবে বিচার মেলার আগে খুন হতে হল তাঁকে। পূর্ণিমা কান্দুর মৃত্যুর নেপথ্যে এখন খুনের তত্ত্বই খাড়া করছেন পরিবারের সদস্যরা। সেই সূত্র ধরে রহস্যের জাল খুলবে? নজর সেদিকে।