মঙ্গলবার নৈহাটিতে বড়মার মন্দিরে পুজো দিয়ে নৈহাটি উন্নয়নের ডালি সাজিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেমন প্রতিশ্রুতি তেমন কাজ। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বড়মার মন্দিরের কাছে পুলিশ ফাঁড়ির উদ্বোধন হল বুধবার। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এবং এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার উদ্দেশ্যে বুধবার বিকেল থেকেই চালু হয়ে গেল এই ফাঁড়ি।
এইদিন এই ফাঁড়ির উদ্বোধন করলেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার অলোক রাজোরিয়া। এছাড়াও, এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নৈহাটির নবনির্বাচিত বিধায়ক সনৎ দে, নৈহাটি পৌরসভার পৌরপ্রধান তথা বড়মা মন্দির কমিটির সভাপতি অশোক চট্টোপাধ্যায় সহ একাধিক পুলিশকর্তা এবং মন্দির কমিটির সদস্যরা। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের তৎপরতায় বড়মার মন্দিরের তিনতলায় উদ্বোধন হল ‘বড়মা পুলিশ আউটপোস্ট’। পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, বড়মা পুলিশ আউটপোস্টের দায়িত্বে থাকবেন অফিসার ইনচার্জ এবং একজন সাব ইন্সপেক্টর। সঙ্গে মোতায়েন থাকবেন তিনজন এএসআই, আটজন কনস্টেবল ও আটজন সিভিক ভলান্টিয়ার। তবে পুলিশ কমিশনার আরও জানিয়েছেন, ‘মন্দিরে বেশি সংখ্যায় মহিলা দর্শনার্থীরা আসেন, তাই আগামীদিনে চারজন মহিলা পুলিশকর্মীও নিযুক্ত করা হবে এই ফাঁড়িতে।’
এ যাবৎ নৈহাটি থানার অধীনেই ছিল বড়মার মন্দির। তা সত্ত্বেও পৃথক ভাবে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থার মূল কারণ কী? উদ্বোধন শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘বড়মার মন্দিরে প্রতিদিন দশ থেকে কুড়ি হাজার ভক্ত পুজো দিতে আসেন। এছাড়াও অরবিন্দ রোড, ফেরিঘাট এবং স্টেশন চত্বরের মার্কেট সবসময় জমজমাট থাকে। তাই পুজো দিতে আসা ভক্তরা বিশেষ করে মহিলাদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, মন্দির কমিটির পুজোর আয়োজনে যাতে কোনও সমস্যা না হয় এবং মার্কেট এলাকায় যাতে কোন অপরাধ না হয় – এই তিন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ফাঁড়ির উদ্বোধন হল। মূলত এই বিষয়গুলিই ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকবে। তাছাড়াও বড়মা-র গহনা সহ মন্দিরের অন্যান্য প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান সামগ্রীর নিরাপত্তা প্রদান করাও আমাদের দায়িত্ব। এই চত্বরের পবিত্রতা ধরে রাখার লক্ষ্যে পরিচালিত হবে এই পুলিশ ফাঁড়ি।’ এই সঙ্গে অলোক রাজোরিয়ার আরও সংযোজন, ‘এই পুলিশ ফাঁড়ি নির্মাণের ফলে নৈহাটি থানার উপর বাড়তি চাপের বোঝা একটু হলেও কমবে। নৈহাটি থানার আইসি-র তত্ত্বাবধানেই এই পুলিশ ফাঁড়ি নিয়ন্ত্রিত হবে।’
প্রসঙ্গত, নৈহাটি রেল স্টেশনের ১ নম্বর প্লাটফর্ম থেকে স্টেশন রোড সংলগ্ন অরবিন্দ রোড গিয়ে শেষ হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর নামাঙ্কিত বড়মা ফেরিঘাটে। এই অরবিন্দ রোডের প্রায় মাঝামাঝি অবস্থিত বিখ্যাত বড়মার কালীমন্দির। গত বছর শতবর্ষে এই মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করে পাকাপাকিভাবে স্থাপন করা হয় কষ্টিপাথরের বড়মার মূর্তি। তারপর থেকে প্রতিদিনই ভক্তদের ভিড় বাড়ছে মন্দিরে। চলতি কালীপুজোয় ঘোর কৃষ্ণবর্ণে একুশ হাতের দীর্ঘদেহী বড়মার দর্শনে এবং দণ্ডি কাটার জন্য রেকর্ড ভিড় হয়েছিল। ফলে প্রতিদিন আগত অসংখ্য ভক্তদের যাতে কোন সমস্যা না হয় ও তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত থাকে, সেই জন্যই মঙ্গলে বড়মা-র মন্দিরে পুজো দিতে এসে ফাঁড়ি তৈরির ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, যার বাস্তবায়ন হলো ঘোষণার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই।