বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে একটানা কয়েক বছর কাজ করার জন্য এবার আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেলেন পূর্ব বর্ধমানের প্রবীণ সমাজকর্মী মোল্লা গোলাম আসপিয়া। বর্ধমানের সেহারাবাজারের বাসিন্দা ওই সমাজকর্মীকে সকলে হাজি কুতুবউদ্দিন নামে বেশি চেনেন। আপাদমস্তক ধার্মিক অথচ অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হাজি কুতুবউদ্দিন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সাহিত্য ও সমাজসেবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১৫টি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ও প্রাণপুরুষ। জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে আপামর জনসাধারণের সঙ্গে থেকে মানবিক কাজের জন্য তিন দেশের পুরস্কার ও সম্মাননা দেওয়া হয়। ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন কনফারেন্সে অংশ নিয়ে মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া ও জাম্বিয়া থেকে আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়ে বর্ধমান তথা বাংলা ও ভারতবর্ষকে গর্বিত করে মঙ্গলবার তিনি বাড়ি ফেরেন।
দীর্ঘ পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে হাজি কুতুবউদ্দিন মানব সেবার কাজে যুক্ত। নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে গরিব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। ফলে তাঁর নাম জেলা, রাজ্য, দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও পৌঁছে গেছে। আজীবন সমাজসেবা ও সর্বস্তরের শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার নিরলস পরিশ্রমের স্বীকৃতিস্বরূপ জাম্বিয়া তাকে সাম্মানিক ডক্টরের উপাধি প্রদান করেছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছানোর জন্য নাইজেরিয়া থেকেও তিনি সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। পাশাপাশি শান্তির বার্তা প্রচার ও অব্যাহত কাজের জন্য জাম্বিয়া তাকে ‘পিস অ্যাম্বাসেডর অ্যাওয়ার্ড ২০২৪’ প্রদান করা হয়েছে তাঁকে। মালয়েশিয়ায় তাঁকে সেরা শিক্ষানুরাগী হিসেবে ‘বেস্ট এডুকেটর অ্যাওয়ার্ড’, সমাজসেবা ও শিক্ষা আন্দোলনের জন্য ‘মালয়েশিয়া অ্যাচিভার অ্যাওয়ার্ড’, এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য ‘এডুকেশন অ্যাওয়ার্ড’-এ সম্মানিত করা হয়।
হাজি কুতুবউদ্দিন তাঁর সফরসঙ্গী শফিকুল ইসলাম, ডঃ তরুণ পাল ও হাজি আকবর আলী সর্দার সহ মালয়েশিয়ার জোহর থেকে প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরের একটি শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিশুদের দ্বারা পরিচালিত আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানের শেষে তিনি শিক্ষক, শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীদের সামনে বক্তব্য রাখেন ।তিনি বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি বাবা-মা, শিক্ষক, সমাজ এবং দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা ও স্রষ্টার নির্দেশ মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’ এক সাক্ষাৎকারে হাজি কুতুব উদ্দিন জানান, ‘দুনিয়ার পুরস্কার সাময়িক সুখের স্মৃতি। আসল পুরস্কার হলো আল্লা বা ভগবানের কাছ থেকে পাওয়া। আমার এই পুরস্কারের আসল মালিক তারা, যারা আমাকে আজ এই জায়গায় আসতে সাহায্য করেছেন। আমার গ্রামের মানুষ, মাদ্রাসা, মিশন, ট্রাস্টি আমাকে সহযোগিতা করেছে।’