আসছে আলোর উৎসব দীপাবলি। আর একই সঙ্গে মা কালীর আরাধনা নিয়েও গ্রাম শহরে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তবে বর্ধমানের খণ্ডঘোষ ব্লকের সুলতানপুরে মা কালীকে বির্সজনের তোড়জোড় শুরু হলো। তা-ও আবার ১২ টা বছর পার করে। অভিনব এই কালী আরাধনা শুধুমাত্র জেলা বা রাজ্যে নয়, ভূ-ভারতে আর কোথাও হয়না। সব কিছুর মধ্যেই আছে অভিনবত্ব। মাকালী এখানে একা পুজিত নন, দুর্গার চার ছেলে মেয়ে লক্ষ্ণী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ এবং জয়া বিজয়া কে একসঙ্গে দেখা যায়। প্রতিমা ১২ বছরে একবার তৈরি হয়, আবার ১২ টা বছর পার করে বিসর্জন হয়। ১২ ফুটের কালী প্রতিমা ১২ বছর পার করে এবছর বিসর্জন হবে, বিসর্জনের মহাআয়োজন হবে। রাজ্যের প্রায় লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম ঘটতে চলেছে এখানে। তাই উদ্যোক্তারা দিনরাত এক করে আয়োজনের কাজে হাত লাগিয়েছেন। সবচেয়ে বড়ো কথা এই পুজোয় হিন্দু মুসলিম জাতপাত সব বিভেদ ভুলে সকলেই অংশ নেন।
সুলতানপুর পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ ব্লকের বর্ধিষ্ণু গ্রাম। প্রায় ৬০০ বছরেরও আগে এই গ্রামে এই অভিনব কালী আরাধনা শুরু হয়েছিল। প্রথমে গ্রামের কামার সম্প্রদায়ের মানুষ এই পুজোর প্রচলন করেন। পরবর্তীকালে তারা এই পুজোর দায়িত্ব তুলে দেন গ্রামের মণ্ডল পরিবারকে। তারপর থেকে এই বিশাল আয়োজন করে আসছেন তাঁরা। এর জন্য গ্রামের লোকজনকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে গ্রামের প্রতিটি পরিবারের লোকজন এই পুজোয় সামিল হয়ে সব রকমের সহযোগিতা করেন। বর্তমানে মন্দিরে ১২ ফুটের কালী প্রতিমার নিয়মিত পুজো হয়। এ বছর নিয়ম মেনে বিসর্জনের পালা। আবার নতুন করে প্রতিমা গড়ে পুজো চলবে। আবার ১২ টা বছর পার করে হবে নিরঞ্জনের পালা।
এভাবে চলে আসছে বংশপরম্পরায় পুজোর আয়োজন। পুজো কমিটির সদস্য বিশ্বনাথ মণ্ডল, কার্তিক দত্ত, অসিত মন্ডল, শান্তিময় মণ্ডলরা জানান এই পুজোর নানা আচার অনুষ্ঠানের কথা। জানা গেছে এবারও পুরনো রীতি রেওয়াজ মেনে মন্দির সংলগ্ন কালীমাতার পুকুরে প্রতিমার বিসর্জন হবে। হাজার হাজার ভক্তের অংশগ্রহণে হবে অভিনব বির্সজন। এত বড়ো বিশাল প্রতিমা পুকুরে নিয়ে যাওয়া হবে না। একটু একটু করে ভেঙ্গে পুকুরের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হবে। প্রথমে পারিবারিক নিয়ম মেনে মণ্ডলদের এক প্রতিমার কড়ে আঙুল ভেঙ্গে অঙ্গহানি ঘটান। তারপর অসংখ্য ভক্তের দল ১২ ফুট উচ্চতার প্রতিমা টুকরো টুকরো ভাসান করে দেন। বিসর্জন এর আগে কয়েক ঘণ্টা ধরে গ্রাম জুড়ে চলে বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা।
আসলে এখানকার মন্দিরে কালী আরাধনা হলেও প্রতিবছর শারদ উৎসবের সময় নবমী ও দশমীর দিনে এই কালীকেই মা দুর্গা হিসাবে পুজো করার রেওয়াজ চলে আসছে। এই কালী প্রতিমাকে ঘিরে আরও অনেক কিছু জানা গেছে। কালীপুজোর সময় ২০০ কেজি চালের নৈবেদ্য সাজানো হয়। চালের সঙ্গে দেওয়া হয় ১২ টি পাঁঠার নৈবেদ্য। এখানে মন্দিরের সামনে নাকি পুজোর জন্য মানতের পাঁঠা ছেড়ে দিয়ে যান মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন। এই মন্দির থেকে চোখের ওষুধ দেওয়া হয়। সেই ওষুধ নিতে সব সম্প্রদায়ের মানুষ ভিড় করেন। তাঁরাই মানত করে পাঁঠা দিয়ে যান। ফলে সম্প্রীতির এক মিলন ক্ষেত্র হয়ে উঠে বলে দাবি সকলের। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা তো বটেই ভিন রাজ্য থেকেও অগনিত মানুষজন হাজির হবেন বিসর্জনের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে দাবি গ্রামবাসীদের।