রামায়ণে আমরা কৈকেয়ীর চরিত্রকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে থাকি। কিন্ত তাঁর চরিত্রের কিছু ইতিবাচক দিকও আছে। কথিত আছে যে রাণী কৈকেয়ী তাঁর নিজের পুত্র ভরতের চেয়েও কৌশল্যার পুত্র রামকে বেশি ভালোবাসতেন। লোক মতে মনে করা হয় যে রাণী কৈকেয়ী প্রাণী ও পাখিদের ভাষা বোঝার ঐশ্বরিক আশীর্বাদ পেয়েছিলেন।
যখন অযোধ্যাবাসী পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্রের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, তখন কৈকেয়ী রাজপ্রাসাদের বাগানে ভ্রমণ করছিলেন। হঠাৎ তিনি দুটি পাখির মধ্যে কথোপকথন শুনতে পেলেন, যে পরের দিন অযোধ্যার নতুন রাজা হবে, সে সিংহাসনে বসার সঙ্গে সঙ্গেই মারা যাবেন। এই কথা শুনে তিনি বিচলিত হয়ে পড়লেন এবং ভগবানের কাছে তাঁকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য প্রার্থনা করলেন তাঁর প্রিয় রামচন্দ্রের জীবন বাঁচাতে।
অবশেষে দেবী সরস্বতী মন্থরাকে ধূর্ত ধারণা দেয় যে, কৈকেয়ীর উচিত দশরথকে তাঁর দুটো ইচ্ছা মঞ্জুর করার জন্য এটিই সঠিক সময় বলে। প্রথমটি হল তাঁর পুত্র ভরতকে অযোধ্যার সিংহাসনে বসানো এবং দ্বিতীয়টি রামচন্দ্রকে চোদ্দ বছরের জন্য বনবাসে পাঠানো। এরপর রাম বনবাসে গেলে ভরত সিংহাসনে বসতে অস্বীকার করেন। রামকে ফিরিয়ে আনতে তিনি বনে যান এবং রামের পাদুকা এনে অযোধ্যার সিংহাসনে বসিয়ে শাসন করেন। ফলস্বরূপ রাণী কৈকেয়ী রামচন্দ্র এবং ভরতের জীবন রক্ষা করেছিলেন। এই ছিল রাণী কৈকেয়ীর মহত্ব ও নম্রতা। যে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা সত্যিই কঠিন কাজ।
এই ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় সদাশিব দাসের লেখা রামায়ণের অযোধ্যা কান্ড, আলেখ চন্দ্র দাসের রামচরিত মানসে, বলরাম দাসের ডান্ডি রামায়ণের রামলীলায়। ওড়িশি মহান কবি উপেন্দ্র ভঞ্জ এই পর্বটি ব্যবহার করেছেন। যা নিয়ে সম্প্রতি কলকাতার আইসিসিআর – এ হরাইজন পর্বে অনুষ্ঠিত হল শতাব্দী নৃত্যায়ণের ওড়িশি নৃত্যনাট্য মহিয়সী কৈকেয়ী। যার নৃত্য কোরিওগ্ৰাফি করেছেন গুরু শ্রী দুর্গাচরণ রণবীর। গ্রুপ পরিচালনা করেছেন ওড়িশি নৃত্যশিল্পী শতাব্দী মল্লিক ও মনোজ কুমার প্রধান। সঙ্গীত রচনা করেছেন গুরু শ্রী সুকান্ত কুমার কুণ্ডু। নৃত্য অভিনয়ে ছিলেন শতাব্দী মল্লিক, মনোজ কুমার প্রধান, সুমিতা পাল, দেবাঞ্জনা দত্ত, পল্লবী দাস, দেবস্মিতা কর, সম্প্রীতি পাল ও কৃত্তিকা মিত্র।