কণ্ঠশিল্পী ‘‘সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিষ্ঠান ‘সঙ্গীত অমৃতম্’-এর ত্রয়োদশ সঙ্গীত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল ‘রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচার’-এর বিবেকানন্দ প্রেক্ষাগৃহে। (সঙ্গীতার পিতা, সুবিখ্যাত তবলা শিল্পী শঙ্খ চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিতেই এই অনুষ্ঠান)। সমগ্র অনুষ্ঠানটি বিভক্ত চার ভাগে— বোধন, আরতি, অর্পণ, উদ্যাপন।
বোধন পর্বের উদ্বোধন বিশিষ্ট সেতারশিল্পী মিতা নাগ ও সানাইবাদক হাসান হায়দার খানের যুগলবন্দীতে। মধ্যলয় ও দ্রুত ত্রিতাল বন্দীশ, ঝালা, ভৈরবী বন্দীশ রূপময় হয়ে ওঠে দুই শিল্পীর গায়কী অঙ্গে স্বরবিন্যাস, বোল-বাণী ও রাগচরিত্র অনুযায়ী তানকারির সৌন্দর্যে। মিতা স্ট্রোকের মিষ্টত্বে নিংড়ে আনেন রাগের উদাসী মাধুর্য আর হাসান দেখালেন মীড়ের সুন্দর কাজ ও শব্দনিয়ন্ত্রণের নৈপুণ্য। সন্দীপ ব্যানার্জীর দক্ষ তবলাবাদন ও সোমনাথ রায়ের ঘটমে পারদর্শিতা অনুষ্ঠানটিকে বর্ণময় করে তোলে। মিতার কাছে পাওয়া গেল এক অন্য স্বাদের ঝালা। শেষ ভৈরবী বন্দীশে প্রকাশিত লালিত্য। ‘আরতি’ পর্বে আশিস সেনগুপ্তর যথার্থ তবলাবাদনের সঙ্গে সরোদবাদক সিরাজ আলি খানের পরিবেশন ভীমপলশ্রী (আলাপ, জোড়, ঝালা), বিলম্বিত, দ্রুত ত্রিতাল এবং শেষে মিশ্র কাফিতে দুটি বন্দীশ।
নিজস্ব পরিসীমার মধ্যে শিল্পীর পরিবেশনে বোল-বাণীতে প্রচেষ্টা ছিল রাগরূপ প্রকাশের। ‘অর্পণ’ অংশে উস্তাদ সাবির খানের উৎকৃষ্ট তবলা সহযোগিতায় সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবেশন পঞ্চম ও কোমল ঋষভ বর্জিত মালিনী-বসন্ত যেটির সৃষ্টি রাগ মালতী ও বসন্তের মিশ্রণে। শুদ্ধ ধৈবতের এক কৌশলময় স্পর্শে রাগের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। বিলম্বিত ও দ্রুত ত্রিতালে সরগম, গমক তান ও তানকারীতে রাগটির যথার্থ রূপ প্রকাশের সুপ্রচেষ্টা ছিল শিল্পীর। দেবাশিস অধিকারীর হারমোনিয়ম সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য। অন্তিম পর্ব ‘উদ্যাপন’-এর শিল্পী বিক্রম ঘোষ। তিনি একক তবলাবাদন শুরু করেন পিতা শঙ্কর ঘোষের সৃষ্ট তেরো মাত্রার বোল, ‘বীর বিক্রম’ দিয়ে। পেশকার, বোল-টুকড়ার বৈচিত্র্য উপভোগ করেছেন শ্রোতারা। গুরু জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ ও শঙ্কর ঘোষের চমৎকার কমপোজিশনে শেষ হয় অনুষ্ঠান। হারমোনিয়মে সুসহযোগিতা করেছেন সনাতন গোস্বামী। সমগ্র অনুষ্ঠানটিতে ভাষ্য পরিচালনায় ছিলেন বিপ্লব ও ঋতুপর্ণা গাঙ্গুলি।