নিজস্ব প্রতিনিধি: কন্নড় ভাষার প্রখ্যাত কবি ও মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক কমলা হাম্পানা গত ২২ জুন ২০২৪, শনিবার বেঙ্গালুরু শহরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
ভারতের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক দম্পতিদের অন্যতম হাম্পানা দম্পতি নিজেরা জৈন ধর্মাবলম্বী হলেও দেশে- বিদেশে প্রবাদপ্রতিম জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তাঁদের আজীবন ধর্মনিরপেক্ষতা, ভারতের একতা ও অখণ্ডতা এবং মানবিকতার সপক্ষে কলম ধরার জন্য। আধুনিক কন্নড় সাহিত্যের অন্যতম প্রধান লেখক এবং মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈনবিদ্যা ও প্রাকৃতের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. হাম্পাসান্দ্রা নাগারাজইয়ার স্ত্রী ড. কমলা হাম্পানাও এই সময়ে কন্নড় সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি এবং জৈনবিদ্যা ও প্রাকৃতের ইমেরিটাস অধ্যাপক।
কবিতা, কথাসাহিত্য, সাহিত্য সমালোচনা এবং জীবনীর মতো সাহিত্যের বিভিন্ন ধারায় আশিটিরও বেশি গ্রন্থের লেখক তিনি। তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলি কর্ণাটক সাহিত্য আকাদেমি-সহ বহু পুরস্কারে ভূষিত। কর্ণাটকে নারী ও দলিতদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনে তাঁর কিছু কবিতার লাইন স্লোগান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া পাঠ্য সমালোচনা, জৈনবিদ্যা এবং সংস্কৃতি অধ্যয়নের শাখায় কয়েক দশক ধরে কাজ করেছেন। তাঁর বিদ্যায়তনিক নাম সি.আর. কমলাম্মা। তিনি বেঙ্গালুরু (গ্রামীণ) জেলার দেবনাহল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কন্নড় ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর(১৯৫৮) এর পর পিএইচ.ডি. করেন। কয়েকটি সরকারি কলেজে শিক্ষকতার পর তিনি দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক (১৯৫৯ – ১৯৯৬) দ্য গভর্নমেন্ট ফার্স্ট গ্রেড কলেজ, বিজয়নগর, ব্যাঙ্গালোরের অধ্যক্ষ ছিলেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈনবিদ্যা ও প্রাকৃত স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক এবং চেয়ারপার্সন ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে কর্ণাটকে নারী এবং দলিতদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
এক চিকিৎসক পুত্র ও দুই কবি কন্যার রত্নগর্ভা জননী কমলা হাম্পানার সঙ্গে কলকাতার সাহিত্যিক ও সাহিত্য অকাদেমি অনুবাদ পুরস্কারপ্রাপ্ত শ্যামল ভট্টাচার্যের সূত্রে কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠে হাম্পানা দম্পতির। তাঁরা যেমন কলকাতায় এসেছেন, তেমনই তাঁদের আমন্ত্রণে হাম্পানার ৮৩ তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বেঙ্গালুরু গিয়েছন শ্যামল ভট্টাচার্য ও কবি সৈয়দ হাসমত জালাল। বিশ্বের দশটি দেশ থেকে লেখক ও গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন সেই সভায়।
মাতৃসুলভ স্নেহে তিনি তরুণ লেখক-গবেষকদের আপন করে নিতেন। বিশ্বের নানা প্রান্তে রয়েছেন তাঁর এরকম সন্তানপ্রতিম আপনজনেরা। হাম্পানা দম্পতির কাজ নিয়ে দেশ তথা বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বিদ্যায়তনিক গবেষণা হয়েছে। তাঁদের নিয়ে তথ্যচিত্র হয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে সাহিত্য ও শিক্ষা মহলে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া।
একই বয়সী তাঁর স্বামী প্রখ্যাত কবি-দার্শনিক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক হাম্পানা নাগারাজইয়া অনেকটা একা হয়ে গেলেন এরকম কৃতী স্ত্রীর মৃত্যুতে । কমলা হাম্পানার প্রয়াণে গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া।
উল্লেখ্য, কমলা হাম্পানা তাঁর চোখ ও দেহ দান করে গিয়েছিলেন বেঙ্গালুরুর রামাইয়া মেডিক্যাল কলেজে এবং ইতিমধ্যেই দু’জন দৃষ্টিহীন মানুষ তাঁর চোখের সাহায্যে দৃষ্টি ফিরে পেয়েছেন।