সৈয়দ হাসমত জালাল: গত আশির দশকে ‘বহুরূপী’ নাট্যগোষ্ঠীর ‘মৃচ্ছকটিক’ নাটকে বসন্তসেনার চরিত্রে আভেরী দত্তের অভিনয় হাজারো নাট্যানুরাগীর মনে গভীর নাড়া দিয়েছিল৷ এছাড়া ‘বহুরূপী’র ‘ধর্মাধর্ম’ নাটকেও দ্রৌপদী চরিত্রে তাঁর অভিনয় মনে থেকে যাবে৷
সেসময়টা কলকাতা দূরদর্শনের সাদা-কালোর যুগ৷ তখনও আভেরীকে দেখা যেত দূরদর্শনের পর্দায় সংবাদ পড়তে অথবা নানান অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে৷ সবমিলিয়ে বাঙালি সংস্কৃতির জগতে খুব জনপ্রিয় মুখ হয়ে উঠেছিলেন আভেরী৷ এছাড়া আকাশবাণী কলকাতার ঘোষিকা ছিলেন এবং অভিনয় করতেন বেতার নাটকে৷
পরে বিবাহসূত্রে হাটখোলা জমিদারবাডি়র দত্ত বংশের এই কন্যা আভেরী চৌরে হয়ে দিল্লির বাসিন্দা হয়ে যান৷ সেখানেও অভিনয়ে ছেদ পডে়নি৷ ফয়জল আলকাজি, হাবীব তানবীর, অমল আল্লানা প্রমুখ প্রখ্যাত পরিচালকদের পরিচালনায় অভিনয় করেছেন মঞ্চনাটকে৷ তিন দশকে তিনি প্রায় পঞ্চাশটি নাটকে অভিনয় করেছেন৷
বাংলা টেলিভিশন ধারাবাহিক ও চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি৷ ১৯৮৭ সালে রাজা মিত্র পরিচালিত জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘একটি জীবন’ ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন তিনি৷ এই ছবিতে মূল চরিত্রে ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়৷
আভেরীকে আমিও দেখেছিলাম বসন্তসেনার চরিত্রে৷ তবে তখন তাঁর সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ হয়নি৷ সে সুযোগ ঘটেছিল দিল্লিতে প্রায় একযুগ আগে৷ তারপর বহুবারই দেখা হয়েছে৷
দিল্লির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে থেকেছি একসঙ্গে৷ একবার আমার একটি কবিতা আভেরী আবৃত্তি করেছিলেন৷ আমাদের ছিল পারস্পারিক শ্রদ্ধা ও আন্তরিক বন্ধুত্বের সম্পর্ক৷ এই তো সেদিনও দেখা হয়েছিল দিল্লির বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানে৷
অসুস্থতার কথা সেভাবে কখনও বলেননি আভেরী৷ অসুখে আক্রান্ত হয়েছিল তাঁর ফুসফুস, জানতাম৷ তবে এত দ্রুত চলে যাবেন ভাবিনি৷ ভাবেননি তাঁর দিল্লির অজস্র প্রিয়জনেরাও৷
আমরা পরস্পরকে ‘তুমি’ সম্বোধনে কথা বলতাম৷ তাই সোমবার, পয়লা এপ্রিল রাতে আভেরীর প্রয়াণসংবাদ পেয়ে প্রথমেই মনে হলো, এ কেমন এপ্রিল ফুল করে গেলে, আভেরী! বাংলার তাঁতের শাডি়, অক্সিডাইজড গয়না আর কপালের বড় লাল টিপে তৈরি তার নিজস্ব ফ্যাশন স্টেটমেন্ট নিয়েই চলে গেল আভেরী৷