• facebook
  • twitter
Tuesday, 12 November, 2024

ধাত্রীগ্রামের ৩০০ বছরের জগদ্ধাত্রীর বাহন নরসিংহ, পুজো দু’দিনের

পুজো দু’দিন ধরে চললেও মেলা চলে সাতদিন ধরে। নবমীর আগের দিন গ্রামের মহিলারা দেবীবরণে শামিল হন। সিঁদুর খেলা চলে। আশেপাশের গ্রাম সমুদ্রগড়, কালনা সহ প্রায় সব কটি গ্রামের কয়েক হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে।

ধাত্রীগ্রামের ৩০০ বছরের জগদ্ধাত্রী। নিজস্ব চিত্র

পূর্ব বর্ধমানের কালনার ধাত্রীগ্রামে ৩০০ বছরের প্রাচীন জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রস্তুতি তুঙ্গে। শনি ও রবিবার পুজো হয় নবমী, দশমীর। নবমী পুজোর দিনই সপ্তমী, অষ্টমী পুজোর রীতি রয়েছে। প্রায় তিনশো বছর ধরে চলে আসা এই পুজোর প্রতিমা কিন্তু একটু অন্য রকম। দেবী এখানে সিংহবাহিনী নন, জগদ্ধাত্রীর বাহন এখানে নরসিংহ। আবার স্থানীয়দের একাংশের অনুমান, এই জগদ্ধাত্রী মাতার নাম অনুসারেই এলাকার নাম হয়েছে ধাত্রীগ্রাম। ধাত্রীগ্রাম এলাকাটি বহু প্রাচীন ভাগীরথী নদী কেন্দ্রিক জনপদ। প্রাচীন কিছু দেবীদেবীর মন্দির তার সাক্ষ্য বহন করে।

প্রায় ৩০০ বছর আগে চন্দ্রপতি গোষ্ঠী নদীয়া জেলার ব্রহ্মশাসন থেকে এসে ধাত্রীগ্রামে বসবাস শুরু করেছিলেন। এই চন্দ্রপতি গোষ্ঠীর পণ্ডিত রামচন্দ্র তর্ক সিদ্ধান্ত ছিলেন অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী। ধাত্রীগ্রামে তিনি বেশ কয়েকটি সংস্কৃত শিক্ষার টোল গড়ে শিক্ষাদান শুরু করেন। বহু দূর থেকে ছাত্ররা সংস্কৃত শিক্ষায় টোলে আসতেন। নদিয়ার নবদ্বীপ থেকেও পণ্ডিতরা আসতেন। রামচন্দ্র তর্কসিদ্ধান্তের এক বংশধর স্বপ্নাদেশে জগদ্ধাত্রী মাতার পুজো শুরু করেন বলে দাবি সকলের। তবে, অন্যান্য জগদ্ধাত্রী যেমন সিংহবাহনী, এখানে দেবী নরসিংহ বাহনের উপর থাকেন। পরে পারিবারিক জগদ্ধাত্রী পুজো সর্বজনীন রূপ নেয়। পুজোয় অতীত রীতি মেনে ছাগ বলি প্রথা রয়েছে। এখন ধাত্রীগ্রাম পঞ্চায়েতের অদূরে দেবীর স্থায়ী আটচালা তৈরি হয়েছে।

পুজো দু’দিন ধরে চললেও মেলা চলে সাতদিন ধরে। নবমীর আগের দিন গ্রামের মহিলারা দেবীবরণে শামিল হন। সিঁদুর খেলা চলে। আশেপাশের গ্রাম সমুদ্রগড়, কালনা সহ প্রায় সব কটি গ্রামের কয়েক হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে। পুজো কমিটির সম্পাদক মঙ্গল দাস বলেন, ধাত্রীগ্রামের বাসিন্দারা এই পুজোর জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন। পুজো উপলক্ষ্যে মেলার পাশাপাশি আলোর রোশনাইয়ে সাজানো হয়েছে এলাকা ও রাস্তা। মনস্কামনা পূরণে প্রতি বছর শত শত ভক্ত নাচ পুকুরে স্নান সেরে দণ্ডি কেটে মায়ের পুজো দেন। ধুনো পোড়ানো হয়। ভোর থেকে পুজো দিতে লম্বা লাইন পড়ে। এবার পুজোয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে থাকছে প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে যাত্রা। এলাকার ইতিহাস গবেষক রাজীব কুণ্ডু বলেন, সেন যুগে এই এলাকার নাম ছিল ধার্য গ্রাম। পরে ধাঁই-গ্রাম নামেই বহু পুঁথিতে উল্লেখ আছে। তবে, পরবর্তীতে প্রাচীন জগদ্ধাত্রী থেকেই এলাকার নামের পরিবর্তন হয়ে ধাত্রীগ্রাম হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।