• facebook
  • twitter
Monday, 13 January, 2025

বাঁকুড়ার মাঘ মাসের মেলা

আর কয়েকদিন বাদে মাঘ মাস শুরু। হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্র মতে পয়লা মাঘ থেকে সূর্যের উত্তরায়ণ শুরু হয়। উত্তরায়ণ শুরু হলে শুভকর্ম শুরু করতে হয়। এসব কারণে মাঘ মাস খুব পুণ্যের মাস। বাঁকুড়া জেলাতে মাঘ মাসে অসংখ্য মেলা হয়। এবারের পর্বে কিছু জনপ্রিয় মাঘমেলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন সুখেন্দু হীরা

ফাইল চিত্র

‘মকর’ হল পৌরাণিক সামুদ্রিক প্রাণী। পৌরাণিক বর্ণনায় মুখটা লম্বা সরু, কুমীর বা হাতির শুঁড়ের মতো, দেহ ও লেজ মাছের মতো। মকর গঙ্গাদেবীর বাহন, কামদেবের ধ্বজচিহ্ন এবং রাশিচক্রের দশম রাশি মকর। রাশি হল এক একটি তারামণ্ডল। তারামণ্ডলের তারাগুলোকে কাল্পনিক রেখা দিয়ে যুক্ত করলে এক একটা আকৃতি নেয়। আকৃতির রূপ অনুযায়ী রাশিগুলোর নাম হয়। মকর রাশি হল মকর আকৃতির তারামণ্ডল।

সূর্যের বার্ষিকগতির পথে যে তারামণ্ডলগুলি থাকে তাদের রাশি বলে। সূর্যের পরিক্রমণ পথে বারোটি রাশি আছে। বারোটি রাশি হল – মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট, সিংহ, কন্যা, তুলা বৃশ্চিক, ধনু, মকর, কুম্ভ ও মীণ। সূর্য প্রতি রাশিতে একমাস থাকে। মাঘ মাসে সূর্য মকর রাশিতে থাকে। পৌষ সংক্রান্তি অর্থাৎ পৌষ মাসের শেষ দিনে সূর্য মকর রাশিতে প্রবেশ করে। তাই পৌষ সংক্রান্তি অপর নাম মকর সংক্রান্তি। আসলে মকর রাশিতে সংক্রমণ হচ্ছে বলে ওই দিনটিকে বলা হয় মকর সংক্রান্তি। কিন্তু আমাদের বাংলায় ও অসমে মাসের শেষ দিনটিকে সংক্রান্তি বলে। তাই পৌষ মাসের শেষ দিন মানে পৌষ সংক্রান্তি।

হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্র মতে ঐদিন থেকে সূর্যের উত্তরায়ণ শুরু হয়। বাস্তবে তার আগেই অর্থাৎ ২১ ডিসেম্বর সূর্যের উত্তরায়ণ গতি শুরু হয়। আর বাংলা ক্যালেন্ডার-এ পৌষ সংক্রান্তি বা মকরসংক্রান্তি হয় ১৪/১৫ জানুয়ারি। শাস্ত্র মতে দক্ষিণায়ণ কালে কোনও শুভকর্ম করতে নেই‌। মকর সংক্রান্তির পর উত্তরায়ণ হলে শুভকর্ম শুরু করতে হবে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ভীম শরশয্যা গ্রহণ করলে, তিনি দক্ষিণায়ন পর্যন্ত মৃত্যুর অপেক্ষা করেছিলেন। তাঁর ছিল ইচ্ছামৃত্য। মকর সংক্রান্তির পর উত্তরায়ণ শুরু হলে তিনি নশ্বর দেহ ত্যাগ করেন। বোঝা যাচ্ছে, মাঘমাস খুব পুণ্যের মাস।

বিশেষজ্ঞরা বলেন আগে মাঘ মাস থেকে বছর শুরু হ’ত। তাই বছরের প্রথম দিন আপামর মানুষ তাদের আরাধ্য দেবতার পূজা করত। এজন্য গ্রাম বাংলায় পয়লা মাঘে সবচেয়ে বেশি লৌকিক দেবতার পূজা হয়। শুধু পয়লা মাঘ নয়, গোটা মাঘ জুড়ে কোনও না দিন লৌকিক দেবতার পূজা হয়। পূজাতে যদি অনেক লোক অংশগ্রহণ করে তা হয়ে ওঠে উৎসব। অনেক উৎসব ঘিরে আবার বসে যায় মেলা।
আমাদের গ্রাম বাংলায় দেখা যায় মাঘ মাসে বেশি মেলা হতে। মাঘ মাসের আগেই নতুন ফসল বাঙালির ঘরে ঢুকে যায়। কৃষিজ ফসল বিক্রি করে বাঙালির হাতে চলে আসে কিছু অর্থ। মনে আনন্দ হাতে পয়সা। তাই মাঘ মাসে তা দিয়ে বাংলার মানুষ আমোদ-প্রমোদ করার বিলাসিতা দেখাতে পারে।

বাঁকুড়া জেলাতে মাঘ মাসে অসংখ্য মেলা হয়। বিভিন্ন পর্বে সেই মেলা আলোচনা করা হয়েছে। যেমন পয়লা মাঘের মেলা, নাগরদোলা মেলা, টুসু মেলা, সিনিপূজার মেলা ইত্যাদি। এবারের পর্বে আরও কিছু মাঘমাসে অনুষ্ঠিত জনপ্রিয় মেলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হল।

ধানশিমলা গ্রামের ব্যাঘ্ররায়ের মেলা: ধানশিমলা গ্রাম পঞ্চায়েত, সোনামুখী থানা
বাঁকুড়া মশাগ্রাম রেলপথে সোনামুখী থানার অধীনে ধানশিমলা একটা স্টেশন। আবার বাঁকুড়া-বর্ধমান রাজ্য সড়ক এই স্টেশনের কাছে রেলপথকে অতিক্রম করেছে। ষ্টেশনের কাছে ধানশিমলা বিদ্যাভবন স্কুলের পাশে ফাঁকা মাঠ। মাঠের পাশে জঙ্গলে আছে ব্যাঘ্ররায়ের থান।
শোনা যায় এতদ্ অঞ্চল একসময় ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা। জঙ্গলে ছিল বাঘের ভয়। বাঘের ভয়কে জয় করতে এলাকার লোকজন শুরু করেছিল শ্রীশ্রী বাবা ব্যাঘ্ররায়ের পূজা। বাবা ব্যাঘ্ররায়ের পূজার বাৎসরিক দিন পয়লা মাঘ। পূজাতে দুটো শুকর বলি হয়। খিচুড়ি প্রসাদ দেওয়া হয়। কিন্তু পূজার দিন মেলা বসে না। এই পূজার আয়োজন করে স্থানীয় বাউড়ি সম্প্রদায়ের লোকজন।

ব্যাঘ্ররায়ের মেলা বসে মাঘের শেষের দিকে। ২২শে মাঘ শুরু হয়ে চলে মাঘসংক্রান্তি পর্যন্ত। মোটামুটি ৮ দিনের মেলা। মাঘের প্রথম দিকে অন্যান্য জায়গায় মেলা বসে বলে এলাকার লোকজন মাঘের শেষ দিক বেছে নিয়েছেন। মেলার আয়োজন করে তিনটি ক্লাব মিলে। ক্লাবগুলোর নাম হল – চলন্তিকা ক্লাব, জিইউসি ক্লাব ও রেনবো ক্লাব। তিনটি ক্লাব মিলে ‘ত্রয়ী ক্লাব’ নাম দিয়ে মেলার আয়োজন করে। মেলা শুরু হয় সংকীর্তন দিয়ে। আর মেলা শেষদিন হয় কাওয়ালী। মেলাতে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায় লোকেরা অংশগ্রহণ করে এবং আনন্দ উপভোগ করে, তা এই অনুষ্ঠানসূচী দেখলে বোঝা যায়। মেলায় অন্যান্য দিন নানা অনুষ্ঠান থাকে, যেমন— যাত্রা, অর্কেস্ট্রা, নৃত্য ইত্যাদি।
মেলাতে আশেপাশে গ্রাম থেকে, যেমন – রাজদহ, রানিবাঁধ, জুনসরা, বীরসিংহ, বেঁশে, কাশীপুর, তিলডাঙ্গা, তেঁতুলমুড়ি ইত্যাদি গ্রাম থেকে লোকজন আসে; আর ধানশিমলাতো আছেই। এর মধ্যে রাজদহ, রানিবাঁধ মুসলিম অধ্যুষিত। কাশীপুর তেঁতুলমুড়ি হিন্দু প্রধান।
মাঠের চারধারে সারিবদ্ধভাবে দোকানদানি বসে। সন্ধ্যার পর মাঠ আলোয় ঝলমল করে ওঠে। দোকানের মধ্যে প্রাধান্য থাকে মনিহারি, জিলাপি, ঘুগনি, ফুচকা ইত্যাদি। মেলায় নাগরদোলাও আসে। মেলায় মাটির মূর্তি দিয়ে নানা পৌরাণিক ও সামাজিক মডেল তৈরি করা হয়। বাঁকুড়া জেলাতে যা মাটির ছবি বলে পরিচিত।

মেলা উপলক্ষে এলাকার লোকের বাড়িতে আত্মীয় কুটুম আসে। ফলে মেলা শেষ হয়ে গেলে এলাকার লোকজনের মন খারাপ হয়ে যায়। আবার পরের বছরের মেলার জন্য অপেক্ষা করে। এবছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা থাকার জন্য ২রা মার্চ থেকে মেলা শুরু হচ্ছে।

হাতিবাড়ি গ্রামের বলদাবুড়ি মেলা: দুবরাজপুর গ্রাম পঞ্চায়েত, সিমলাপাল থানা
সিমলাপাল থানার বিক্রমপুর গ্রাম থেকে দুবরাজপুর গ্রাম যেতে হাতিবাড়ি গ্রামের মোড় ছাড়িয়ে সামান্য এগোলে রাস্তার পাশে ঝোপঝাড়ের মধ্যে বলদাবুড়ির থান। সিমেন্টের বেদির ওপর পোড়ামাটির হাতি, ঘোড়া। বলদাবুড়ির বার্ষিক পূজা ৩রা মাঘ ও ১০ই মাঘ। আগে শুধু তেসরা মাঘ পূজা হ’ত। এক বছর ৩রা মাঘের দিন প্রবল বৃষ্টি হয়েছিল। সেবার দশই মাঘ পূজা হয়। পরের বছর থেকে দু’দিন পূজা শুরু হয়। পূজাতে মোরগ বলি, পাঠা বলি হয়। পুজোর পর মেলা বসে, মোটামুটি পাঁচ ঘণ্টার মেলা। মেলায় প্রচুর লোকজন সমাগম হয়। দোকানপাট আসে পঞ্চাশ থেকে ষাটটা। মেলার এক দিকে বসে মোরগ লড়াইয়ের আসর। মেলায় জিলিপির দোকান এত বেশি থাকে যে, মনে হয় জিলাপির পরব। এছাড়া ঠেলাগাড়িতে নানা খাবার, মনোহারি দ্রব্য থাকে। বসে সবজির দোকান, কুল, জল আলু অর্থাৎ শাকালু।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন বলদাবুড়ির পুজোর শুরু হয়েছে ২০০ বছরেরও আগে। আজ যেখানে বলদাবুড়ি থান সেখানে ছিল গরুর বাথান। তখন এই পথে লোকজন গরু নিয়ে লক্ষীসাগর বা শুনুকপাহাড়ি হাটে যেত। যাওয়ার পথে রাত্রিকালে এখানে বিশ্রাম নিতেন ব্যাপারিরা। এভাবেই গড়ে উঠেছিল গরু বাথান। রাত্রে যারা এই বাথানে থাকতেন তাঁরা দেখতেন মাঝে মাঝে একদিন বুড়ি এসে আবির্ভূত হচ্ছেন। বুড়ি লোকজনের কাছ থেকে দোক্তা, পান ইত্যাদি চেয়ে খেতেন। আবার হঠাৎ করে অদৃশ্য হয়ে যেতেন।

একবার একটি বলদ মারা যায়। সেই সাথে সাথে বুড়িও অদৃশ্য হয়ে যায়। তখন সবার ধারণা হয়, বুড়ি রুষ্ট হওয়ার জন্য বলদটি মারা গেছে। তখন সেখানে বুড়ির উদ্দেশ্যে পূজা শুরু হয়। বলদ মারা গিয়েছিল বলে, সেই বুড়ির নাম হয়ে যায় বলদা বুড়ি। এই জায়গা ছিল সিমলাপাল রাজাদের অধীন। সিমলাপাল রাজারা বাথান থেকে কর আদায় করতেন। বলদা বুড়ির দেখভাল ও পূজা-অর্চনা করতেন স্থানীয় মাহাতোরা। এখন সর্বসাধারণ সর্বজনীনভাবে পূজা এবং মেলার আয়োজন করেন।

বালিঠ্যা গ্রামের বড়মায়ের ভোগ মেলা: লেগো গ্রাম পঞ্চায়েত, কোতুলপুর থানা
বালিঠ্যা গ্রামের বসন্তচণ্ডী মা ভীষণ জনপ্রিয় ও জাগ্রত। বালিঠ্যা সহ আশেপাশের গ্রামগুলো বড়মা ময়। বসন্তচণ্ডী মাতা এখানে বড়মা বলে খ্যাত। শুধু আশেপাশের গ্রাম নয় দূরদূরান্তের গ্রামের লোকেরা অবলা পশু, বিশেষত গরুর রোগভোগ হলে বড় মায়ের নামে মানত করে। এই বলে মানত করেন, বিপদমুক্তি হলে মায়ের ভোগ রান্নার জন্য কাঠ নিয়ে আসবেন। তাই দোসরা মাঘ ভক্তরা গরুর গাড়িতে কাঠ বোঝাই করে হাজির হন মায়ের মন্দিরে। গ্রাম বাংলা থেকে গরুর গাড়ি বিদায় নিলেও বড়মায়ের ভোগ মেলাতে অসংখ্য গরুর গাড়ি দেখা যায়। যা এই মেলার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য এবং বৈচিত্র।

যেসব যাত্রীরা দোসরা মাঘ এসে পৌঁছালেন তাঁরা বাড়ি থেকে মুড়ি নিয়ে আসে আহার্য হিসাবে। মেলা থেকে চপ কিনে সেই মুড়ি খায়। গরীবের এর থেকে ভালো খাদ্য আর কী আছে? যাত্রীরা এখানে রাত্রিবাস করে। দোসরা মাঘ রাতে হয় ভোগ রান্না। তেসরা মাঘ ভোর পাঁচটা থেকে ভোগ বিতরণ হয়। যে সব যাত্রীরা রাত্রি যাপন করেন তাদের ভোগপ্রসাদ দেওয়া হয়। আগে সমস্ত গ্রামের বাসীদের ভোগপ্রসাদ বিতরণ করা হ’ত। বর্তমানে অর্থসংকটের জন্য ভোগ প্রণামীর বিনিময়ে বিলি করা হয়। এ বছর ভোগের প্রণামী ছিল – ভাত ভোগ ৩০ টাকা, ক্ষীর ভোগ ৫০ টাকা, পোলাও ভোগ ৫০ টাকা। এখানে এই তিন ধরনের ভোগ রান্না হয়। ভোগ বিলি করা হয় মাটির ভাঁড় বা সরাতে।

এই উপলক্ষে মেলা বসে তিন দিন; ২, ৩ ও ৪ই মাঘ। চৌঠা মাঘ হয় বিচিত্রা অনুষ্ঠান বা যাত্রা। মেলাতে প্রচুর দোকানদানি আসে। অনেক বড় এলাকা জুড়ে মেলা। মন্দিরের সামনে সুন্দর ফুলের বাগান আছে। মেলায় নাগরদোলা সহ নানা খাবার, খেলনার দোকান আসে। এখানে কাঠের খেলনা গাড়ি খুব বিখ্যাত।

বসন্তচণ্ডী মাতা আগে তেঁতুল গাছের কোটরে বাস করতেন। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ঝড়ে গাছটি হেলে যায়। তখন কোনও মতে গাছের তলায় ছোট ঘর করে মাকে বসিয়ে গাছের পতন ঠেকানো হয়। পরবর্তীকালে মায়ের জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মায়ের সুদৃশ্য মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। মন্দিরের বয়স প্রায় ৪০ বছর হয়ে গেল।

বসন্তচণ্ডী মা আগে ছিলেন গ্রামের ভূস্বামী রায়দের ঠাকুর। শোনা যায় রায় বংশের সিংহরাম রায় মায়ের প্রতিষ্ঠা করেন। বড়মায়ের বংশ পরম্পরায় পূজা করে আসছেন চৌধুরী পরিবার। শুধু গরুর রোগ-ভোগ নয়, গরু বিয়োলে দুধ এনেও উৎসর্গ করা হয় মাকে।

বড়কুরপা গ্রামের হেল্ল্যাসিনির মেলা: রতনপুর গ্রাম পঞ্চায়েত, ওন্দা থানা:
বড়কুরপা গ্রামের পশ্চিম দিকে জঙ্গল ঘেঁষে মা হেল্ল্যাসিনির থান। মা হেল্ল্যাসিনি বার্ষিক পূজা দোসরা মাঘ। দুপুরে হয় পূজা, দশটির মতো ছাগ বলি হয়। খিচুড়ি ভোগ রান্না হয় এবং বিলি হয়। বিকাল তিনটে থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেলা বসে। পূজা ও মেলা দেখতে প্রচুর লোক জড়ো হয়। মেলায় প্রচুর বিভিন্ন ধরনের দোকান বসে। মেলা মাঠের পাশেই কংসাবতীর ক্যানাল, তার পাশে শালবন, আর লাল ধুলো ভরা সরু রাস্তা, মেলার পরিবেশকে আরো সুন্দর করে তোলে।

বড়কুরপা গ্রামে হেল্লাসিনিরা সাত বোন আছেন। যথাক্রমে হেল্লাসিনি, বাগরাসিনি, কুদরাসিনি, ক্ষ্যাপাসিনি, কুরপাসিনি, মাদনাসিনি, মনিসিনি। প্রথম চার জন এক থানেই থাকেন, সিমেন্টের বেদির ওপর। পয়লা মাঘ এঁরা একসাথে বাউরিদের দ্বারা পূজিত হন। পূজাতে মুরগী ও পায়রা বলি দেওয়া হয়। ১২ বছর অন্তর শূকর বলি দেওয়া হয়। দোসরা মাঘ হেল্ল্যাসিনির পূজা করেন ভূঁইয়ারা। দশটির মতো মানতের ছাগ বলি হয়।

অন্য তিনজন বোন গ্রামের সীমান্তে আলাদা আলাদা অবস্থান করেন। পয়লা মাঘ তাদের আলাদা আলাদা করে পূজো হয়। বাগরাসিনীর গায়ে সিঁদুর লাগানো যায় না। কুদরাসিনি পূজায় মদ গাঁজা লাগে।

পুরুলিয়া জেলায় এরকম সাত বোনের দেবতা বা অপদেবতা দেখা যায়। গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকেন এঁরা। সন্তান কামনায় এঁদের পূজা দেওয়া হয়। প্রধানত এদেরকে সাতবৌনি বলে। দক্ষিণ ২৪ পরগনাতে এরকম লৌকিক দেবতাকে বলা হয় সাতবিবি। বাঁকুড়া জেলার সারেঙ্গা থানার ব্রাহ্মণডিহা গ্রামে সাতবৌনির থান আছে। বাকি বোনের থানগুলো আছে মেদিনীপুর জেলায়। ওন্দা থানার এই সিনি অন্ত নামের সাতবোন সাতবৌনি নামে পরিচিত নয়। তবে সন্তান কামনায় ও অন্যান্য যে কোনও মঙ্গল কামনায় লোকজন মানত করে।

তথ্য ঋণ:
১) পৌরাণিক অভিধান- সুধীরচন্দ্র সরকার সংকলিত – এম.সি. সরকার অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড
২) বিশ্বকোষ – নগেন্দ্রনাথ বসু
৩) ক্ষেত্রসমীক্ষা