আমিনুর রহমান, বর্ধমান, ১৪ মে– মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রামে মহাসমারোহে হলো যোগাদ্যা মা এর পুজো৷ আর এই পুজোয় লক্ষাধিক ভক্তদের সমাগম ঘটে৷ শুধুমাত্র পূর্ব বর্ধমানই নয়, আশপাশের বীরভূম সহ অন্যান্য জেলার মানুষজন আসেন৷ পুজো উপলক্ষে গ্রামীণ মেলাও বসে৷ কয়েক শো বছর ধরে এই দেবীর পুজোয় অবশ্য জাতপাতের বেড়াজাল থাকে না৷ মহা আয়োজনে সকাল শ্রেনীর মানুষই অংশ নেন এদিন৷
সতীর একান্ন পীঠের মধ্যে এক পীঠ হচ্ছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রাম৷ কথিত আছে সতীর ডান পায়ের বুড়ো আঙুল পডে়ছিল ক্ষীরগ্রামে৷ এখানে দেবীমূর্তি কষ্টি পাথরের তৈরি৷ মহিষাসুরমর্দিনী রূপে দেবী যোগাদ্যাকে এখানে আরাধনা করা হয়৷ ক্ষীরগ্রামে ঢোকার মুখেই রয়েছে ক্ষীরদিঘি নামে একটি বড়সড় জলাশয়৷ বাংলার ৩১ শে বৈশাখ আজকের দিন প্রতি বছরই ক্ষীরগ্রামে মা যোগাদ্যো পুজো অনুষ্ঠিত হয়৷ মঙ্গলবার যাঁকজমক ভাবেই শুরু হয় মা যোগাদ্যার পুজো৷ দেবীকে দেখতে এদিন কাতারে কাতারে ভক্তদের ঢল নামে৷ গোটা গ্রামে শুরু হয় উৎসব৷ মন্দির কমিটির সদস্য আশিষ চৌধুরী জানান রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মা যোগাদ্যাকে দেখতে বহু ভক্তদের সমাগম হয়েছে৷ পুজো ঘিরে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য মোতায়েন রয়েছে পুলিশ কর্মী৷ সারা বছর জলের তলায় মন্দিরে মধ্যে রাখা হয় প্রস্তর মূর্তিকে৷ নির্ঘন্ট মেনে বৈশাখ মাসের সংক্রান্তিতে জল থেকে তুলে পুজো দিয়ে আবার জলে ডুবিয়ে রাখা হয়৷
ক্ষীরগ্রামের মা যোগাদ্যা সম্পর্কে বহু পৌরাণিক কাহিনি ও জনশ্রুতি আছে৷ যখন রাম-রাবণের যুদ্ধ চলছে তখন রাবণপুত্র মহিরাবণ, রাম ও লক্ষণকে তার আরাধ্যা দেবী ভদ্রকালীর কাছে বলি দেওয়ার জন্য পাতালে বন্দি করেছিল৷ সেখানে মহিরাবণ বধের পর হনুমান, রাম ও লক্ষণকে সঙ্গে নিয়ে পাতাল থেকে বেরোতে উদ্যোগী হলে মা ভদ্রকালী নাকি বলেছিলেন তোমরা তো চলে যাচ্ছ, আমাকে এখানে একা ফেলে গেলে তো হবে না৷ আমাকে পৃথিবীর মধ্যস্থল যেখান, সেখানে নিয়ে চলো! হনুমান সুড়ঙ্গপথে রাম-লক্ষণকে ও মা ভদ্রকালীকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন এই ক্ষীরগ্রামে৷ এই পুজো উপলক্ষ্যে বসেছে মেলা৷ কয়েক দিন ধরে চলবে এই মেলা৷