মাতৃভাষা দিবসের দিন আইসিসিআর (পূর্বাঞ্চল) আয়োজিত সত্যজিৎ রায় নামাঙ্কিত প্রেক্ষাগৃহে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হল।
অনুষ্ঠানটি ভাষ্য, কবিতা ও গীতি আলেখ্য ‘লাবণ্যধ্বনি’-এর রূপকার কালো ভ্রমর পাল। ভাষা দিবসের শহিদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে শুরু হল ‘লাবণ্যধ্বনি’। সমধুর কণ্ঠের মাধ্যমে সূচনা হল কালো ভ্রমর পালের ভাষ্য ও কবিতা পাঠ। শিল্পী শুভাশিস দত্ত গাইলেন ‘একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ’। প্রকাশ পেল প্রকৃতিতে বসন্তের ছোঁয়া। অনুষ্ঠানটি মূলত এইভাবেই সাজানো হয়েছিল। ‘সুন্দর তুমি এসেছিলে আজ প্রাতে’-এর সঙ্গে ‘সুন্দর বটে তব অঙ্গখানি’ সুন্দর সংযোজন। পরবর্তী গান ‘ওই আসনতলের মাটির পরে’র আগে কথায় বেজে ওঠে হৃদয়মন্দিরে পবিত্র ধ্বনি। গানের মধ্যে দিয়ে শিল্পী যেভাবে কথাগুলির অর্থ বোঝালেন তা মনে রাখার মতো। বাচিক শিল্পী অনাদিকালের স্বর্গীয় সেতু গড়লেন, যার সুরে এল ‘যখন এসেছিলে অন্ধকারে’। কীর্তনাঙ্গ ‘যে ছিল আমার স্বপনচারিণী’ অত্যন্ত মানানসই হয়েছে ভুবনমোহন স্বপন রূপে।
‘তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শতরূপে শতবার’ অংশবিশেষের পরেই ‘তোমায় গান শোনাব’ স্থায়ী অন্তরা, আবার ‘আমরা দু’জনে ভাসিয়া এসেছি’ পাঠের পরে গানটির সঞ্চারী ও আভোগ যেভাবে পরিবেশিত হল অনবদ্য। এই জায়গা থেকেই নতুন মোড় অনুষ্ঠানটির। কবি জীবনসের কবি। তিনি সর্বদাই আসীন-সসীমের মিলন ঘটিয়েছেন। তাই অজ পাড়া গাঁয়ের কালো মেয়েও তার কাছে অপরিসীম সৌন্দর্যের অধিকারিনী হয়ে উঠেছেন। কথায় ও সুরে একই সঙ্গে ‘কৃষ্ণকলি’ গীতি কবিতাটি যেভাবে উচ্চারিত হল, তাতে নতুন রূপরসের আস্বাদন পেলেন সমগ্র শ্রোতৃমণ্ডলী এবং পরীক্ষামূলকভাবে উপস্থাপনাটি নিঃসন্দেহে সেদিনের অন্যতম সুন্দর পরিবেশনা। ‘বধু মিছে রাগ কোরো না’-র মধ্য দিয়ে কবি তাঁর মানসসুন্দরীকে অভিমানী রূপে চিহ্নিত করেছেন। বার বার বলেছেন ‘তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে কোরো না বিড়ম্বিত তারে’ প্রকাশ পেল ‘ও যে মানে না মানা’ গানের সৌন্দর্যে। বসন্ত উৎসব চলাকালীন শান্তিনিকেতনে বসে সাহানা দেবী গাইছেন অতুলপ্রসাদ সেনের কাছে শেখা ‘মহারাজা কেওয়ারিয়া দ্বার খোল’।
নিমেষে রবীন্দ্রনাথ রচনা করেন ‘খেলার সাথী, বিদায় দ্বার খোলো’। কোনও সন্দেহ নেই সুরের মাধ্যমে যেভাবে শিল্পী গানটিকে যে উচ্চতায় তুলতে সক্ষম হয়েছেন, তার রেশ সমগ্র প্রেক্ষাগৃহে এক অনাবিল সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছিল। বলা যেতেই পারে রবিঠাকুরের কথায় ‘শেষ গানেরই রেশ নিয়ে যাও চলে’। নিঃসন্দেহে গান কবিতা ও ভাষ্য পরিবেশনের গুণে শিল্পীদ্বয় এক ত্রিবেণী সঙ্গমের সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন এ কথা অনস্বীকার্য। বিশেষভাবে বলতেই হয় কালো ব্রমর পালের বলিষ্ঠ লেখনীর কথা, যা লাবণ্যধ্বনিতে মিশে গেছে। বাদ্যযন্ত্র শিল্পীরা যথাযথ সহযোগিতা করেছেন। শিল্পীরা ছিলেন তালবাদ্যে, পার্থ সেন, কি-বোর্ডে সুমন ঘটতক, গিটারে জিৎ ঘোষ দস্তিদার এবং পরিপূরক যন্ত্রে বুদ্ধদেব সাধুখাঁ। সবশেষে আইসিসিআর (পূর্বাঞ্চল)-কে সাধুবাদ জানানো উচিত ভাষা দিবসের দিন বাংলা ভাষায় রবিঠাকুরের গান কবিতার মাধ্যমে এমন শ্রদ্ধাঞ্জলিকে বলিষ্ঠভাবে উপস্থাপনা করার সুযোগ শিল্পীদ্বয়কে করে দেবার জন্য।