রাজ্যে এই প্রথম লগ্নি আসতে চলেছে হার্ডওয়্যার ক্ষেত্রে

ছবি: এএনআই।

রাজ্যে এই প্রথম লগ্নি আসতে চলেছে হার্ডওয়্যার ক্ষেত্রে। তৈরি হতে চলেছে স্মার্ট মিটারের কারখানা। এর থেকে বাড়বে কর্মসংস্থানও। পুনর্নির্মাণ হতে চলেছে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার পুরোনো ক্যাম্পাস। এর থেকেও বাড়বে নিয়োগ। শুধু তাই নয়, আরও লগ্নি আকর্ষণ করতে রাজ্য সরকার নিয়ে আসতে চলেছে নতুন সেমিকন্ডাক্টর নীতিও। গত ৭ নভেম্বর কলকাতায় অনুষ্ঠিত হল কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই)-এর বৈঠক। রাজ্যের বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্তের কথা উঠে এল এই বৈঠক থেকেই।
কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে যাবতীয় বিনিয়োগ বরাবরই হয়েছে সফটওয়্যার ক্ষেত্রে। হার্ডওয়্যার ক্ষেত্রে বড়ো বিনিয়োগ এই প্রথম আসতে চলেছে- সৌজন্যে ইউরোপীয় স্মার্ট মিটার তৈরির সংস্থা ইসক্রামেকো। এই ব্যাপারে দায়িত্ব নিতে চলেছে তাদের ভারতীয় শাখা, ইসক্রামেকো ইন্ডিয়া। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মদন মোহন চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে জানান, ‘বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালি হাবে আমরা ৫ একর জমি নিয়েছি। সেখানে ১১ তলা বাড়ির দুটি তলায় প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড অ্যাসেম্বলিং (পিসিবিএ) ও স্মার্ট মিটার উৎপাদন করা হবে। বাকি ১টি তলায় বিভিন্ন সফ্টওয়্যার সংস্থা স্মার্ট মিটারিং সলিউশনস তৈরি করবে। এই প্রকল্পে সব মিলিয়ে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হবে। প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৯ হাজার জনের।’
তিনি আরও জানান, ‘রাজ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বৃদ্ধি হচ্ছে। তবে সেই বৃদ্ধির হারকে বহুগুন করতে হলে হার্ডওয়্যার ক্ষেত্রে লগ্নি প্রয়োজন। আমাদের প্রকল্পের পর আরও ২-৩টি হার্ডওয়্যার সংস্থা রাজ্যে লগ্নি করলে পশ্চিমবঙ্গের বৃদ্ধির হার এক লাফে অনেকটা বাড়বে।’
প্রসঙ্গত, ইসক্রামেকো ইন্ডিয়া ৪ বছর আগে কলকাতা থেকেই নিজের যাত্রা শুরু করেছিল। মহীশূর এবং হায়দ্রাবাদ, এই দুই জায়গায় কারখানা আছে তাদের। বর্তমানে এই দুই জায়গার কারখানা মিলিয়ে মাসে ৪০ হাজার স্মার্ট মিটার তৈরি করতে সক্ষম তারা। কলকাতার প্রস্তাবিত কারখানাটি এই দুইয়ের থেকে বৃহদাকার। আন্দাজ ৯ লক্ষ বর্গফুট জায়গা জুড়ে তৈরি হবে কলকাতার কারখানাটি, জানান মদন মোহন। তাঁর বক্তব্য, ‘এই স্মার্ট মিটার জল, গ্যাস ও বিদ্যুতের জন্য ব্যবহার করা যাবে। সব রাজ্যেই এটি হয় ব্যবহার করা হচ্ছে, অথবা হতে চলেছে।’
ইসক্রামেকো, রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা (ডব্লিউবিএসইডিসিএল)-র থেকে বিদ্যুতের ২.৫ লক্ষ স্মার্ট মিটার সরবরাহ এবং ইনস্টলেশনের টেন্ডার পেয়েছে। মদন মোহন জানান, ‘বণ্টন সংস্থার কাছ থেকে আমরা যে-অর্ডার পেয়েছি, তার মূল্য প্রায় ২৭০ কোটি টাকা। বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, সরকারি সংস্থার অফিস, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মতো বড় গ্রাহকের ঠিকানায় ইতিমধ্যেই ১ লক্ষ স্মার্ট মিটার আমরা বসিয়েছি। বাকি ১.৫ লক্ষ স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।’
অন্যদিকে রাজ্যে লগ্নি করতে চলেছে মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা কগনিজ্যান্টও। সল্টলেকের সেক্টর ৫ অঞ্চলে তাদের সংস্থার ক্যাম্পাসটি পুনর্নির্মাণ করার কথা ঘোষণা করল তারা। তবে, বিনিয়োগের আর্থিক মূল্য কত, সেই ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি। কগনিজ্যান্টের কলকাতার অপারেশনস হেড সাজিদ হুসেন জানান, ‘সেক্টর ফাইভে সংস্থার প্রথম অফিসটি কোভিডের সময় থেকে বন্ধ। সেটিই নতুন করে তৈরির পরে খুলছি। ১২-১৮ মাসের মধ্যে অন্তত ২ হাজার জনের কর্মসংস্থান হবে।’
বর্তমানে কলকাতায় কগনিজ্যান্টের ১৯ হাজার কর্মী রয়েছে। সাজিদের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের মতো মেধাসম্পদ অন্য কোথাও মেলা ভার। সেইজন্যই, পুরোনো ক্যাম্পাসকে পুনর্নিমাণ করে আরও বেশি নিয়োগের সিদ্ধান্ত এই সংস্থার।
অন্যদিকে, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে রাজ্য সরকার নিয়ে আসতে চলেছে নয়া সেমিকন্ডাক্টর নীতি। রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এমনটাই জানালেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সেমিকন্ডাক্টর ও গ্লোবাল কেপেবিলিটি সেন্টার (জিপিসি) তৈরির চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করছি। প্রশাসনের শীর্ষস্তর থেকে ছাড় পেলে তা মন্ত্রীসভায় যাবে অনুমোদনের জন্য।’
রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তরের অ্যাডিশনাল চিফ সেক্রেটারি রাজীব কুমার জানিয়েছেন, ডিজিটাল পাবলিক পরিকাঠামো তৈরি করতেই সরকারের এই সিদ্ধান্ত। বাবুল জানান, ‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন বাংলাকে তথ্যপ্রযুক্তি হাব করতে হবে। সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপের একটি সেমিকনডাক্টর নীতি।’
তবে, কবে এই নীতি সামনে আসবে, সেই ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মেলনে এই নীতি সর্বসমক্ষে আনা হবে।
প্রসঙ্গত, মার্কিন সেমিকন্ডাক্টর সংস্থা গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজ কলকাতায় ‘সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব্রিকেশন প্ল্যান্ট’ তৈরি করবে, এই মর্মে গত সেপ্টেম্বর মাসে হোয়াইট হাউস থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়৷ এই প্ল্যান্টে অত্যাধুনিক গ্যালিয়াম নাইট্রাইড (জিএএন) সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদিত হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্য সরকারের এহেন সিদ্ধান্ত বলেই মনে করা হচ্ছে।