চার দিনে সোনা ১৮০০ ও রুপোর দাম পাঁচ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে

সামনেই দুর্গা পুজো। হাতে আর মাত্র পঁচিশ দিন বাকি। কিন্তু এবার মানুষের মনে পুজোর আনন্দের সেই রেশ আর নেই। গত ৯ আগস্ট আরজি কর হাসপাতাল থেকে তিলোত্তমার ক্ষত বিক্ষত দেহ উদ্ধারের পর শহরের মুখ ভার। মানুষ আর আগের মতো পুজোর কেনাকাটায় মেতে উঠছেন না। তাই বলে একেবারে যে কেনাকাটা হচ্ছে না, এমন নয়। জৌলুশ কিছুটা কমলেও বাড়ির কচি কাঁচা থেকে শুরু করে অন্যান্য সদস্যদের হাসি-খুশি রাখতে পুজোর কেনাকাটা চলছে প্রায় সমানতালে। জামা-কাপড়, জুতো থেকে শুরু করে অলঙ্কার– সব জায়গাতেই কেনাকাটার ভিড়। যার ফলে এবার প্রভাব পড়েছে সোনা-রূপার বাজার দরেও। সেজন্য শুক্রবার থেকে সোনা রূপার দর উর্ধমুখী। এই ক’দিনে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এই দুই মূল্যবান ধাতুর দাম। চার দিনে সোনার দাম বেড়েছে প্রায় দুই হাজার টাকা। আবার রুপোর দামও বেড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। ফলে বিবাহ বা অন্য কোনও শুভ অনুষ্ঠানের কেনাকাটায় মধ্যবিত্তের হাত পুড়ছে প্রতিনিয়ত।

পুজোর কেনাকাটার মুখে গত শুক্রবার একদিনেই সোনার দাম বৃদ্ধি প্রায় ১৩০০ টাকা। আগের দিন অর্থাৎ ১২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বাজার বন্ধকালীন প্রতি ১০ গ্রাম পাকা সোনার দাম ছিল ৭১ হাজার ৯০০ টাকা। পরের দিন শুক্রবার সেটা বেড়ে হয় ৭৩ হাজার ২০০ টাকা। সোমবার এই দাম আরও ৫০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৭৩ হাজার ৭০০ টাকা। মাত্র চার দিনের ব্যবধানে প্রতি দশ গ্রাম সোনার দাম প্রায় ১৮০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে গহনা সোনার দামও এই চার দিনে সমান অনুপাতে ১৮০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রতি ১০ গ্রাম গহনা সোনার দাম ছিল ৭২ হাজার ৩০০ টাকা। শুক্রবার বাজার বন্ধকালীন সময়ে সেই সোনার দাম আরও ১২৫০ টাকা বৃদ্ধি পায়। ফলে শুক্রবার প্রতি ১০ গ্রাম গহনা সোনার বর্ধিত মূল্য দাঁড়িয়েছিল ৭৩ হাজার ৫৫০ টাকা। সোমবার প্রতি দশ গ্রামে সেই দাম বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৪ হাজার ১০০ টাকা। একইভাবে হলমার্ক গহনার মূল্যও সমানতালে বেড়েছে। বৃহস্পতিবার ওয়েস্ট বেঙ্গল বুলিয়ান মার্চেন্টস এন্ড জুয়েলার্স এসোসিয়েশন ঘোষিত বাজার বন্ধকালীন প্রতি ১০ গ্রাম হলমার্ক গহনার মূল্য ছিল ৬৮ হাজার ৭৫০ টাকা। শুক্রবার সেটা প্রতি দশ গ্রামে আরও ১১৫০ টাকা বৃদ্ধি পায় বলে জানিয়েছে এই সংস্থা। ফলে শুক্রবার বাজার বন্ধকালীন সময়ে প্রতি ১০ গ্রাম হলমার্ক গহনার বর্ধিত মূল্য দাঁড়িয়েছিল ৬৯ হাজার ৯০০ টাকা। স্বাভাবিকভাবে সোমবার সেই দামও বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭০ হাজার ৪০০ টাকা। অর্থাৎ আরও ৫০০ টাকা প্রতি দশ গ্রামে বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে শুধু যে সোনার বাজার দরেই এই কোপ পড়েছে, এমন নয়। একদিনে অনেকটাই বৃদ্ধি পায় রুপোর বাজারদরও। বৃহস্পতিবার যে রুপোর বাট কেজি প্রতি ৮৩ হাজার ৭০০ টাকা ছিল, শুক্রবার এক দিনে তা বৃদ্ধি পায় ২৮৫০ টাকা। ফলে শুক্রবার প্রতি কেজি রুপোর বাটের বর্ধিত মূল্য ছিল ৮৬ হাজার ৫৫০ টাকা। সোমবার সেই রুপো কেজি প্রতি আরও ১৯৫০ টাকা দর বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৫০০ টাকা। একইভাবে শুক্রবার রুপোর খুচরো মূল্যও কেজি প্রতি একদিনে বৃদ্ধি পায় ২৮৫০ টাকা। বৃহস্পতিবার বাজার বন্ধকালীন খুচরো রুপোর প্রতি কেজি মূল্য ছিল ৮৩ হাজার ৮০০ টাকা। শুক্রবার তা বেড়ে হয় ৮৬ হাজার ৬৫০ টাকা। সোমবার সেই দাম আরও ১৯৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এদিন বাজার বন্ধকালীন খুচরো রুপোর মূল্য কেজি প্রতি ৮৮ হাজার ৬০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ফলে মাত্র চার দিনে রুপোর দাম কেজি প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিশ্বকর্মা পুজোর কারণে বুলিয়ান এসোসিয়েশনের ধর্ম কাঁটা পুরোপুরি বন্ধ ছিল। সেজন্য এদিন কোনও দর প্রকাশিত হয়নি।


এদিকে পুজোর মরশুম যেতে না যেতেই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আসবে অগ্রহায়ণ মাস। তখন ভরা বিয়ের মরশুম শুরু হয়ে যাবে। পুজোর কেনাকাটার সঙ্গে সঙ্গে বিয়ের আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকে। যদিও ভাদ্র মাস মলমাস হওয়ার কারণে অনেকে এই মাসে কেনাকাটা করেন না। ফলে আর কিছুদিন পরেই ছেলের আশীর্বাদী আংটি ও সোনার চেন থেকে শুরু করে মেয়ের দেহের একাধিক অলঙ্কার কেনাকাটা শুরু হয়ে যাবে। আবার বরপক্ষও নতুন বধূর আশীর্বাদী অলঙ্কার থেকে শুরু করে ছেলের বিয়ের আংটি,  চেন ও পোশাক সহ অন্যান্য জরুরি কেনাকাটা সেরে রাখবেন। ফলে সোনার বাজারে যে আগামী কয়েকমাসে আরও কোপ পড়তে পারে, এরকম আশঙ্কা অনেকেই করছেন।