• facebook
  • twitter
Wednesday, 22 January, 2025

এক দশকে কর্মসংস্থানের সংখ্যা ৪৭১.৫ মিলিয়ন থেকে ৬৪৩ মিলিয়ন

ডা. আশুতোষ রঘুবংশী বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা বিশ্বব্যাপী জিডিপিতে (ডব্লিউএইচও, ২০২০; বিশ্ব ব্যাংক, ২০২৩) ১০% অবদান রয়েছে এবং ভারতের ক্ষেত্রে বার্ষিক ৭-১০% বৃদ্ধি পেয়েছে ।’

প্রতীকী চিত্র

আরবিআইয়ের KLEMS ডাটাবেস থেকে প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ সালে ৪৭১.৫ মিলিয়ন থেকে ২০২৩-২৪ সালে ৬৪৩ মিলিয়ন কর্মসংস্থান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তির মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, পিএলআই প্রকল্প এবং নয়া প্রযুক্তির অগ্রগতি। এমএসএমই এবং স্টার্টআপগুলি কর্মশক্তির নিরিখে, দেশকে নতুন আকার দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিস (সিআইআই)-এর সহযোগিতায় কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক (এমওএলই) আয়োজিত ‘শেপিং টুমরো’স ওয়ার্কফোর্স- ড্রাইভিং গ্রোথ ইন এ ডায়নামিক ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক ‘ফিউচার অফ জবস’ বিষয়ক সম্মেলনে, এই প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়।

প্রকৃতি সংরক্ষণ ভিত্তিক চাকরি, ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং আতিথেয়তা, পর্যটন এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো উদীয়মান ক্ষেত্রগুলি-কর্মসংস্থানের বাস্তুতন্ত্রকে নতুন আকার দিচ্ছে।

এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে নীতিনির্ধারক, মার্কেট লিডার এবং বিশেষজ্ঞরা, ভারতে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত কর্মশক্তি ও ক্রমবর্ধমান কর্মসংস্থানের প্রেক্ষাপট এবং কৌশলগুলি নিয়ে আলোচনা করেন। এই উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শ্রম কর্মসংস্থান এবং যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী ডঃ মনসুখ মাণ্ডব্য বলেন, ‘শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সমন্বয় সাধনের জন্য দক্ষতার বিকাশ, আমাদের প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে। উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে এবং কর্মশক্তির জন্য উপযুক্তদের প্রস্তুত করে আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছি এবং প্রতিভা বিকাশের পথ প্রশস্ত করছি।’ তিনি দক্ষতা ও মানদণ্ডের পারস্পরিক স্বীকৃতির মতো বিষয়কে তুলে ধরার পাশাপাশি, নানা উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী কর্মশক্তির ঘাটতি মেটাতে ভারতের সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরেন।

মাণ্ডব্য আরও বলেন, ‘শিল্প ও একাডেমিক শিক্ষার মধ্যে শক্তিশালী যোগসূত্র গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা ভারতের অনন্য চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি দক্ষতার মডেল তৈরি করতে পারি। দক্ষতাকে শংসাপত্র দিয়ে মূল্যায়ন করা যাবে না। শিল্প ও স্ব-কর্মসংস্থান ক্ষেত্রের গতিশীল চাহিদা মেটাতে, ব্যবহারিক দক্ষতার নিরিখে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। দক্ষতার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে। শুধুমাত্র শংসাপত্রের দিকে মনোনিবেশ করার পরিবর্তে, লক্ষ্য হওয়া উচিত শিল্পে উৎকর্ষতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের বিকাশ হচ্ছে কিনা।’

কেন্দ্রীয় সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক, সুমিতা দাওরা বলেছেন যে, ‘দ্রুত বিবর্তিত এই ক্ষেত্রটিতে সাফল্য অর্জনের জন্য তিনটি মূল প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি-চালিত চাকরির বাজারে উপযুক্ত হয়ে উঠতে, আমরা কীভাবে একটি ডিজিটালি দক্ষ কর্মীবাহিনী গড়ে তুলব? সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মশক্তি গড়ে তোলার জন্য আমরা কোন কৌশলগুলি কাজে লাগাতে পারি, যেখানে বৈচিত্র্যকে মূল্য দেওয়া হয় এবং সকলকে সমান সুযোগ দেওয়া হয়? উপরন্তু, যেহেতু শিল্পগুলি পরিবেশগত স্থায়িত্বকে অগ্রাধিকার দেয়, তাই আমরা কীভাবে আমাদের কর্মশক্তি সংস্কৃতিকে পরিবেশ-বান্ধব অনুশীলনভিত্তিক এবং মূল্যবোধকে সংহত করে তুলতে পারি? স্বাস্থ্যসেবা, উৎপাদন, লজিস্টিক এবং সবুজ সংরক্ষণভিত্তিক কর্মসংস্থানের মতো ক্ষেত্রগুলিতে, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য একটি দক্ষ ও অভিযোজিত কর্মশক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পগুলিকে শক্তিশালী করা, উন্নত শিক্ষায় পেশাদার তৈরি-সহ বিভিন্ন বিষয় নিশ্চিত করা দরকার।’
বিশ্বের জিসিসি রাজধানী হিসাবে ভারতের অবস্থানের কথা তুলে ধরেছেন সুমিতা, যেখানে ১,৭০০টি গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টার (জিসিসি), ২০ লক্ষেরও বেশি কর্মীকে নিয়োগ করেবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভারতের কর্মশক্তিকে গতিশীল ও বিশ্ব অর্থনীতির জন্য প্রস্তুত করতে কার্যকর নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটে। মূল কৌশলগুলির মধ্যে রয়েছে দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা, ডিজিটাল সাক্ষরতা ও পরিবেশ-বান্ধব কর্মশক্তির মূল্যবোধের প্রচার এবং কর্মশক্তির উন্নয়নে অন্তর্ভুক্তি ও স্থায়িত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়া। এই মূল লক্ষ্যমাত্রাগুলি সমাধানের মাধ্যমে, ভারত বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অগ্রণী হয়ে ওঠার জন্য প্রস্তুত। এটি ভবিষ্যতের জন্যও কর্মশক্তি তৈরি করবে, যা কেবল অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণই করবে না, বৈশ্বিক কর্মশক্তির চ্যালেঞ্জগুলিও মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে।

বিনোদ শর্মা, চেয়ারম্যান, সিআইআই ন্যাশনাল কমিটি অন ইলেকট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ডেকি ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড- মন্ত্রক ও রাজ্যগুলিতে কর্মসংস্থান প্রকল্পগুলিকে সহজতর করার জন্য একটি সমন্বিত জাতীয় কর্মসংস্থান নীতির প্রস্তাব করেছেন। তিনি আপস্কিলিং এবং রিস্কিলিং কর্মসূচি প্রদানকারী সংস্থাগুলিকে প্রণোদনা দেওয়ার পরামর্শ দেন এবং আরও কর্মশক্তি গড়ে তোলার জন্য শিক্ষানবিশ এবং উপার্জনভিত্তিক কর্মসূচিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান।

সুজলন গ্রুপের সিএইচআরও রাজেন্দ্র মেহতা জোর দিয়ে বলেন, ‘২০২৩ সাল থেকে ১০ লক্ষ কর্মসংস্থান-সহ পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে, ভারত বিশ্বব্যাপী চতুর্থ স্থানে রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিচ্ছন্ন শক্তিতে রূপান্তরের ফলে, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত, বিশ্বব্যাপী ১০.৩ মিলিয়ন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করতে প্রস্তুত।’ ইন্ডিয়ান হোটেলস কোম্পানি লিমিটেডের এইচআর-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট অজয় দত্ত বলেন, ‘গোয়া, হিমাচল প্রদেশ এবং কেরালার মতো রাজ্যগুলি দ্বারা চালিত ভারতের পর্যটন শিল্প, মহামারি-পরবর্তী সময়ের পর পুনরুদ্ধার করছে। উদীয়মান ট্রেন্ডগুলির মধ্যে রয়েছে আধ্যাত্মিক, গ্রামীণ এবং স্বাস্থ্য পর্যটন। বিকশিত ভারতের লক্ষ্যে এই শিল্প ২০৪৭ সালের মধ্যে ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছনোর জন্য অঙ্গীকার নিয়েছে, যা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।’

রকওয়েল অটোমেশন ইন্ডিয়া লিমিটেডের স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর সিআইআই ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারম্যান দিলীপ সাহানি বলেন, ‘স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং ভারতের ৭.৫ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির লক্ষ্য অর্জনের মূল চাবিকাঠি, যা জিডিপিতে ২৫% অবদান রেখে ভারতকে দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈশ্বিক উৎপাদন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলেছে। এই ক্ষেত্রের ৯০% সংস্থা এমএসএমই হওয়ায়, ১০০ মিলিয়নেরও বেশি দক্ষ পেশাদারদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে এবং ভারতকে বৈশ্বিক মূল্য শৃঙ্খলে সামিল করেছে।’

টিভিএস সাপ্লাই চেইন সলিউশনস লিমিটেডের সিইও সুকুমার কে মন্তব্য করেন, ‘বিশ্বব্যাপী, লজিস্টিক সেক্টর ২০৩০ সালের মধ্যে ১৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছনোর জন্য প্রস্তুত। ভারত ক্রমবর্ধমান ই-কমার্স, উৎপাদন শিল্প এবং পিএম গতি শক্তির মতো মাস্টার প্ল্যানের নীতিগুলির দ্বারা চালিত হয়ে, ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের মূল ভিত্তিকে মজবুত করে।’

সেফএক্সপ্রেস প্রাইভেট লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট অনিল সিয়াল বলেন, ‘ভারতীয় গুদামজাত জিনিসের বাজার, ১৪-১৫% সিএজিআর হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭ সালের মধ্যে ৩৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে চলেছে। মূল চালিকাশক্তির মধ্যে রয়েছে এআই, অটোমেশন এবং স্বায়ত্তশাসিত সিস্টেম ও ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে রিয়েল-টাইম রেকর্ড। ইন্ট্রা-স্টোরেজ রোবোটিক্স এবং সাসটেনেবল পরিবহণের মতো বিষয়গুলি কর্মশক্তির গতিশীলতা এবং সাপ্লাই চেইন অপারেশনকে নতুন আকার দিচ্ছে।’

সিআইআই হেলথকেয়ার কাউন্সিলের সদস্য এবং ফোর্টিস হেলথকেয়ারের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও ডা. আশুতোষ রঘুবংশী বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা বিশ্বব্যাপী জিডিপিতে (ডব্লিউএইচও, ২০২০; বিশ্ব ব্যাংক, ২০২৩) ১০% অবদান রয়েছে এবং ভারতের ক্ষেত্রে বার্ষিক ৭-১০% বৃদ্ধি পেয়েছে ।’

হেলথকেয়ার সেক্টর স্কিলস কাউন্সিলের গভর্নিং বডির সদস্য ডা. শুভনুম সিং বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবায় এআইকে স্বাগত জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য পরিষেবায় ডিজিটাল দক্ষতা জোরদার করে এবং উদ্ভাবনকে ভিত্তি করে আমাদের ধীরে ধীরে এবং অবিচলিতভাবে এগিয়ে যাওয়া উচিত।’