নভেম্বর মাসে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি থাকবে পড়তির দিকে! এমনটাই জানাচ্ছে মার্কিন আর্থিক পরিষেবা সংস্থা মর্গ্যান স্ট্যানলি। সম্প্রতি তাদের একটি রিপোর্ট মারফৎ জানা গিয়েছে, খাদ্যবস্তুর দাম কমতে থাকায় মূল্যবৃদ্ধির সূচক কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) অনুযায়ী নভেম্বর মাসে ভারতের খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার কমে দাঁড়াবে ৫.৫ শতাংশ।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘মূল(কোর) মূল্যবৃদ্ধি বাড়তে থাকা বা জ্বলানির দাম কমতে থাকা সত্ত্বেও খাদ্যবস্তুর মূল্য নিয়ন্ত্রিত থাকায় অক্টোবরে সিপিআই মূল্যবৃদ্ধি ৬.২ শতাংশ থেকে নভেম্বরে কমে ৫.৫ শতাংশ হবে, এমনটাই আশা আমাদের। আমরা অনুমান করছি, খাদ্যবস্তুর মূল্য আরও কমতে থাকায় এবং কোর মূল্যবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ায় সিপিআই পরবর্তীতে আরও কমতে পারে।’
মূল্যবৃদ্ধিকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা হয় – কোর এবং হেডলাইন। হেডলাইন মূল্যবৃদ্ধিতে সমস্ত রকমের বস্তু বা পরিষেবার মূল্যবৃদ্ধিকেই ধরে গড় মূল্যবৃদ্ধি মাপা হয়। অন্যদিকে, কোর মূল্যবৃদ্ধিতে খাদ্যবস্তু এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিকে ধরা হয় না, কারণ এই ক্ষেত্রগুলোর দাম অত্যন্ত পরিবর্তনশীল এবং সর্বত্রই ওঠানামা করে।
প্রসঙ্গত, গত অক্টোবর মাসে সিপিআই সূচকে মূল্যবৃদ্ধির মান হয়ে দাঁড়িয়েছিল ৬.২১ শতাংশ। খাদ্যবস্তু, মূলত শাকসব্জির দাম বাড়ার ফলেই মূল্যবৃদ্ধির হার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঘোষিত মূল্যবৃদ্ধির ঊর্ধ্বসীমা, অর্থাৎ ৬ শতাংশ সিপিআইকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। সিপিআই অনুযায়ী সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যবৃদ্ধি ছিল ৫.৪৯ শতাংশ। অক্টোবর মাসে আচমকাই মূল্যবৃদ্ধির কারণ হল শাকসব্জির দাম ৪২.১৮ শতাংশ বৃদ্ধি। এই বছর বর্ষা দেরি করে ফেরায় শস্যের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, ফলে সরবরাহে টান পড়েছে। এরই ফলে মূল্যবৃদ্ধি হঠাৎ করে বেড়ে যায় অক্টোবর মাসে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস গত সপ্তাহে জানিয়েছিলেন, ‘ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি এখনও অপরবর্তিত। মূল্যবৃদ্ধি পড়তির দিকে। তবে, ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে কোনও উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি আমরা এড়িয়ে যেতে পারিনা। এই ঝুঁকিকে কোনওভাবে খাটো করে দেখা ঠিক হবে না।’ তিনি আরও জানিয়েছিলেন, ‘বৃদ্ধি এবং মূল্যবৃদ্ধির মধ্যেকার ভারসাম্য যথার্থভাবে বজায় রয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নিজেদের ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) ০.৫ শতাংশ কমিয়েছে। ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও হল মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একটি বিশেষ ‘কোয়ান্টিটেটিভ’ হাতিয়ার। এর দ্বারা প্রতিটি তপশিলী ব্যাঙ্ককে নিজেদের পাক্ষিক ‘নেট ডিমান্ড-টাইম লায়াবিলিটিজ’ বা এনডিটিএল-এর একাংশ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে টাকা হিসেবে গচ্ছিত রাখতে হয়। ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও বাড়লে ব্যাঙ্ককে বেশি টাকা জমা রাখতে হবে, ফলে ব্যাঙ্কের ঋণদানের ক্ষমতা কমে যাবে, এবং অর্থনীতিতে টাকার পরিমাণ কমবে, সেই সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধিও কমবে। তাই, মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও বাড়িয়ে থাকে, এবং মূল্যবৃদ্ধি পড়তির দিকে থাকলে ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও কমানো হয়। ০.৫ শতাংশ ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও কমানোতে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় ১.১৬ লক্ষ কোটি টাকা আরও ঢুকবে। এর ফলে সুদের হার কমবে, ফলে ঋণগ্রহণ বাড়বে এবং আর্থিক বৃদ্ধি হবে।
তবে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে নিজেদের মূল পলিসি রেট বা ‘রেপো রেট’ অপরিবর্তিতই রেখেছে। তাতে কোনও বদল আসেনি। ফলে, তা এখনও ৬.৫ শতাংশই রয়েছে।