দেশের শক্তি হল শিল্প। কোনও একটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে চালিকাশক্তির ভূমিকায় থাকে শিল্পই। আর শিল্প গড়ে তুলতে উদ্যোগপতিদের ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরাই দেশে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করেন এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য সম্পদ সৃষ্টি করেন। ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স-এর শতবর্ষ উদযাপনে কলকাতা টাউন হলে রবিবার উপস্থিত হয়ে এমনটাই বললেন ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি। এদিন নারায়ণ মূর্তি দেশের তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে ভারতের তরুণ সমাজকে সপ্তাহে ৭০ ঘন্টা কাজ করতে হবে।’ একই সঙ্গে এদিন তিনি কলকাতাকে ‘সারা ভারতের মধ্যে সবথেকে সংস্কৃতি মনস্ক শহর’ হিসেবে অভিহিত করেন।
১৫ ডিসেম্বর ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের শতবর্ষ পালনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন নারায়ণ মূর্তি। অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আইসিসি উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং আরপিএসজি গ্রুপের চেয়ারম্যান সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি অভ্যুদয় জিন্দাল, ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্রিজভূষণ আগরওয়াল, ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট পার্থিব বিক্রম নেওটিয়া এবং ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের ডিরেক্টর জেনারেল রাজীব সিং-সহ শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতিরা।
এই মঞ্চ থেকেই দেশের তরুণদের উদ্দেশ্যে নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম এবং শ্রেষ্ঠ হওয়ার লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা এমন এক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলি যেখানে ভারতে জন্মগ্রহণকারী প্রতিটি শিশু, তাদের পারিবারিক পরিচয় যা-ই হোক না কেন, উন্নতি করার সুযোগ পাবে। আসুন আমরা বিশ্বকে দেখাই যে প্রকৃত সাফল্য কেবল ব্যক্তিগত সম্পদ দিয়ে পরিমাপ করা হয় না, বরং অন্যের কল্যাণে আমরা কতটা অবদান রাখছি, তার মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়। এই পর্যায়ে আমাদের লক্ষ্য উচ্চাকাঙ্ক্ষী হওয়া।’
নারায়ণ মূর্তি বিশ্বাস করেন, উদ্যোগপতিরাই দেশ গঠন করেন। কারণ তাঁরা কর্মসংস্থান করেন। তিনি বলেন, ‘উদ্যোগপতিরাই তাঁদের বিনিয়োগকারীদের জন্য সম্পদ সৃষ্টি করেন এবং তাঁরা কর প্রদান করেন। তাই রাষ্ট্র যদি পুঁজিবাদকে গ্রহণ করে তাতে দেশেরই উন্নয়ন হবে।’ নারায়ণ মূর্তি এদিন বলেন, ‘যে-কোনও সংস্থায় সাফল্যের প্রকৃত পরিমাপ হল এর দীর্ঘায়ু। এই কারণেই ভারতের সেই সমস্ত নিগমগুলির প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে যেগুলি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ আইসিসি-র শতবর্ষ উদযাপনে আইসিসি-র মতো প্রতিষ্ঠানের স্থায়িত্ব ও দূরদৃষ্টির প্রশংসা করেন নারায়ণ মূর্তি।
তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি কেবল সুবিধার হাতিয়ার নয়, এটি উন্নয়নের অনুঘটক। এটি খরচ কমায়, রাজস্ব বৃদ্ধি করে এবং নতুন সুযোগ তৈরি করে। এআই-শিল্পে বিপ্লব ঘটাচ্ছে, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবার মতো ক্ষেত্রে। এআই ইতিমধ্যেই প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় ক্যান্সারের মতো রোগগুলিকে অনেক বেশি কার্যকরভাবে সনাক্ত করতে সাহায্য করছে। তিনি বলেন, ‘ভারত ২০৪৭-এর দিকে তাকিয়ে। যখন আমরা স্বাধীনতার ১০০ তম বর্ষপূর্তির দিকে এগিয়ে চলেছি, তখন আমাদের অবশ্যই নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে হবে যে, একটি সমৃদ্ধ ও আর্থিকভাবে শক্তিশালী দেশ অর্জনে আমরা কী ভূমিকা পালন করতে পারি। এটি কেবল ব্যবসায় সফল হওয়ার বিষয় নয়, আমরা কীভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারি এবং ভারতকে বিশ্ব মঞ্চে পৌঁছে দিতে পারি সে সম্পর্কে সচেতনতা। প্রযুক্তির ভূমিকার ক্ষেত্রে, অনস্বীকার্যভাবে ভারতকে এটি সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করতে হবে।’
সবশেষে তাঁর পরামর্শ, ‘সম্মানের অনুসন্ধান করুন, কেবল ব্যক্তিগত লাভের জন্য নয়, আপনার সমাজের উন্নতির জন্যও। সাফল্য ও সম্মান আসে ধারাবাহিক, উচ্চমানের কাজ এবং সততা থেকে।’
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় প্রতিষ্ঠিত আইসিসি ২০২৫ সালে তার শততম বছরে প্রবেশ করতে চলেছে, যা ভারতের শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসাবে তার অবস্থানকে প্রমাণিত করেছে। কয়েক দশক ধরে, আইসিসি ভারতে ১৫টি আঞ্চলিক কার্যালয় এবং ২৫টি দেশের প্রতিনিধিদের বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ থেকে শুরু করে স্টার্ট-আপ পর্যন্ত সমস্ত স্তরের ব্যবসাকে সহায়তা দিয়ে এসেছে। সরকারি লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, আইসিসি ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’-র আওতায় বিশেষ করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে শিল্প বিকাশ, স্থায়িত্ব এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।