চিকিৎসার খরচ আরও দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেবে

প্রতীকী চিত্র

বিমা হল এমন একটি সংস্থা যেখানে লক্ষ লক্ষ নাগরিক এবং প্রচুর ব্যবসাকে সুরক্ষা প্রদান করে। সেই সুরক্ষার বিপরীতে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু তথ্য, সমালোচনার ঢেউ তুলেছে। একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন উঠে আসছে, যে-কোনও ধরনের বিমা- সেটা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত হোক বা ব্যবসা- তা কি সাধারণ মানুষের বিপদে সুরক্ষা প্রদান করে? তবে এখন এই সমস্যা সম্পর্কে গভীর বিশ্লেষণ করা এবং বাস্তব পরিস্থিতি বোঝা জরুরি।

গত বছর আইআরডিএআই (IRDAI)-এর প্রকাশিত বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী, জেনারেল ইনস্যুরেন্স ইন্ডাস্ট্রিস, ভুক্তভোগীদের ১ কোটি ৭২ লক্ষ কোটি টাকার সুরক্ষা সংক্রান্ত দাবি মিটিয়েছে। যার মধ্যে স্বাস্থ্য বিমা খাতে ৮০ হাজার কোটি টাকা পেয়ে উপকৃত হয়েছে বহু মানুষ। অন্যদিকে, যে-সমস্ত দাবিগুলি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে তার মধ্যে ২০% এমন রয়েছে, যেগুলি প্রতারণার উদ্দেশ্য বা সঠিক নথিপত্র জমা না দেওয়ার মতো ঘটনায় সামনে এসেছে।

এবিষয়ে তপন সিংঘেল, চেয়ারম্যান, জেনারেল ইনস্যুরেন্স কাউন্সিল এবং এমডি ও সিইও, বাজাজ অ্যালিয়ান্স জেনারেল ইনস্যুরেন্স- জোর দিয়েছেন বিমার নিরাপত্তার দিকটির উপর। তিনি বলেন যে, ‘অধিকাংশ মানুষেরই ধারণা রয়েছে যে, ইনস্যুরাররা বিশাল লাভ করছেন এবং শুধুমাত্র লাভ করার জন্যই এই ব্যবসা করছেন। প্রথমত, লাভ হলে এটি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে যে, ইনস্যুরাররা ভবিষ্যতের ক্লেমগুলি মিটিয়ে দিতে পারবেন এবং ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন। লাভের পরিমাণ বেশি হলে তা বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করে। অনেকে তর্ক করেন যে, মানুষ চিকিৎসা খরচের জন্য সাশ্রয় করে নিজেরাই নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেন। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন, নীতি আয়োগের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে বর্তমানে নিজের পকেট থেকে (ওওপি) দেওয়া চিকিৎসা বাবদ খরচের পরিমাণ প্রায় ৬০%। ইনস্যুরেন্স ছাড়া, এই সংখ্যা বেড়ে ১০০% হতে পারে, যা প্রতিটি পরিবারকে সম্পূর্ণরূপে আকাশচুম্বী চিকিৎসা খরচের সামনে অসহায় করে তুলবে। উল্লেখযোগ্য সাশ্রয় নেই এমন সমস্ত পরিবারকে চিকিৎসার খরচ দারিদ্র্য সীমার নীচে নিয়ে যাবে।’


বর্তমানে,স্বাস্থ্যসেবার খরচের কারণে ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ৭% প্রতি বছর এই কঠিন বাস্তবের সম্মুখীন হন। ইনস্যুরেন্স না থাকলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে এবং তখন সরকারের উপরে স্বাস্থ্যসেবা ভর্তুকি দেওয়ার জন্য অনেক বেশি চাপ তৈরি হবে। এর ফলে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর থেকে সম্পদ এই খাতে ব্যয় করতে হবে। এই ধরনের পরিস্থিতি আমাদের সমাজের ভারসাম্য বিঘ্নিত করবে এবং দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাবে।

বন্যা, ঝড় এবং ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ যে-কোনও দেশে, যে-কোনও সময়ে হতে পারে। এর জেরে প্রচুর মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং বহু আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এমন ঘটনার ক্ষেত্রে লোকসান কাটিয়ে উঠতে ইনস্যুরেন্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইনসিওর্ড ব্যক্তি এবং প্রকৃত ক্ষতির মধ্যে ৯০%-এর বেশি সুরক্ষার ব্যবধান বিপর্যস্ত হলে, তা এই ব্যবধানটি পূরণ করার জরুরি প্রয়োজনীয়তাকে স্পষ্ট করে। শুধুমাত্র ২০২৩ সালে ভারত, ১৭টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়েছে। ইনস্যুরেন্স না থাকলে, দেশের অর্থনীতি এই রকম ঘটনার জেরে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়বে।

এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি উদাহরণ হিসাবে দেখে নেওয়া যাক। এর শক্তিশালী ইন্স্যুরেন্সের কারণেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরেও উপদ্রুত অঞ্চলগুলি আরও বেশি মজবুত এবং আরও বেশি স্থিতিশীল হয়েছে। হারিকেন ক্যাটরিনার পরে বিধ্বস্ত পরিকাঠামোর দ্রুত পুনর্নির্মাণ এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, ইনসিওর্ড ক্যাপিটালের হস্তক্ষেপের ফলেই সম্ভব হয়েছিল।