বিন্দু বিন্দু জলে সিন্ধু। ভবিষ্যৎ সুরক্ষার প্রশ্নে সঞ্চয়ের অভ্যাসও অনেকটা সেই রকমই। ছোট ছোট সঞ্চয় একত্রিত হয়ে একদিন বড়ো মূলধনে পরিণত হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সংসার চালানোর পাশাপাশি জীবনযাপনের নানা শর্ত পূরণ করতে হয়। আধুনিক লাইফস্টাইলের ব্যয়ভার সামলে, বিভিন্ন খাত থেকে অল্প অল্প অর্থ বাঁচিয়ে ভবিষ্যতের জন্য তুলে রাখার দায়িত্বটা কিন্তু নিতেই হবে।
সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলি বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প নিয়ে এসেছে- যার সুফল নিতেই পারেন। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিভিন্ন বয়স ও আয়ের নিরিখে সঞ্চয়ের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করাটা ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কী স্কিম অর্থকরী হতে পারে, জেনে নিন।
মান্থলি ইনকাম স্কিম
মান্থলি ইনকাম স্কিম-এ টাকা জমানোর সবচেয়ে ভালো মাধ্যম পোস্ট অফিস। এই ক্ষেত্রে সিঙ্গল অ্যাকাউন্ট-এ ৯ লক্ষ টাকা এবং ডাবল অ্যাকাউন্ট-এ ১৫ লক্ষ টাকা জমানোর স্কিম চালু আছে। প্রয়োজন হলে এই টাকা আপনি যখন খুশি তুলে নিতেও পারেন। তবে রাখতে পারলে অনেক বেশি ইন্টারেস্ট পাওয়া যাবে এবং আপনার অবর্তমানে ওই টাকা পাবে আপনার বৈধ নমিনি। তবে জেনারেল সেভিংস ছাড়াও রয়েছে ‘সিনিয়র সিটিজেন প্ল্যান’। এই স্কিম-এ ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রাখতে পারবেন। এক্ষেত্রে ৭.৪০ শতাংশ হারে সুদ পাবেন এবং সুদের জমা টাকা প্রত্যেক পাঁচ মাস বাদে আপনার অ্যাকাউন্ট-এ যুক্ত হবে। পাঁচ বছর পূর্ণ হলে অতিরিক্ত তিন বছর চালু রাখতে পারবেন এই অ্যাকাউন্ট৷
জীবনবিমা
জীবনবিমা কোম্পানি প্রবীণ নাগরিকদের জন্য চালু করেছে পেনশন প্রকল্প। ২৫ বছর মেয়াদের এই প্রকল্পে আপনার সুবিধামতো অর্থ জমা রাখুন। যে-পরিমাণ টাকা জমবে সেই হিসাবে আপনি প্রতি মাসে পাবেন পেনশন এবং আপনার টাকা ট্যাক্স-ফ্রি হয়ে যাবে।
রিভার্স মর্ডগেজ লোন
যেসব প্রবীণ নাগরিকের তেমন উপার্জন নেই, তাঁরা এই স্কিম-এর ফায়দা নিতে পারেন। বাড়ি, গাড়ি, দেশ-বিদেশ ভ্রমণ কিংবা ছেলেমেয়ের বিয়ের জন্য প্রবীণ নাগরিকরা যাতে সহজে ঋণ নিতে পারেন, তারই ব্যবস্থা রেখেছে বিভিন্ন বিমা কোম্পানি। জমি-বাড়ি বন্ধক রেখে নিতে পারেন এই ঋণ। অবশ্য এই রিভার্স মর্ডগেজ স্কিম-এর আরও কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। যেমন–
w রিভার্স মর্ডগেজ স্কিম-এর সুবিধে নিতে হলে বয়স হতে হবে ৬০ বছরের উপর।
w আপনার বন্ধক রাখা জমি-বাড়ির মোট মূল্যের (ভ্যালুয়েশন) ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন।
w প্রতি মাসে, তিন মাসের ব্যবধানে কিংবা এককালীন নিতে পারেন এই স্কিম-এর টাকা।
w ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ২০ বছর। এর মধ্যে যদি ঋণগ্রহীতার মৃত্যু হয়, তাহলে নমিনি বাকি টাকা শোধ করে মর্ডগেজ প্রপার্টি ছাড়িয়ে নিতে পারেন কিংবা সারেন্ডার করে ব্যাংক-কে ওই মর্ডগেজ প্রপার্টির মালিকানা দিয়ে দিতে পারেন।
জমানোর অন্যান্য উপায়
হাতে কিছু টাকা থাকলে জমিবাড়ি কিংবা সোনা কিনে রাখুন। খুব দ্রুত আয় বাড়ানোর এ এক দারুণ মাধ্যম। কারণ, প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে জমিবাড়ি এবং সোনার দাম।
টাকা জমাতে পারেন মিউচুয়াল ফান্ড-এর মাধ্যমে। এক্ষেত্রে ‘সিপ’ অর্থাৎ ‘সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান’ (এসআইপি)-এর ফায়দা তুলুন।
‘গভর্নমেন্ট সিকিউরিটিজ’ ফান্ড-এ টাকা রেখেও বাড়তি সুদের মালিক হওয়া যায়। এই ফান্ড-এ টাকা রাখা যেমন লাভদায়ক, নিরাপদ। বড়ো অসুখ হলে যাতে জমানো টাকা খরচ না হয়ে যায়, তার জন্য অবশ্যই হেল্থ প্ল্যান করুন। কারণ, স্বাস্থ্যবিমা যে কত টাকা বাঁচায়, তা অসুস্থ হলেই হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়।
গ্যাস, বিদ্যুৎ, দূরভাষ, যাতায়াত, বাজারহাট প্রভৃতি থেকে প্রতিদিন কিছুটা খরচ বাঁচান এবং সেই টাকা প্রতি মাসে পিপিএফ একাউন্ট-এ জমান। দেখবেন বছরের শেষে একটা বড়ো অঙ্কের টাকা জমে যাবে। পিপিএফ-এ কর ছাড়ের সুবিধাও রয়েছে।