বিকশিত ভারত ২০৪৭-কে মাথায় রেখে ১৬-তম মিউচুয়াল ফান্ড সামিট আয়োজন করল ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স (আইসিসি)। বক্তব্য রাখেন অ্যাসোসিয়েশন অফ মিউচুয়াল ফান্ডস ইন ইন্ডিয়া (এএমএফআই)-এর চিফ এক্সিকিউটিভ ভেঙ্কট নাগেশ্বর চালাসানি। সামিটে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন – সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি) এর পূর্ণ সময়ের সদস্য অনন্ত নারায়ণ গোপালকৃষ্ণন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সিকিউরিটিজ মার্কেটের প্রাক্তন সিইও-এনপিএস ট্রাস্ট এবং পরিচালক শশী কৃষ্ণান, আদিত্য বিড়লা সান লাইফ এএমসি লিমিটেড, ইভিপির হেড অফ ইনভেস্টর এডুকেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন ডেভেলপমেন্ট কে এস রাও, পার্টনার-পিডব্লিউসি, ইন্ডিয়া ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস অ্যাডভাইজরি লিডার এবং গ্লোবাল হেলথ ইন্স্যুরেন্স প্র্যাকটিস লিডার জয়দীপ কুমার রায়, সামারা ক্যাপিটালের এমডি অভিষেক কাবরা, আইসিসি ন্যাশনাল এক্সপার্ট কমিটি-বিএফএসআইয়ের চেয়ারম্যান, এসবিআই লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রাক্তন এমডি ও সিইও এবং স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন ডেপুটি এমডি অতনু সেন, আইসিসির ন্যাশনাল এক্সপার্ট কমিটি-বিএফএসআইয়ের কো-চেয়ারম্যান অরুণ লাড্ডা, আইআরডিএআইয়ের প্রাক্তন সদস্য এবং বীমা পরামর্শদাতা, আইসিসি জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিটি বিএফএসআইয়ের সদস্য সুধীন রায় চৌধুরী।
আইসিসি ন্যাশনাল এক্সপার্ট কমিটি-বিএফএসআইয়ের চেয়ারম্যান অতনু সেন বলেন, ইন্ডিয়া ২০৪৭ ভিশন মূলত আর্থিক বৃদ্ধি এবং দেশ গঠনে অর্থনীতির ভূমিকায় জোর দেয়। ইউপিআই এর মতো ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ৭৫০ মিলিয়ন প্যান কার্ড হোল্ডারদের মধ্যে মাত্র ৪৭ মিলিয়ন মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেন। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে বিনিয়োগের হার মাত্র ৩.২ শতাংশ। এই সেক্টরে যথেষ্ঠ বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে সচেতন করার দিকে আমাদের জোর দিতে হবে।
আইসিসির ন্যাশনাল এক্সপার্ট কমিটি-বিএফএসআইয়ের কো-চেয়ারম্যান অরুণ লাড্ডা বলেন, ভারতের মিউচুয়াল ফান্ড সেক্টরে ধীরে ধীরে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ছে। অক্টোবর মাসে এই সেক্টরের বিনিয়োগের পরিমাণ ৬২.২৬ লক্ষ কোটিতে পৌঁছেছে। এআই প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় মিউচুয়াল ফান্ডের বিষয়ে ছোট শহরের বাসিন্দারাও জানতে পেরেছেন। ফলে এই সমস্ত ছোট শহরের বাসিন্দারাও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করছেন। তবে এই সেক্টরের শ্রীবৃদ্ধির জন্য মানুষকে আরও সচেতন করতে হবে।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি) এর পূর্ণ সময়ের সদস্য অনন্ত নারায়ণ গোপালকৃষ্ণন বলেন, ২০১৯ সালে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতেন ২ কোটি মানুষ। সেটা এখন বৃদ্ধি পেয়ে ৫.১ কোটি হয়েছে। একই সঙ্গে বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধিতেও রকেট গতি দেখা গিয়েছে। ২০১৯ সালে যে সংখ্যাটা ছিল ২৩ লক্ষ কোটি, সেটাই আজ বৃদ্ধি পেয়ে ৬৭ লক্ষ কোটিতে পৌঁছে গিয়েছে। তবে মিউচুয়াল ফান্ডগুলি বাজারের ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কিত। বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। বুঝতে হবে যে এই সেক্টরে কোনও গ্যারান্টি নেই, সমস্ত বিষয়টাই ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কিত। বিভিন্ন ঝুঁকি সত্ত্বেও ২০২৪ অর্থবর্ষে এই সেক্টরের বিনিয়োগকারীরা মোটামুটি ১০ থেকে ১২ শতাংশ রিটার্ন পাবেন। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ঝুঁকি সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়াতে হবে। এটা বোঝাতে হবে যে বাজারের ওঠানামা গোটা প্রক্রিয়াটির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
অ্যাসোসিয়েশন অফ মিউচুয়াল ফান্ডস ইন ইন্ডিয়া (এএমএফআই) এর চিফ এক্সিকিউটিভ ভেঙ্কট নাগেশ্বর চালাসানি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে টানাপোড়ের চললেও ভারত তার অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ধরে রেখেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী লক্ষ্য ২০২৪ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ে তোলা। এই পথচলায় আমাদের সকলেরও ভূমিকা রয়েছে। দেশের সমস্ত প্রান্তের মানুষকে আর্থিকভাবে সচেতন হতে হবে। ভারতের সাক্ষরতার হার ৭৫ শতাংশ হলে, আর্থিক সাক্ষরতার আর মাত্র ২৭ শতাংশ। এনসিএফবি-র সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। অ্যাসোসিয়েশন অফ মিউচুয়াল ফান্ডস ইন ইন্ডিয়া (এএমএফআই) আর্থিক সাক্ষরতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সমস্ত স্তরের মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ করা হয়েছে। আইপিএল চলাকালীন মানুষকে সচেতন করতে মিউচুয়াল ফান্ড সংক্রান্ত বিজ্ঞাপণ দেওয়া হচ্ছে। মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে সচেতন করার ক্ষেত্রে অন্যতম অগ্রণী সংস্থা হিসেবে উঠে এসেছে এএমএফআই। শুধুমাত্র গত বছর, এএমএফআই এবং তার অংশীদাররা ১৩০০০-এরও বেশি অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে, ১৬.৫ লক্ষেরও বেশি মানুষকে এই বিষয়ে সচেতন করেছে। স্থানীয় দোকানগুলির মাধ্যমে মানুষকে আর্থিকভাবে শিক্ষিত করে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সিকিউরিটিজ মার্কেটের প্রাক্তন সিইও-এনপিএস ট্রাস্ট এবং পরিচালক শশী কৃষ্ণান বলেন, ৭৮ কোটি ভারতীয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এর মধ্যে ৫২ কোটি জনধন যোজনার আওতায় খোলা, যার মধ্যে ৫০ শতাংশ অ্যাকাউন্ট মহিলাদের। কিন্তু ২০ শতাংশ অ্যাকাউন্টই নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। অর্থাৎ, সবচেয়ে আগে আমাদের মানুষকে সচেতন করতে হবে। তাহলেই তাঁরা আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
আদিত্য বিড়লা সান লাইফ এএমসি লিমিটেড, ইভিপির হেড অফ ইনভেস্টর এডুকেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন ডেভেলপমেন্ট কে এস রাও-ও আর্থিকভাবে মানুষকে শিক্ষিত করে তোলার ওপর জোর দেন। পার্টনার-পিডব্লিউসি, ইন্ডিয়া ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস অ্যাডভাইজরি লিডার এবং গ্লোবাল হেলথ ইন্স্যুরেন্স প্র্যাকটিস লিডার জয়দীপকুমার রায় বলেন, ভারতের আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি যুবসমাজের বিনিয়োগের ওপর নির্ভরশীল। সামারা ক্যাপিটালের এমডি অভিষেক কাবরা তাঁর বক্তব্যে লং টার্ম বিনিয়োগের ওপর জোর দেন। আইআরডিএআইয়ের প্রাক্তন সদস্য এবং বীমা পরামর্শদাতা, আইসিসি জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিটি বিএফএসআইয়ের সদস্য সুধীন রায় চৌধুরী সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সামিটের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।