আগস্ট মাসের শেষেই প্রকাশিত রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার বার্ষিক রিপাের্টে ভারতের অর্থনীতির বিস্তীর্ণ অংশে অধােগতি মেনে নেওয়া হয়েছিল। কারখানা উৎপাদন, বাণিজ্য, হােটেল, পরিবহণ, টেলি যােগাযােগ, টেলিভিশন সম্প্রচার, সড়ক ও আবাসনের মতাে নির্মাণ ক্ষেত্রের পাশাপাশি, কৃষিতেও সংকট মেনে নেওয়া হয়। এমনকি, শিল্প বাণিজ্য মন্ত্রকের প্রকাশিত জাতীয় পরিসংখ্যান দফতরের তথ্যে সারের উৎপাদনেও সংকট এবং অর্থনীতিতে চাহিদার সমস্যা ধরা পড়েছে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
যদিও কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যে অর্থনীতিকে চাঙা করতে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু সরকারের সেই সব পদক্ষেপের আগামী দিনে ফল প্রসব করতে না পারারই আশঙ্কা এখন বহুগুণ বেড়ে গেছে মূলত সৌদি আরবে তেলের পরিকাঠামােয় জঙ্গি হানার জেরে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা, টাকার দাম ডলারে তুলনায় পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা, তার জেরে মুদ্রাস্ফীতির ভ্রুকুটি- এসব মিলিয়ে ভারতের অর্থনীতির মন্দা আরও ঘনীভূত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
সব মিলিয়ে দেশে যে ভয়াবহআর্থিক সংকট ঘনিয়ে আসতে পারে, সেদিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ। যে আর্থিক মন্দার জালে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানাের পথ বার করা কার্যত কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে সরকারের পক্ষে।
প্রসঙ্গত, সৌদি আরবের সরকারি তেল সংস্থা ‘অ্যারামকো’তে ড্রোন হামলা ঘটেছে যার ফলে দেশের তেল উত্তোলন থেকে পরিশােধন গােটা পরিকাঠামাে ক্ষতিগ্রস্ত। এর ফলে কঁচা তেলের উৎপাদন কমে গেছে কয়েক শতাংশ, যার প্রভাব পড়বে ভারত সহ গােটা বিশ্বেই। কাঁচা তেল কেনার খরচ বাড়লে স্বাভাবিক নিয়মেই বাড়বে জ্বলানির এবং পেট্রোপণ্যের দাম।
এই আশঙ্কার বহিঃপ্রকাশ ঘটল মঙ্গলবার ভারতীয় শেয়ার বাজারে। দেশের অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষিতে ও আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশােধিত তেলের দাম বাড়ার আশঙ্কায় এদিন ভারতীয় শেয়ার বাজারে শেয়ার বেচার হিড়িক পড়ে যায় ফলে এক সময় শেয়ার বাজারে সূচক সেনসেক্স নিফটি যথাক্রমে নেমে যায় ৭০৪ এবং ২০৭ অঙ্ক। পরে অবশ্য দিনের শেষে বাজার বন্ধের সময় কিছুটা প্রাণ ফিরে পায় শেয়ার বাজার, মন্দার লােকসান কিছুটা সামলে নেয় সূচকগুলি। দিনের শেষে সেনসেক্স পড়ে ৬৪২ অঙ্ক এবং নিফটির পতন হয় ১৮৬ অঙ্ক।
কেন হঠাৎ এইঅবনমন? তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বাজার বিশেষজ্ঞদের মতামত, এমনিতেই ভারতীয় অর্থনীতির শ্লথ গতি নিয়ে উদ্বিগ্ন বাজার। তার উপর, সৌদি আরবের তেল শোধনাগারে ড্রোন হামলার জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশােধিত তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা। তার ফলে মার্কিন ডলারের তুলনায় দামের নিরিখে আরও পিছিয়ে পড়বে ভারতীয় টাকা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমান যে স্তরে আন্তর্জাতিক বাজারে টাকার দাম রয়েছে তাতে যদি আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশােধিত তেলের দাম ১ ডলারও বেড়ে যায়, সেক্ষেত্রে ভারত সরকারকে তেল আমদানির জন্য ১০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত গুণতে হবে।
ফলে এই ধাক্কা লাগবে সামগ্রিকভাবে ভারতীয় অর্থনতিতে, যার গতি গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই শ্লথ হওয়ার ইঙ্গিত বহন করছে। শেয়ার বাজারের আজকের লেনদেনের পরিমাণ বাদ দিলেও নরেন্দ্র মােদির দ্বিতীয় দফার সরকারের ১০০ দিনের মধ্যে বিনিয়ােগকারীদের সাড়ে বারাে লক্ষ কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে বাজার থেকে। ফলে ভারতীয় বাজারের উপর এই মুহূর্তে ভরসা রাখতে পারছেন না দেশীয় ও বিদেশি লগ্নিকারীরা।