অবসর গ্রহণের পর যেহেতু বয়স্ক নাগরিকদের আয়ের তেমন কোনও উৎস থাকে না, তাদের প্রধান ভরসা হয়ে দাঁড়ায় অবসর তহবিল। এই তহবিলের অর্থই তাঁরা সুবিধামতো ব্যবহার করে থাকেন। আবার এই টাকারই একটা অংশ বিনিয়োগও করেন, যাতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এবাবদ কিছু আর্থিক লাভ হয়। তবে বয়স্ক মানুষরা খুব একটা ঝুঁকি নিতে যেহেতু চান না- তাঁরা সেই স্কিমগুলিতেই বিনিয়োগ করেন, যেখান থেকে নিশ্চিত রিটার্ন পাওয়া সম্ভব।
সিনিয়র সিটিজেনদের কথা ভেবে পোস্ট অফিসে একটি স্কিম চালানো হয়, যাতে তাঁরা ভালো সুদ পেতে পারেন। এই প্রকল্পটির নাম সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম। পোস্ট অফিস সিনিয়র সিটিজেন স্কিম হল, ভারতের একটি সরকার সমর্থিত বিনিয়োগ প্রকল্প, যা প্রবীণ নাগরিকদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এই স্কিমের সুদ থেকেই যথেষ্ট পরিমাণে আর্থিক লাভ পাওয়া যায়। এটি ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সি ব্যক্তিদের সঞ্চয় বাড়াতে, একটি নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য বিকল্প হিসেবে প্রমাণিত।
পোস্ট অফিস সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম আকর্ষণীয় সুদ দেয়। বর্তমানে এর বার্ষিক ইন্টারেস্ট হল ৮.২%, যা ভারতের ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ। সুদ ত্রৈমাসিক চক্রবৃদ্ধি করা হয় এবং প্রতি তিন মাসে পরিশোধ করা হয়। অবসরপ্রাপ্তদের জন্য এটি নিশ্চিত আয়ের একটি পথ হিসাবে ইতিমধ্যেই আস্থা অর্জন করেছে। সরকারি স্কিম হওয়ার কারণে, সিনিয়র সিটিজেন পোস্ট অফিস স্কিম, মানসিক শান্তি প্রদান করে এবং বিনিয়োগের ঝুঁকিও কমায়।
পোস্ট অফিসের সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমের আওতায় যেমন রয়েছেন ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সিরা, তেমনি ৬০ বছরের কম বয়সি অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা যারা স্বেচ্ছাসেবী অবসর স্কিম (ভিআরএস) বা বরখাস্তের কারণে অবসরপ্রাপ্ত- তারাও এই স্কিম গ্রহণ করতে পারেন।
এই স্কিমের অ্যাকাউন্টগুলিতে সর্বনিম্ন আমানত ১০০০ টাকা এবং সর্বাধিক ৩০ লক্ষ টাকা৷ তবে অ্যাকাউন্টটি শুধুমাত্র স্ত্রীর সাথে ব্যক্তিগতভাবে বা যৌথভাবে খোলা যেতে পারে। ন্যুনতম ৫ বছরের জন্য করতে হবে। তারপর, প্রতি ৩ বছরের জন্য আরও ৩ বছর করে মেয়াদ বাড়ানোর বিকল্প রয়েছে।
পোস্ট অফিসের সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমটি, আয়কর আইনের ধারা ৮০সি-এর অধীনে কর ছাড়ের সুবিধা দেয়। মূলধন সুরক্ষা এবং সময়মতো সুদ পাওয়ার ক্ষেত্রে এটি নিশ্চিত একটি প্রকল্প।
কেউ চাইলে এই স্কিম গ্রহণের ১ বছর পরেই বন্ধ করতে পারেন, যদিও মেয়াদপূর্তির আগে বন্ধ হয়ে গেলে জরিমানা প্রযোজ্য হবে। অ্যাকাউন্টধারীদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স পাওয়ার জন্য একজন সুবিধাভোগীকে মনোনীত করার সুবিধা আছে। এছাড়াও অনুমোদিত ব্যাঙ্ক এবং পোস্ট অফিসগুলির মধ্যে, অ্যাকাউন্টগুলি স্থানান্তর করা যেতে পারে। আপনি সিনিয়র সিটিজেন সেভিং স্কিমের অধীনে একাধিক অ্যাকাউন্টও খুলতে পারেন, শুধু খেয়াল রাখবেন জমাকৃত মোট টাকার সর্বোচ্চ সীমা ৩০ লক্ষের বেশি যেন না হয়। এছাড়া একই ক্যালেন্ডার মাসের মধ্যে একই জমা শাখায় একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলা নিষিদ্ধ।
অতএব আপনার নিকটতম পোস্ট অফিস শাখায় যান। পোস্ট অফিস সিনিয়র সিটিজেন স্কিম আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করুন এবং পূরণ করুন। আপনি পোস্ট অফিসে ফর্মটি পেতে পারেন অথবা ইন্ডিয়া পোস্ট ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোডও করে নিতে পারেন।