সিনেমায় চোর-পুলিশের লুকোচুরির খেলা আমরা অনেকেই দেখেছি। কিন্তু বাস্তবে দুষ্কৃতী ও পুলিশের লড়াইটা ঠিক কেমন? এরকমই একটি বাস্তব কাহিনী চলচ্চিত্রে ফুটে উঠেছে ‘বহুরূপী’ সিনেমাতে। পুলিশদের নিয়ে তৈরি সেই সিনেমা ঠিক কেমন হয়েছে? তার কৌতূহল সামলে রাখতে পারলেন না খোদ পুলিশ কর্তারাই। সেজন্য ছবিটি দেখতে হাজির হলেন রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তারাই! তাঁরা শুধু সিনেমা দেখলেন না, সেই সঙ্গে উচ্ছ্বসিত প্রশংসাও করলেন। এমনই ঘটনা ঘটল বুধবার। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায় পরিচালিত সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বহুরূপী’ সিনেমার বিশেষ স্ক্রিনিং অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেশ কিছু আইপিএস অফিসার।
‘উইন্ডোজ’ প্রযোজনা সংস্থার স্টুডিওতে একটি অডিটোরিয়ামে এই ছবির স্ক্রিনিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই বিশেষ স্ক্রিনিংয়ে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের বহু শীর্ষ আধিকারিক। উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার, প্রাক্তন রাজ্য নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং বর্তমানে রাজ্য সরকারে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সিভিল সার্ভিসেস স্টাডি সেন্টারের ডিরেক্টর সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ, রাজ্য পুলিশ রিক্রুট্মেন্ট বোর্ডের প্রধান নীরজ কুমার সিং, রাজ্য পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের প্রধান সচিব রাজেশ কুমার, ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার অলোক রাজোরিয়া, ডেপুটি কমিশনার হেডকোয়ার্টার গণেশ বিশ্বাস, ডিআইজি (নিরাপত্তা) সুখেন্দু হীরা, হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার হেডকোয়ার্টার শ্যামল সামন্ত প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন পুলিশ অফিসার চিত্ত দে, যাঁর বাস্তব জীবনের উপর নির্মিত ‘বহুরূপী’ সিনেমার পুলিশ অফিসার সুমন্ত ঘোষাল। যে চরিত্রটির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন টলিউড অভিনেতা আবির চট্টোপাধ্যায়।
ছবিটির পরিচালক নন্দিতা রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ‘দৈনিক স্টেটসম্যান’-এর প্রতিনিধি। নন্দিতা জানান, পুলিশ কর্তারা সিনেমাটি দেখে মুগ্ধ। তাঁর বক্তব্য, ‘ওঁরা (পুলিশ আধিকারিকরা) উচ্ছ্বসিত। ওঁরা জানিয়েছেন, পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় আবিরের অভিনয় অত্যন্ত সাবলীল। দেখে মনে হচ্ছিল যেন সত্যিকারের পুলিশ অফিসার। ও (আবির) নিজেও উপস্থিত ছিলেন, ওকে সরাসরি প্রশংসা করেন ওঁরা।’ নন্দিতা আরও বলেন, সিনেমার ডিটেইলিং-এর উপর বেশ জোর দেওয়া হয়েছিল। যা ওঁদের বেশ পছন্দ হয়েছে। ‘ওঁরা বলছিলেন, অন্যান্য সিনেমায় পুলিশের উর্দি, ব্যাজ ইত্যাদির ব্যাপারে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ভুলভাবে লাগানো হয়, অনেক ত্রুটি থাকে। কিন্তু এই সিনেমায় ওঁরা কেউ একটাও ভুল বের করতে পারেননি, যাতে খুব খুশি হয়েছেন তাঁরা।’ আরও একটা ব্যাপারে তাঁরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন বলে জানান নন্দিতা। ‘এই সিনেমায় পুলিশের পারিবারিক জীবনও উঠে এসেছে। যেটা অফিসারদের খুব ভালো লেগেছে। তাঁদের কথা, ওঁরা যে মানুষ বা ওঁদেরও একটা পরিবার রয়েছে, সেই ব্যাপারটা ভুলে যায় সবাই। আমরা যে পুলিশের পরিবারের দিকটাকে এভাবে ফুটিয়ে তুলেছি, সেটা ওঁদের খুব ভালো লেগেছে।’
প্রসঙ্গত, ‘বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়ান’ এই স্লোগানটি বর্তমানে টলিউডে খুবই প্রচলিত হয়েছে। দর্শকের সংখ্যা কমছে, এমনটাই অভিযোগ প্রযোজক-পরিচালকদের। বলিউডের বিরাট বাজেটের ‘ধামাকাদার’ ছবির সামনে হার মানছে টলিউড। এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে অভিযোগ-অভিমানের শেষ নেই। এমন অবস্থাতেই ফের বাংলা সিনেমার দর্শকদের হলমুখী করলেন শিবপ্রসাদ-নন্দিতা জুটি। ভাবপ্রবণ বাঙালির আবেগ অনুভূতিকে জাগিয়ে তুলতে তাঁদের জুড়ি মেলা ভার। ‘সিংহম এগেইন’ বা ‘ভুলভুলাইয়া ৩’-র মতো ব্লকবাস্টার সিনেমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলা বহুরূপী প্রমাণ করে দিল, ভালো সিনেমা এখনো দর্শকদের টানে।