• facebook
  • twitter
Friday, 1 November, 2024

হরর কমেডি বাণিজ্যের নয়া সমীকরণ

হরর কমেডি এই মুহূর্তে বেশ ট্রেন্ডিং। এই বছর, ধারাটি বিশেষভাবে বজায় ছিল ‘স্ত্রী ২’ এবং ‘মুঞ্জিয়া’ ছবির দৌলতে। প্রশ্ন হচ্ছে ‘ভুল ভুলাইয়া ৩’-এর মতো ছবি কি বাণিজ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হবে?

ভুলভুলাইয়া ৩-র একটি পোস্টার চিত্র।

দীপাবলিতে মুক্তি পেল ‘ভুলভুলাইয়া ৩’। ছবির শুটিংয়ে মাস কয়েক আগে হাওড়া ব্রিজ থেকে ভিক্টোরিয়া চত্বর দাপিয়ে বেড়িয়ে ছিলেন কার্তিক আরিয়ান। সদ্য ছবিটির প্রচারে আবার কলতকাতায় ঘুরে গেলেন কার্তিক আরিয়ান ও বিদ্যা বালান। ছবিতে মাধুরী দীক্ষিত এবং তৃপ্তি দিমরি ছাড়াও দেখা যাবে এক ঝাঁক বাঙালি অভিনেতাকে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম কাঞ্চন মল্লিক।

এই ছবি নিয়ে সব থেকে চাঞ্চল্যকর খবরটি হল, অগ্রিম বুকিংয়েই নাকি ম্যজিক করেছে ‘ভুলভুলাইয়া ৩’ যা ছবির বাম্পার ওপেনিংয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার ব্যবসা দিয়ে শুরু হবে ছবিটি, এমনই মনে করা হচ্ছে।

তবে ভুলে গেলে চলবে না, এই হরর কমেডি জনর কিন্তু আগেও মানুষ বেশ পছন্দ করেছে। একটু পিছন ফিরে তাকালেই তার প্রমাণ মিলবে। ‘স্ত্রী ২’ বক্স অফিস থেকে সংগ্রহ করেছিল ৬২৭ কোটি টাকা অর্থাৎ ৬.২৭ বিলিয়ন। ‘স্ত্রী ২’ শুধুমাত্র বলিউডের সবচেয়ে বড় হরর কমেডি নয়, এটি এই ঘরানার যে-কোনও ছবির নিরিখে হিন্দিতে সর্বকালের সর্বোচ্চ আয় করা ছবিও। মাত্র এক বছর আগে জওয়ান এই রেকর্ড তৈরি করেছিল ঠিকই কিন্তু ‘স্ত্রী ২’ এটিকে একটি ভিন্ন স্তরে নিয়ে গেছে। অমর কৌশিক নির্মিত, রাজকুমার রাও ও শ্রদ্ধা কাপুরের জুটির জনপ্রিয়তা, ‘স্ত্রী ২’ ছবিটিকে একটি হিট ব্র্যান্ড হিসাবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।

‘স্ত্রী ২’-এর আগে সবচেয়ে সফল হরর কমেডি বলতে এর পরেই ‘গোলমাল এগেইন’-এর নামই উঠে আসে। এই ছবির বক্স অফিস কালেকশন ছিল ২০৫.৭০ কোটি মানে ২.০৬ বিলিয়ন। রোহিত শেট্টির ছবিটি উচ্চমানের কমেডির জন্যই সমাদর পায়।

‘ভুল ভুলাইয়া ২’ বক্স অফিসে সংগ্রহ করেছিল ১৮৬ কোটি অর্থাৎ ১.৮৬ বিলিয়ন। মহামারী পরবর্তী সময়ে, ‘সূর্যবংশী’-র পর ‘ভুল ভুলাইয়া ২’ ছবিটিই কিন্তু দর্শকদের প্রেক্ষাগৃহে ফিরিয়ে এনেছিল। অনেকে ভেবেছিলেন যে, নতুন অভিনেতা-পরিচালক জুটি (কার্তিক আরিয়ান এবং আনিস বানজমি) অক্ষয় কুমার এবং প্রিয়দর্শনের তৈরি আকর্ষণের ম্যাজিক হয়তো ধরে রাখতে পারবে না। কিন্তু এই সিক্যুয়েলের নিজস্ব আবেদন ছিল।

বক্স অফিস থেকে ১৩০ কোটি অর্থাৎ ১.৩ বিলিয়ন টাকা সংগ্রহ করে ‘স্ত্রী’। হরর এবং কমেডির নিখুঁত সংমিশ্রণ, ‘স্ত্রী’-এর জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখেই, এর সিক্যুয়েলটি তৈরি হয়।

‘মুঞ্জিয়ার’ বক্স অফিস কালেকশন ১০৭.৪৮ কোটি বা ১.০৭ বিলিয়ন। হরর কমেডি ঘরানার ছবির যে একটা নির্দিষ্ট দর্শক রয়েছে ‘মুঞ্জিয়ার’ দৃঢ়ভাবে তা প্রতিষ্ঠিত করেছে। কোনও তারকা না থাকা সত্ত্বেও, স্বল্প বাজেটের ছবিটি দর্শকদের মুগ্ধ করে এবং ১০০ কোটি টাকার ক্লাবের অন্তর্ভুক্ত হয়।

‘ভেড়িয়া’র বক্স অফিস বাবদ সংগ্রহ ছিল ৭০ কোটি টাকা বা ৭০০ মিলিয়ন। যদিও ছবির মান হিসাবে ‘ভেড়িয়া’ আশানুরূপ প্রশংসা পায়নি। বরুণ ধাওয়ান-কৃতি শ্যানন অভিনীত ‘ভেড়িয়া’তে উৎকৃষ্ট মানের ভিএফএক্স-এর ব্যবহার থাকলেও, বক্স অফিসে তেমন সাড়া ফেলেনি।

অন্যদিকে ‘ভুল ভুলাইয়া’ সংগ্রহ করেছিল ৫০ কোটি টাকা। প্রকৃতপক্ষে এই ছবিটি হল, হরর কমেডি ঘরানার পথিকৃৎ। প্রিয়দর্শন পরিচালিত অক্ষয় কুমার অভিনীত একটি মালয়ালম ছবির রিমেক ছিল এই ছবি। বিদ্যা বালানকেও প্রথমবার একটি অদ্ভূতুড়ে চরিত্রে দেখেছিলেন দর্শক।

৪০ কোটি টাকা বা ৪০০ মিলিয়ন ঘরে তুলেছিল ‘ভূতনাথ রিটার্নস’। এই গল্পটিতে ভূতনাথ যেন আমাদের শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ভূতগুলির মতো নিরীহ ও বন্ধুভাবাপন্ন।‘ভূতনাথ রিটার্নস’-এ অমিতাভ বচ্চন বন্ধু রূপে ফিরে আসেন ছোটদের বিপদ থেকে উদ্ধার করার দায়িত্ব নিয়ে। শিশুদের কথা ভেবে তৈরি হলেও, ভূতনাথ ছোট-বড় সবার মন কেড়ে নিয়েছিলেন। এটি বাণিজ্যিকভাবেও ভালো করেছে, ফলে আবারও এর সিক্যুয়েলের প্রত্যাশা করছে মানুষ।

‘গো গোয়া গন’ বক্স অফিসে সংগ্রহ করেছিল ২৫.১৬ কোটি টাকা অর্থাৎ ২৫১.৬ মিলিয়ন। এটি বলিউডের একমাত্র জম্বি ছবি। রাজ ও ডিকে-র ‘গো গোয়া গন’ মূলধারার ছবি হিসেবে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল এবং ভালো সাফল্যও পেয়েছিল। কুণাল খেমু, বীর দাস, পূজা গুপ্তা এবং আনন্দ তিওয়ারি অভিনীত এই ছবিতে, সাইফ আলি খান আলাদা করে নজর কেড়েছিলেন।

‘ভূতনাথ’-এর বক্স অফিস থেকে সংগ্রহ হয়েছিল ২৪ কোটি টাকা বা ২৪০ মিলিয়ন। ছবির কেন্দ্রে রয়েছে ‘ভূত’। চলচ্চিত্রটি প্রাথমিকভাবে পারিবারিক ছবি হিসেবেই তৈরি হয়েছিল। ছোটদের কথা মাথায় রেখে হরর এলিমেন্টকে ন্যূনতম রাখা হয়েছিল ছবিতে। অমিতাভ বচ্চন এমনই একজন ভূতের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, যিনি রেগে গেলেও স্নেহের ভাগটা তার চরিত্রে বেশি পরিমাণে রাখা হয়েছিল। ছবিটি ড্রামা এবং ইমোশনের একটি ভালো মিশ্রণ হিসেবে ধরা দিয়েছিল।

এই ছবিগুলির জনপ্রিয়তা কিন্তু প্রমাণ করে যে, নিখাদ হরর ছবির পরিবর্তে মানুষ বিনোদনের প্যাকেজে ভূত দেখতেই পছন্দ করেন। সুতরাং ‘ভুল ভুলাইয়া ৩’ যে উৎসবের বাজারে সবার মন কাড়বে, এটাই আশা করা যাচ্ছে।