৮৪’র দাঙ্গায় তাঁর পরিবারের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানালেন তাপসী

একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে, বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাপসী পান্নু তাঁর পরিবারের অতীতের কথা তুলে ধরেছেন। ভারতে ১৯৮৪ সালের অশান্ত শিখ বিরোধী দাঙ্গার সময় তাঁদের অভিজ্ঞতার উপর আলোকপাত করেছেন। যদিও পান্নু নিজেই এই দুঃখজনক ঘটনার পরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবাকে সেই সময়ের ভয়াবহ ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার কথা তাঁকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছে। আর সেই কথা তিনি সাক্ষাৎকারে শুনিয়েছেন।

যদিও পান্নুর বাবা-মা ১৯৮৪ সালে গাঁটছড়া বাঁধেন। কিন্তু তাঁর বাবা ইতিমধ্যে দাঙ্গার বিশৃঙ্খলা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। এই অস্বস্তিকর স্মৃতির উল্লেখ করে পান্নু বলেছেন, “যদিও আমার বাবা-মা ‘৮৬ সালে বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু দাঙ্গা হয়েছিল তার আগে। সেই সহিংসতার সময় আমার বাবা শক্তিনগরে ছিলেন। এবং তিনি সেই ভয়ঙ্কর ঘটনা খুব খুব কাছ থেকে অনুভব করেছিলেন। দাঙ্গাকারীরা গাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং আরও অনেক ক্ষতি করে। যাই হোক, আমাদের পরিবার ভাগ্যবান কয়েকজনের মধ্যে ছিল, যারা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি। অন্যদিকে, আমার মা সেসময় যমুনা পাড় এলাকায় ছিলেন। সৌভাগ্যবশত, তিনি সরাসরি দাঙ্গার সম্মুখীন হননি।”

সেই সময়ের আতঙ্ক সত্ত্বেও, তাপসী পান্নু উল্লেখ করেছেন যে, তাঁর বাবা-মা এই ঘটনাগুলি সম্পর্কে খুব কম কথাই বলেছিলেন। তাঁরা পরামর্শ দেন যে, তাঁরা অতীতের সেই ঘটনা নিয়ে পড়ে না থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পছন্দ করেন। তাপসী বলেন, “তাঁরা কখনই আমার সঙ্গে এবিষয়ে খুব বেশি আলোচনা করেন নি। যখন তাঁরা এটি উত্থাপন করেন, সেটি এমনভাবে কখনই মনে হয়নি যে, একটি দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত চিহ্ন রেখে গেছে।”


অভিনেত্রী পান্নু সাক্ষাৎকারে তাঁর প্রাথমিক জীবনের নানা স্মৃতির কথাও উল্লেখ করেছেন। তাঁর পরিবার যে আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছিল, তা তিনি উল্লেখ করেন। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা, পান্নুর লালন-পালনে সতর্ক বাজেট এবং সীমিত সম্পদ ছিল। তিনি স্মরণ করেন, “অর্থ সমস্যা সবসময় একটি উদ্বেগ সৃষ্টি করত। আমি পকেট মানি পাইনি। পরিবর্তে, আমাদের একটি আঁটোসাঁটো বাজেট ছিল। আমার মা বছরে একবার বা দুবার আমাকে নতুন জামা-কাপড় কিনে দিতেন। সেটা আমার জন্মদিন বা দীপাবলিতে। আমি সেই শিশু ছিলাম যে, আমি যা চাই তা না পেলে দোকানে গিয়ে ক্ষেপে যেতাম।”

প্রসঙ্গত এই আর্থিক সীমাবদ্ধতা পান্নুর উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে উস্কে দিয়েছিল। তিনি সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি কঠোর পরিশ্রম করতে এবং আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। আমি এমন একটি দিন চেয়েছিলাম, যেদিন আমাকে মূল্য ট্যাগ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।”

‘পিঙ্ক’, ‘থাপ্পাড’, এবং ‘রশ্মি রকেট’-এর মতো সমালোচকদের প্রশংসিত চলচ্চিত্রগুলিতে অভিনয় করার মাধ্যমে পান্নুর কর্মজীবনের প্রতি তাঁর আত্মত্যাগের জন্য অর্থ তাঁকে প্রদান করা হয়েছে। যদিও তিনি ২০১৩ সালে ‘চশমে বদ্দুর’ দিয়ে তাঁর বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। এটি ‘বেবি’ এবং ‘পিঙ্ক’-এর মতো ছবির ন্যায় ভূমিকা ছিল, যা সত্যিই অভিনয় শিল্পে তাঁর স্থানকে শক্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছিল।

পান্নু তাঁর কথোপকথনে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তাঁর সাফল্য কেবল সম্পদ সঞ্চয় করা নয়, বরং সমৃদ্ধ এবং পরিপূর্ণভাবে জীবনযাপন করা। পান্নু বলেন, “আমি আমার অর্থের জন্য কঠোর পরিশ্রম করি, এবং আমি বেঁচে থাকতেই সেই উপার্জন উপভোগ করতে চাই। আমি ধনী হওয়ার দিকে মনোনিবেশ করি না; পরিবর্তে, আমি সমৃদ্ধভাবে বাঁচতে চাই। আমি যে সাফল্য অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি, তার বেশিরভাগই নিজের চেষ্টায়।”

তাপসী পান্নুর জীবনের লড়াইয়ের এই গল্প শুধু ব্যক্তিগত স্থিতিস্থাপকতাই নয় বরং প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠার এবং জীবনের সুযোগগুলোকে কাজে লাগানোর একটি বিস্তৃত আখ্যানও প্রতিফলিত করে। শৈশবে আর্থিক অনটনের মধ্যে বেড়ে ওঠা  থেকে বলিউডে একজন বিশিষ্ট অভিনেত্রী হওয়ার জন্য তাঁর এই দৌড় অনুপ্রেরণাদায়ক এবং তাঁর শক্তি ও দৃঢ়তার প্রমাণ রাখে।