স্টার থিয়েটারে চলছে চৈতন্যলীলা। নাম ভূমিকায় নটী বিনোদিনী। নাটক দেখতে দেখতে দু’বার ভাবসমাধি হয়েছিল ঠাকুর রামকৃষ্ণের। নাটক শেষে ঠাকুর গিয়ে বিনোদিনীকে বলেছিলেন, ‘তোর চৈতন্য হোক’ আর বলেছিলেন ‘থেটারে লোকশিক্ষে হয়’। এই দুটি বাক্য বাংলা নাটকে অমোঘ হয়ে ইতিহাসে জায়গা পেয়েছিল। বিনোদিনীর কথা বলতে গেলে আমাদের বারবার ফিরে যেতে হয় অতীত কলকাতায়। নাটক সর্বস্ব জীবনে বাংলার রঙ্গমঞ্চের শ্রেষ্ঠ নটীর সাধ ছিল স্টার থিয়েটার হোক তাঁর নামে। কিন্তু তখন এই স্বপ্ন তাঁর পূরণ হয়নি। ১৪১ বছর পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সদিচ্ছায় স্টার থিয়েটারের নাম বদলে হল ‘বিনোদিনী থিয়েটার’। আর এই সন্ধিক্ষণেই মুক্তি পেতে চলেছে রামকমল মুখ্যোপাধ্যায়ের ছবি ‘বিনোদিনী’। নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন রুক্মিণী মৈত্র।
নন্দন ৩-এ হয়ে গেল বিনোদিনী ছবির ট্রেলার লঞ্চ। কিন্তু ট্রেলার লঞ্চ অনুষ্ঠানকে ছাপিয়ে গেল দেবের উপস্থিতি। সবাইকে চমকে দিয়ে তিনি রুক্মিণীর সঙ্গে যখন নন্দন ৩-এ ঢুকলেন তখন উচ্ছাসে ফেটে পড়ল গোটা প্রেক্ষাগৃহ। আর এই আনন্দ খুব ভালোভাবেই উপভোগ করলেন ছবির সঙ্গে যুক্ত সকলেই। দীর্ঘ সময় রিসার্চ করার পর রামকমল মুখ্যোপাধ্যায় ছবিটি তৈরি করতে পেরেছেন। আর বিনোদিনীর ভূমিকায় রুক্মিণীর পরিশ্রমও কম ছিল না। দিনের পর দিন অধ্যবসায় ও যত্নে বিনোদিনী হয়ে উঠেছেন তিনি। তাই যখন পর্দায় দেখানো হচ্ছে বিনোদিনীর ঝলক তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না অভিনেত্রী। ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন। কিন্তু চমকটা তখনও বাকি ছিল। পাশে এসে চোখের জল মুছিয়ে দিলেন দেব। যা এই অনুষ্ঠানের সেরা মুহূর্ত হয়ে রইল।
ট্রেলার লঞ্চের পর দেব জানালেন, নারী কেন্দ্রিক ছবির সংখ্যা বাংলায় ভীষণভাবেই কম। সেই জায়গায় এই ছবি ব্যতিক্রমী। কারণ প্রযোজকরা সবসময়েই স্টার নিয়েই ছবি করতে চান। সেই দিক থেকে এই ছবির আরেক প্রযোজক (প্রমোদ ফ্লিমস)-কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। আর ট্রেলারে রুক্মিণীকে দেখে দেব একটা কথাই জানালেন, তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম রুক্মিণী মৈত্র।
ছবির নটী বিনোদিনী রুক্মিণী এখনও ঘোর কাটাতে পারছেন না। তিনি জানালেন, এই চরিত্রটা তাঁর কাছে স্বপ্নের মতো ছিল। ৫ বছর ধরে তিনি এই চরিত্রটার সঙ্গেই থেকেছেন। এখন দর্শক যদি তাঁর কাজকে পছন্দ করেন, তাহলেই তাঁর পরিশ্রম সার্থক। ২৩ তারিখ মুক্তি পাচ্ছে বিনোদিনী। বহুমুখী অভিনেত্রীর বর্ণময় উজ্জ্বল অধ্যায়ের সাক্ষী হতে দর্শকরা কতটা হলমুখী হয়, সেটাই দেখার।
গত পাঁচ বছর ধরে বিনোদিনীর সঙ্গে যাপন করে কী শিখলেন?
রুক্মিণী: ধৈর্য্য আর জেদ কীভাবে ধরে রাখতে হয় শিখিয়েছে। আমার জীবনের অনেক ধারণা বদলে দিয়েছে এই চরিত্র । পরিচালক রামকমলকে ধন্যবাদ আমাকে এই চরিত্রে নেওয়ার জন্য।
বিনোদিনীর একটা স্বপ্ন পূরণ হতে ১৪১ বছর লেগে গেল?
রুক্মিণী: এই ধন্যবাদ টা পুরোটাই মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর। আমি এই কাজটার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে নিজেকে খুব ধন্য মনে করছি।
দেব কি সত্যি অভিনয়ে একমাত্র আপনাকেই প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন?
রুক্মিণী: (হেসে) দেব খুব দয়ালু। দেব এন্টারটেইনমেন্ট আর প্রমোদ ফিল্ম আমাদের পাশে না এলে রামকমল আর আমার এই স্বপ্ন সফল হতো না। অনেক প্রযোজক এসেছে। ছবি করব বলে কথা দিয়ে চলে গেছে। তাই বলি দেব খুব সুইট। তাই এই কথাটা বলেছে।
আপনি কি মনে করেন টলিউডের ট্রেন্ড সেটার দেব?
রুক্মিণী: আমি কাজটা ভালোবেসে করি। প্যাশন থেকে করি। এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলাতেই হবে। আজ ‘খাদান’ তার সব থেকে বড় উদাহরণ। ‘খাদান’-এর সাফল্যের পর অনেক বাক্স-বন্দি চিত্রনাট্য আবার ধুলো ঝেড়ে বেরোচ্ছে।
আসলে মহিলাকেন্দ্রিক ছবি হলে প্রযোজক পাওয়া যায় না। আমি এটা বিশ্বাস করি না। ছবি ভালো হলে মানুষ তা দেখতে হলে আসবে। আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে আমি আনেক সিঙ্গল স্ক্রিন আবার রি-ওপেন করাতে চাই। বাংলা ছবির বিজনেস আমাদের আরও বাড়াতে হবে।