চোদ্দ বছর পর বাংলা ছবিতে ফিরছেন শর্মিলা ঠাকুর। এ যেন ঘরে ফেরা। সঙ্গী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। সুমন ঘোষের পরিচালনায় ‘পুরাতন’ ছবিটি প্রযোজনা করছেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা নিজেই। সাবলীল অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনার দায়িত্বও ভালোই সামলেছেন তিনি। শর্মিলা ঠাকুরের কাছ থেকে প্রযোজক হিসেবে মিলেছে ভালো নম্বরও। উপরি শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে অভিনয়।
প্রশ্ন: বাংলা বছরের শুরুতেই আসছে ‘পুরাতন’। আর এই ‘পুরাতন’কে ঘিরে তোমার অনেক আশা। কী বলবে?
ঋতুপর্ণা: বাংলা ক্যালেন্ডার অনেক পুরোনো। আর পুরাতন মানেই একটা নস্টালজিয়া। সবাই চায়, নতুন রূপে অতীতকে দেখতে। নববর্ষের মধ্যে ‘পুরাতন’কে তাই নতুন করে পাওয়া। ছবিটা যখন শুরু করেছিলাম তখন আমার সব কিছুই ঠিক ছিল। আফসোস একটাই, মাকে দেখাতে পারলাম না ছবিটা। মা জানতেন সব কিছুই। ছবিটা বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালেও প্রশংসা পেয়েছে। সেই সব গল্প মাকেও বলেছিলাম। সেখানকার সব ছবি মা দেখেওছিলেন। শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে কথা হয়েছিল। এখন যখন ছবিটা রিলিজ করছে মাকে সঙ্গে নিয়ে আর দেখতে পারবো না এটা খুব মিস করছি।
প্রশ্ন: ১৪ বছর পর বাংলা ছবিতে ফিরছেন শর্মিলা ঠাকুর। কী বলবে?
ঋতুপর্ণা: আমার জীবনে চোদ্দ বছরের একটা বিশেষ ভূমিকা আছে (হাসি)। ১৪ বছর পরে ফিরেছিল একটা জুটি। ছবি করেছিল। দারুণ হিট হয়েছিল সেই ছবি। শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে আমার একটা অনুষ্ঠানে দেখা হয়। কথায় কথায় জানিয়েছিলেন ভালো গল্প পেলে বাংলায় কাজ করবেন। কথাটা আমাকে খুবই টাচ করেছিল। পরিচালক সুমন ঘোষের সঙ্গে ছবি নিয়ে কথা হওয়ার সময় জানাই বিষয়টা। তার পরে বাকিটা ইতিহাস।
প্রশ্ন: তোমার সংস্থা ‘ভাবনা আজ ও কাল’ এই ছবির প্রডিউসার। আর তুমি শুধু অভিনেতাই নও এই ছবির প্রযোজকও। এটা বোধহয় তোমার জীবনের একটা অন্যতম ল্যান্ডমার্ক।
ঋতুপর্ণা: অবশ্যই আমার ‘ভাবনা আজ ও কাল’ নামটার মধ্যে দিয়েই আমি আমার কাজকে প্রতিস্থাপিত করতে চেয়েছি। ভালো কাজ করার খিদে আমার সবসময়। সুমন যখন প্রথমে আমার কাছে এই গল্পটা নিয়ে আসে। আমি প্রথমেই বলেছিলাম এই ছবিটা আমি করব। সব দায়-দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছিলাম। এই ছবির সঙ্গে আমার অনেক কিছু জুড়ে আছে।
প্রশ্ন: মা-মেয়ের গল্প। মা শর্মিলা ঠাকুর। ছবিটা করে কী শিখলে তাঁর থেকে?
ঋতুপর্ণা: অনেক কিছু। সম্পর্ককে কীভাবে ধরে রাখতে হয়, না-বলা কথা কীভাবে বুঝে নিতে হয়— এমন অনেক কিছুই শিখতে পেরেছি। মায়ের যখন খুব শরীর খারাপ। বারবার উনি আমাকে বলতেন, ‘মায়ের কাছে গিয়ে তোমার মনের কথাগুলো বলো। উনি ঠিক শুনবেন। তোমার মনটাও হালকা হবে।’ উনিও তো মা। আমি অনেক কিছুই শিখেছি ওনার কাছ থেকে।
ওরকম বড় মাপের একজন অভিনেত্রী। বিরাট বড় পরিবার। তাও ইউনিটের সকলের সঙ্গে এতো ভালো ব্যবহার করতেন যে কী বলব! এটা সত্যিই শেখার মতো।
প্রশ্ন: এই ছবিতে তোমার বিপরীতে রয়েছেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। তিনি অভিনেত্রী ঋতুপর্ণার থেকেও বেশি প্রশংসা করেছেন প্রযোজক ঋতুপর্ণাকে।
ঋতুপর্ণা: ইন্দ্রনীল একজন খুব ভালো মানুষ এবং কাজের ব্যাপারে খুবই সচেতন। ও যে চরিত্রে অভিনয় করে তাতে ওর বেস্টটা সবসময় দেওয়ার চেষ্টা করে। অনেকগুলো ছবিতে তো কাজ করলাম আমরা একসঙ্গে। আমারও মনে হয়েছে ওর অভিনয়ের জায়গাটা খুব সুন্দর করে বেরিয়ে এসেছে এই ছবিতে। এই ছবির চরিত্রটা তাদের মধ্যে অন্যতম। এর সাক্ষী থাকলাম আমিও।
প্রশ্ন: প্রযোজক হিসেবে হল পাওয়া নিয়ে সমস্যা পোহাতে হয়েছে?
ঋতুপর্ণা: সে অল্পবিস্তর সকলকেই এই সমস্যায় পড়তে হয়। তাছাড়া এখন কম্পিটিশন বেশি। তাই হল পেতে সমস্যা হয়, তবে ডিস্ট্রিবিউশন করতে হয়, তাছাড়া ভালো কাজ হলে মানুষ দেখেন।
প্রশ্ন: সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বাণিজ্যিক ছবি ভালো ব্যবসা করেছে। তোমার ছবি নিয়ে কতটা আশাবাদী?
ঋতুপর্ণা: প্রযোজক হিসেবে অল্প জ্ঞান। অনেক বড়বড় প্রযোজনা সংস্থা আছে। তারা ভালো কাজ করে। তাদের কাছে আমি কিছুই নই। তবে বাণিজ্যিক সাফল্যের থেকে সৃষ্টিশীলতাকেই প্রাধান্য দেব।
প্রশ্ন: অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে কিভাবে প্রাসঙ্গিক রাখতে চাও?
ঋতুপর্ণা: প্রতিদিন মনে করি অভিনেত্রী হিসেবে এখনো অনেক কিছু এক্সপ্লোর করার বাকি আছে আমার। সেই কারণেই কাজ করার খিদেটাই নিজেকে প্রাসঙ্গিক রাখে।
প্রশ্ন: এই ছবির শুটিং মেঘালয়ে কেন?
ঋতুপর্ণা : মেঘালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অন্যভাবে এক্সপ্লোর করেছি এই ছবির মধ্যে দিয়ে। ওখানকার কেভের মধ্যে গিয়ে শুট করেছি। আগে কোনো বাংলা ছবির এরকম জায়গায় শুটিং হয়নি। তৈরি করে রাখা কোনো সেটে নয়, লাইভ লোকেশনে ছবিটার শুটিং করেছি। এই ছবির মধ্যে দিয়ে মেঘালয়ের অসাধারণ কিছু প্রাকৃতিক দৃশ্য দর্শকদের সামনে তুলে ধরেছি।
প্রশ্ন: মুম্বই ফেস্টিভ্যালে ছবিটা যখন দেখানো হয়েছিল তখন শর্মিলা ঠাকুরের পুরো পরিবার— মানে ছেলে, মেয়ে সবাই দেখতে এসেছিলেন?
ঋতুপর্ণা: হ্যাঁ একদম। সইফ ও সোহা দু’জনেই খুব মন দিয়ে দেখেছে। সইফ ছবিটা দেখতে দেখতে বারবারই আমাকে জিজ্ঞেস করেছে লোকেশনগুলো কোথায় ছিল। আম্মার কাজ দেখায় তাদের ভীষণ আগ্রহ ছিল। কারণ এতদিন পরে আম্মা আবার বাংলায় কাজ করছেন— ওদের কাছে এটা একটা বড় ব্যাপার ছিল।