• facebook
  • twitter
Saturday, 21 December, 2024

চিনার ঘেরা উপত্যকায় রহস্যের জট এবং ফেলুদা

ফেলুদা ফিরে এলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের নতুন সিরিজ ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর'-এর সুবাদে। সম্প্রতি বড় পর্দায় এটির একটি স্পেশাল স্ক্রিনিং হল। আপাতত হইচই প্ল্যাটফর্মে দেখা যাবে সিরিজটি। কেমন লাগল লিখছেন অবন্তী সিনহা।

নিজস্ব চিত্র

হইচই প্ল্যাটফর্মের ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’র অন্তর্গত ‘দার্জিলিং জমজমাট’-এর পর, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় ফেলুদা সিরিজ হল ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’। ফেলুদা, তোপশে এবং জটায়ুর ট্রায়ো মানেই সাহিত্যপ্রিয় বাঙালির আবেগকে উসকে দেওয়া। আর রহস্যমঞ্চটি যদি তৈরি হয় ভূস্বর্গ কাশ্মীরের পটভূমিকায়- তাহলে তো সেটা বাড়তি পাওনা।

১৯৮৭ সালে সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’ গল্পকে চিত্রনাট্যের স্বার্থে একটু আধটু পরিবর্ধন করেছেন এবং কিছু সাবপ্লট সংযোজন করেছেন সৃজিত। ফলে উঠে আসে সীমান্তের সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ, প্রতিবেশী দেশের টেররিস্ট কার্যকলাপের বিষয়। কিন্তু মূল গল্পটি একই থাকে- আবর্তিত হয় তিন প্রধান চরিত্র এবং অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের হত্যা রহস্যের জাল উন্মোচনকে ঘিরে। বিচারকের পারিবারিক এবং পেশাগত জীবনের ইতিহাস অনুসন্ধান করে যেখানে প্রতিশোধের একটি জটিল গল্পের পরত খুলতে থাকেন পিসি মিটার।

যেহেতু ভ্রমণ এবং রহস্য দুই-ই বাঙালির মজ্জাগত, ফলে এই সিরিজ বাড়তি উৎসাহ তৈরি করে। সিরিজে রহস্যঘন মুহূর্তও যেমন আছে, তেমনই রয়েছে কাশ্মীরের নয়নাভিরাম দৃশ্যের ব্যাকড্রপ। ক্যামেরা যথেচ্ছ স্বাধীনতা নিয়ে কখনও টপশটে তুলে এনেছে পিকচার পোস্টকার্ড উপত্যকার সবুজ গালিচা, কখনও তুষারশুভ্র হিমালয়। ডাল লেক থেকে সোনমার্গ, খিলনমার্গ, বা লিডার নদীর ধারের তাঁবু- প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন উপচে উঠেছে পর্দায়।

ফেলুদার চরিত্রে টোটা রায়চৌধুরী যেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নস্টালজিয়া ফিরিয়ে দেন। সত্যিই এমন সুদর্শন এবং বুদ্ধিদীপ্ত লুকই চিরকাল বাঙালির কল্পনায় ঠাঁই পেয়েছে ফেলুদাকে ঘিরে। একই রকমভাবে অনির্বাণ চক্রবর্তী জটায়ুর চরিত্রে বেশ খাপ খেয়ে যান।

প্ল্যানচেট, খুন এবং হিরের আংটি চুরি যাওয়া- সব মিলিয়ে উত্তেজনার পারদ চড়েছে। স্বভাবতই এই ‘হু ডান ইট’-এর খেলা বাঙালির মগজেও ছবির মধ্যভাগ থেকেই জায়গা করে নেয়। জট ছাড়িয়ে কেউ কেউ হয়তো আন্দাজ মিলিয়েও দেন শেষের আগেই। কিন্তু তা বলে তো আর দর্শককে দোষ দেওয়া যায় না, কারণ ফেলু মিত্তিরই তো আমাদের শিখিয়েছেন মগজাস্ত্রে শান দেওয়ার মন্ত্র!