নিশীথ সিংহ রায়
বাংলা সিনেমা ও টেলিভিশন দুনিয়ায় প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন প্রতিভার আগমন হচ্ছে৷ এদের মধ্যে আনকেই তাদের অভিনয়গুণে দর্শক মনে একটা আলাদা জায়গা করে নিদ্দে৷ দর্শকদের ঘরের লোক হয়ে উঠেছে এদের অনেকেই৷ এদের অভিনয় পারদর্শিতার জোরে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন বুঝিয়ে দিয়েছে তারা অনেক লম্বা দৌড়ের জন্য প্রস্তুত৷ এরকম একজন অভিনেতার নাম ইতিমধ্যেই টালিগদের আনাচে কানাচে আলোড়িত হচ্ছে৷ আজ তাকে নিয়েই এই মাক্ষাৎকারমূলক প্রতিবেদন৷
আগে থেকেই ফোনে সময় চেয়ে নিয়ে এক সকালে পৌঁছে গেলাম অভিনেতা সপ্তর্ষি রায়ের আবাদ বরানগরের অশোকগড়ে৷ দীর্ঘদেহী, সুঠাম গড়নের অভিনেতা সপ্তর্ষি তখন স্বান্ত্য চর্চায় ব্যস্ত৷ আমাদের আনার খবর পেয়েই চইং রুমে এসে হাজির৷ প্রাথমিক পরিচয় পর্ব শেষ করে শুরু করলাম প্রশ্নোত্তর পর্ব৷ সদাহাস্য সপ্তর্ষি কোনো প্রশ্নই না এড়িয়ে উত্তর দিয়ে চললো৷
প্রশ্ন: বিভিন্ন সূত্র থেকে আমরা যা জেনেদি তুমি বরাবরই পড়াশোনায় খুবই ভালো মাত্র দিলে৷ চেষ্টা করলেই অন্যকোনো পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতে৷ তাহলে হঠাৎ করেই অভিনয়ে কেনো?
সপ্তর্ষি(হেসে) : একেবারেই হটাৎ করে নয়৷ অভিনয়ের সাথে আমি এক্কেবারে ছোট থেকেই জড়িয়ে রয়েছি৷ আর এর জন্য পুরো উৎসাহটাই আমার বাবার কাছ থেকে পেয়েছি৷
প্রশ্ন: অভিনয়ে উৎসাহ প্রদানে বাবা? একটু যদি খুলে বলো৷
সপ্তর্ষি : আমার বাবা পেশায় শিক্ষক হলেও অভিনয়, পরিচালনা ও লেখালেখি ওনার নেশা৷ যখন থেকে বুঝতে শিখেছি, দেখেছি এসবের মধ্যেই বাবা ডুবে রয়েছেন৷ তাই নিজের অজান্তেই আমিও যেনো কখন অভিনয়টাকে ভালোবেসে ফেললাম৷
প্রশ্ন: তার মানে তোমার অভিনয়ের প্রথম পাঠ তোমার বাবার হাতেই?
সপ্তর্ষি: একদম তাই৷ ক্লাস টুয়ে পড়বার সময় স্কুলের অনুষ্ঠানে বাবার পরিচালনায় সুকুমার রায়ের অবাক জলপান নাটকে অভিনয়ের হাতেখড়ি৷ এরপর প্রায় নিয়মিত স্কুলের ও এলাকার নানা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে নিজের জড়তা কাটানো ও মঙ্গটাকে ভালোবেসে ফেলা৷
প্রশ্ন : তোমার পড়াশোনাও তো নাটক নিয়েই?
সপ্তর্ষি: হা, উচ্চমাধ্যমিক সায়েন্স নিয়ে পড়ার পর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাটক নিয়েই পড়াশোনা৷ কেমিস্ট্রিতে অনার্স নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন৷ তারপর….
প্রশ্ন: আজকে তোমার এই অভিনেতা হয়ে ওঠার পেছনে রবীন্দ্রভারতীর অবদান কতটা?
সপ্তর্ষি, একতাল কাঁচা মাটিকে প্রতিমার রূপ দেওয়ার জন্য একজন মৃৎশিল্পীর অবদান কতটা, রবীন্দ্রভাচারী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের অবদান তার চাইতে বেশি বই কম নয়৷
প্রশ্ন: ক্যামেরার সামনে তোমার প্রথম অভিনয় কবে?
সপ্তর্ষি (হেসে) : সেটির পেছনেও আমার পিতৃদেবের অবদান রয়েছে৷ উনি ওনার শিক্ষকতার পেশায় ছুটি পেলেই মাঝে মাঝে টেলিফিল্ম বানাতেন৷ সেখানেই অনেকসময় আমাকে দিয়ে নানা চরিত্র করিয়ে নিতেন৷ ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা সেখান থেকেই৷ পরবর্তী সময়ে পরিচালক ফাল্গুনী সান্যালের (তিনি আমার শিক্ষকও) তৎকালীন ই টিভি বাংলায় সম্প্রচারিত যখন একুশে পা মেগা সিরিয়ালে শিশু শিল্পীর ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ পাই৷ এর পর পরিচালক সুশান্ত বোস এর পরিচালনায় একটি টেলিফিল্মে অভিনয়ের সুযোগ আসে ওই শিশু শিল্পী হিসেবেই৷
প্রশ্ন: তাহলে নাটকের অভিনয়ে কি ভাটা পড়ে যায়?
সপ্তর্ষি : না না একেবারেই তা নয়৷ বরানগর মুক্তধারা বলে আমাদের নিজেদের একটা নাটকের দল দিল৷ সেখানে নিয়মিত অভিনয় করেছি৷ এখনো সুযোগ পেলেই করি৷
প্রশ্ন: অভিনয়কেই পুরোপুরি সময় দিতে শুরু করলে কবে থেকে?
সপ্তর্ষি: বছর দুয়েক আগে পরিচালক সুশান্ত বোস আকাশ আট চ্যানেলে ইকির মিকির নামে একটি মেগা সিরিয়ালে নায়কের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য অডিশনের মাধ্যমে আমাকে নির্বাচিত করেন৷ সেখানে অভিনয় করতে করতে মনে হলো যে অভিনয়টাই আমার আসল জায়গা৷ আমার এই ক্ষেত্রেই থাকা উচিৎ৷
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে তে তো তুমি আরো একটি মেগা সিরিয়ালে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করছো?
সপ্তর্ষি: হা, জি বাংলায় সোম থেকে শুক্র রাত সাড়ে নটায় সম্প্রচারিত মিঠিঝোরা মেগা সিরিয়াল এ প্রধান পুরুষ চরিত্র শৌর্য-এর ভূমিকায় আমি রয়েছি৷
প্রশ্ন: এখন তো সিরিয়াল, সিনেমার পাশাপাশি ওয়েব সিরিজের একটা দারুন জায়গা রয়েছে৷ সেখানে অভিনয়ের চেষ্টা করছো না তুমি?
সপ্তর্ষি (হেসে): আমি হৈ চৈ এর নিখোঁজ, টুং লুং এ একেন আর বোধন টু, এই তিনটি সিরিজে অভিনয় করেছি৷
প্রশ্ন: বাহ্ যাহ, তাহলে তো অভিনয়ের প্রায় সব মাধ্যমেই অভিনয় করছো৷ সিনেমার পর্দায় আমরা তোমাকে কবে দেখতে পাবো?
সপ্তর্ষি: খুব শিগগিরই দেখতে পাবেন৷ ‘হারায়ে খুঁজি তারে’ নামে একটি ফিল্মে আমি প্যারালাল হিরোর ভূমিকায় অভিনয় করেছি৷ সেটিও এর মধ্যেই রিলিজ হবে৷
প্রশ্ন: এতগুলো মাধ্যমে অভিনয় করছো তুমি৷ তোমার সেরা প্রাপ্তি কি?
সপ্তর্ষি: দর্শকদের ভালবাসা, তাদের মনে নিজের জায়গা পাওয়া৷ কোনো পুরস্কারই এর থেকে বড় নয়৷
প্রশ্ন: যতদূর শুনেছি তুমি বিবাহিত নয়৷ কোনো মনের মানুষ?
সপ্তর্ষি (হেসে): না না, বিয়ের কথা এখন ভাবছিই না৷ আগে তো পায়ের তলার মাটি শক্ত হোক৷ আর মনের মানুষ?? সে ব্যাপারে না হয় আরেকদিন কথা হবে(হাসি)৷
প্রশ্ন: বেশ বেশ৷ তোমার সাথে কথা বলে খুব ভালো লাগলো৷ আগামীদিনেও তোমাকে এভাবেই খোলামেলা আলোচনায় পাবো আশা করি?
সপ্তর্ষি: একদম৷ আমার বাবা এখনও আমাকে একটা কথা রোজ বলেন, ‘মাথা আকাশে ঠেকলেও পা যেনো মাটিতে থাকে’৷ এটা আমার কাছে গীতার বাণীর চাইতেও বেশী৷ তাই দর্শকের ভালোবাসা আর আপনাদের শুভেচ্ছায় যতদূর এগোই না কেনো, আমি আপনাদের সবার কাছের মানুষ হয়েই থাকতে চাই৷