ভাঙা বনেদ আর স্মৃতিমেদুরতার ছবি

মুক্তি পেল মানসী সিনহা পরিচালিত দ্বিতীয় ছবি ‘৫ নম্বর স্বপ্নময় লেন’। প্রথম ছবি ‘এটা আমাদের গল্প’-এর সাফল্যের পর, আবার সাধারণ মানুষের জীবনযাপন, যৌথ পরিবারের হারানো স্মৃতি উঠে এল মানসীর ছবিতে। চন্দন সেন, অপরাজিতা আঢ্য, খরাজ মুখোপাধ্যায়ের মতো ভেটেরনদের পাশাপাশি ছবিতে দেখা গেল অন্বেশা হাজরা, অর্জুন চক্রবর্তী, পায়েল মুখোপাধ্যায় আর সায়নকে।

ছবিটি শুরু হয় সাদা-কালো লুক নিয়ে। পরিচালক এখানে একটি পুরনো অধ্যায়কে তুলে ধরতে চাইলেন। দেশভাগের পরবর্তী সময়ে যখন উত্তর কলকাতাতে রয়ে গিয়েছিল কিছু একান্নবর্তী পরিবার। এ হল সেই উত্তর কলকাতার সেই সব বড় বড় থামওয়ালা বাড়ির গল্প। উঠোন দালান আর খড়খড়ি দেওয়া জানালার গল্প। এক যৌথ পরিবারের গল্প, যা অনের মনেই কিছু স্মৃতি উসকে দেবে। রবীন্দ্র জয়ন্তীর ছাদের জলসা থেকে আকাশবাণী কলকাতা রেডিয়ো স্টেশনের স্মৃতি ফেরাবে।

কিন্তু এই সাদা-কালো টোন থেকে ছবিটি বেরিয়ে আসে গৃহকর্তার মৃত্যুর পর, যখন বাড়িটি বিক্রি করে সদস্যরা পরিবার ভেঙে আলাদা আলাদা ফ্ল্যাটে স্থানান্তরিত হয়। ‘৫ নম্বর স্বপ্নময় লেন’ কিন্তু এই প্রজন্মের দুটি মেয়ে, দুষ্টু আর মিষ্টির কাছে একটা অন্য আবেগ। পরিবারটাকে জোড়া লাগাতে এবং প্রৌঢ় সদস্যদের তাদের হারানো ভিটে ফিরিয়ে দিতে এরপর দুই বোন নিজেদের বিয়ের গয়না পর্যন্ত বিক্রি করতে প্রস্তুত হয়।


মানসী তাঁর ছবিতে ‘ওল্ড ভ্যালুজ’ এবং ‘ইমোশন’-কেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ফলে ৫ কোটি টাকার বিনিময়ে আবার নিজেদের নোনাধরা ভিটেবাড়ি, পুনরায় কিনে নেওয়ার নেপথ্যে কতটা যুক্তি আছে সে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। বরং এখানে ধরে নিতে হবে মেয়েদুটি স্রোতের বিপক্ষে গিয়েই এই উদ্যোগ নিয়েছে। পরিবারই তাদের ফার্স্ট প্রায়োরিটি। টেলি ধারাবাহিকে মানসী বেশ জনপ্রিয়, ফলে দীর্ঘদিন টেলি মাধ্যমে কাজ করার সুবাদে দর্শকদের আবেগ ও পাল্সটা তাঁর জানা। সেটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন ছবিতে। বাঙালি স্মৃতি রোমন্থন করতে ভালোবাসে। ফলে নস্টালজিয়াই তাঁর প্রধান হাতিয়ার। অভিনয়ে চন্দন সেন অসামান্য। কিছু মুহূর্তে খরাজ, অপরাজিতা ও চন্দনের স্ক্রিন শেয়ারিং আলাদা মাত্রা পেয়েছে। স্বপ্নময় লেনের আবেগকে আশকারা দিতে, পরিবার নিয়ে একটা দিন হলমুখো হতেই পারেন।