প্রথম ছবিতেই বাজিমাত সংগীতশিল্পী শ্রেষ্ঠা দাসের

এবারের পুজোয় মুক্তি পেয়েছে শিবপ্রসাদ মুখার্জি ও নন্দিতা রায়  পরিচালিত ছবি ‘বহুরূপী’ । আর সেখানেই  তিনটে গান, ‘তুই আমার হয়ে যা’, ‘শিমুল–পলাশ’ আর ‘ডাকাতিয়া বাঁশি’ গেয়ে সকলের মন জয় করে নিয়েছে শ্রেষ্ঠা। বহুরূপী হলে পূর্ণ করেছে ৫০ দিন। দিন যত এগোচ্ছে, গান নিয়ে রিলের সংখ্যা তত বেড়েই  চলেছে সামাজিক মাধ্যমে।

ছোটবেলায় গানের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল? 

ছোটবেলা থেকেই  আমার  সঙ্গীত  মহলে বেড়ে ওঠা।  বাড়িতে সবাই গান জানে।  আমি ঠাকুমা আর মায়ের গান শুনে বড় হয়েছি । তাদের কাছেই আমার প্রথম তালিম নেওয়া।  ছোট থেকেই আমি ভীষণ সুরে গান গাইতাম। সেই অর্থ বলা যেতে পারে যে, গানের তালিম একদম বাড়িতে মা ঠাকুমার কাছে ছোট্টবেলা থেকে শুরু হয়ে গেছিল। 


 বাড়ির পরে তুমি কার কাছে আর গানের তালিম নিয়েছ ?

আমার যখন আট বছর বয়স তখন আমি সন্দীপ নাগ বলে একজন গুরুর কাছে প্রথম তালিম নিতে শুরু করি। এবং সেটা পুরোপুরি  ক্ল্যাসিক্যাল।  খানদানি  ক্লাসিক্যাল বলতে যা বোঝায় আমি সেই তালিম  নিয়েছি । সব সময় ওই ক্লাসিক্যাল গান শোনা, গান গাওয়া- এই মাধ্যমের মধ্যে দিয়েই কিন্তু আমার এগিয়ে চলা ।

তারপরে আস্তে আস্তে নিজের গান লেখা বা নিজের সুর দিয়ে গান গাওয়াটা কবে থেকে শুরু হল?

আমার যখন তেরো বছর বয়স মানে আমি তখন প্রথম একটা ইংলিশ গান লিখি । এবং গানটা সুর করি এবং নিজেই গাই। আমার লিটারেচার পড়তে ভীষণ ভালো লাগল। লিরিক  বা কথার  প্রতি আমি ভীষণ আকৃষ্ট  হই। তাই ইংলিশ লেখার প্রতি আমার একটা আলাদা আগ্রহ ছিল। 

তুমি পরবর্তীকালে আর কার কার কাছে তালিম নিয়েছ?

পরবর্তীকালে আমার গুরুজি হয়েছেন শুভ্রকান্তি স্যার এবং অদিতি ম্যাম । আমি এনাদের কাছে সব ধরনের গানের তালিম নিয়ে চলেছি আজও।  

তোমার স্কুল কলেজ কোথায় ছিল? 

আমার স্কুল ছিল স্কাইসচার্জ। শ্রীশিক্ষাআয়তন থেকে জার্নালিজম নিয়ে  গ্র্যাজুয়েশন করেছি। তারপরে  যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে ফিল্ম স্টাডিজ নিয়ে মাস্টার করি। 

পড়াশুনা এবং গান এই দুটোর মধ্যে কোনটার প্রতি তোমার আগ্রহ সবচেয়ে বেশি  ছিল ? 

আসলে পড়াশোনায় মাথা ভালো ছিল। ভালো রেজাল্ট করেছি।  গানের প্রতি বরাবর আলাদা আকর্ষণ ছিল। তাই আজকে আমি একজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট শিল্পী হওয়ার চেষ্টা করছি। সেটা নিয়েই প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছি। ছোটবেলা থেকেই কিন্তু আমার ইচ্ছে একজন সংগীতশিল্পী হব। আর আমি সবসময়ই  নিজের  ভাবনাটাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। 

সংগীত শিল্পী হিসাবে কবে থেকে কাজ শুরু করলে? 

আমি ছোটবেলা থেকে যেহেতু গান করি গান শিখি আমি কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় একটু আধটু গান গেয়েছি।  বিভিন্ন  ব্যানার,  বিভিন্ন  ব্যান্ডের  সঙ্গেও গান গেয়েছি।  বাড়ির লোকের ভাবনা ছিল আমি অ্যাকাডেমিক্যালি কিছু করব।  কিন্তু  আমি  নিজের ভালোলাগা  গানটাকেই প্রাধান্য দিয়েছি । পড়াশোনা কমপ্লিট করার পর সিদ্ধান্ত নিই একদম গান নিয়ে এগিয়ে যাব। গানটাই আমার  জীবনের  একমাত্র  পরিচয় হবে। সেই অর্থে ২০২১ থেকে আমার এই  জার্নি শুরু হয় । এই সময় আমি একটা  ‘Tomorrow’ বলে গান লিখি। ইংলিশ  র‍্যাপ গান, তাতে সুর দিই এবং গাই।  ওই গানটা আমার  জীবনের বড় টার্নিং পয়েন্ট।  এর পরে আমার টুকটুক করে একটু পরিচিতি হতে থাকে ।  ‘ছোটলোক’ ওয়েব সিরিজে একটা ইংলিশ গান আমি প্রথম গাওয়ার সুযোগ পাই ( darling)।  এছাড়াও বলা যেতে পারে যে বেশ কয়েকটা ছবি এবং ওয়েব সিরিজে আমার গলা আছে । 

‘বহুরূপী’ ছবির গানের ছটায় শ্রেষ্ঠার গান আজকে সকলের মুখে। এই অফারটা কীভাবে এসেছিল?

বনি চক্রবর্তী মানে এই ছবির সংগীত পরিচালকের সঙ্গে আমার আগে থেকেই  আলাপ ছিল। আমাদের  একসঙ্গে একটা অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। সেটা হয়নি। কিন্তু যোগাযোগ ছিল। মাঝে মাঝে টুকটাক কাজ করতাম। হঠাৎই একদিন ফোন করে বলেছিল একটা গান আছে একটু স্ক্র্যাচ গেয়ে দিবি? এগুলো তো আমরা করি মানে, একটা গান যখন তৈরি হয় তখন তো একটা স্ক্র্যাচ গান গাইতে হয়।  আমি সেরকম  ভাবেই স্ক্র্যাচগুলো গেয়েছিলাম । আমি কিন্তু তখন কিছুই জানতাম না । কোন ছবি, ডিরেক্টর কে। কিচ্ছু না। তারপরে হঠাৎই  বনিদা বলল তোর গান সিলেকটেড।

প্রথম কোন গান?

প্রথম গান ছিল ‘ডাকাতিয়া বাঁশি’। গানটা স্ক্র্যাচ গেয়ে আসার পরে আমাকে বলেছিল এই গানটা জানিস তো অ্যাপ্রুভ হয়ে গেছে তোর গলাতে। এবার  দ্বিতীয় গান ‘শিমুল পলাশ’।  আর তৃতীয় গানটা বনিদা বলেছিল যে, এই গানটা তুই গা কিন্তু এটা পরে আবার আরেকজনকে দিয়ে গাওয়ানো হবে। ‘তুই আমার হয়ে যা’। কিন্তু শিবুদা-নন্দিতাদি আমার গলাতেই গানটা রেখে দেন। একটা ছবিতে তিনটে গান গাওয়ার সুযোগ! আমার  জীবনের স্বপ্ন। আর বাকিটা সবই ইতিহাস। 

জীবন কতটা বদলাল?

আমার মাকে খুশি করতে পেরেছি। এটা বড় প্রাপ্তি। আর বনিদা, শিবুদা, নন্দিতাদি আমার কাছে ভগবান। ওনাদের  জন্য আমার গান সবার মুখে মুখে।