কঠিন সময়ে একা থাকতে চাইছেন মালাইকা, মৃত বাবার সঙ্গে মালাইকার পদবির অমিল নিয়ে বাড়ছে কৌতূহল

বলিউড অভিনেত্রী মালাইকা অরোরা তাঁর প্রয়াত পিতা অনিল মেহতা সম্পর্কে একটি হৃদয়বিদারক বিবৃতি দিয়েছেন। যিনি বুধবার নিজের বাসভবনের সাততলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হন। পরিবারের এই কঠিন পরিস্থিতিতে বিমর্ষ মালাইকা ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট করেছেন। সেই পোস্টে তিনি ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে নিতান্তই একা থাকতে চেয়ে ভক্তদের কাছে আবেদন করেছেন। মালাইকা তাঁর পোস্টে লিখেছেন,’আমাদের প্রিয় পিতা অনিল মেহতার আকস্মিক মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন অতি ভদ্র, একজন দাদু হিসেবে তিনি যেমন ছিলেন আত্মত্যাগী, তেমনি স্বামী হিসেবেও তাঁর হৃদয় ছিল প্রেমময়। এবং আমাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। তাঁকে হারিয়ে আমাদের পরিবার খুবই মর্মাহত। সেজন্য সংবাদ মাধ্যম এবং শুভাকাঙ্খীদের অনুরোধ করছি, এই কঠিন সময়ে দয়া করে আমাদের একটু আলাদা থাকতে দিন।’ মালাইকা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের স্বাক্ষরিত এই বার্তাটিতে সমর্থন জানিয়ে যাঁরা পরিবারের পাশে থেকেছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন অভিনেত্রী।

মালাইকার এই পোস্টে সাড়া দিয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে সেলিব্রিটিরাও। অভিনেতা বরুণ ধাওয়ান বিষয়টি নিয়ে পাপারাজ্জিদের আচরণে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। যাঁরা ঘটনার দিন সকালে ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দিতে ব্যস্ত ছিলেন। বরুণ তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে সংবাদ মাধ্যমের সমালোচনা করেছেন। তিনি তাঁর পোস্টে লিখেছেন,’এটা সবচেয়ে সংবেদনশীল বিষয়। কিছু শোকার্ত মানুষের ছবি যাঁরা ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন, তাঁদের কাছে বিনীত অনুরোধ।’ তিনি মানবতাকে গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ মাধ্যমকে এই দুঃখজনক বিষয়ের দৃশ্য প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত এই বেদনাদায়ক ঘটনার পর শ্রদ্ধা জানাতে একাধিক স্বনামধন্য ব্যক্তি শ্রদ্ধা জানাতে অরোরাদের বাড়িতে যান। স্বামী সইফ আলী খানের সঙ্গে গিয়েছিলেন করিনা কাপুর খান। গিয়েছিলেন করিনার দিদি ও মালাইকার ঘনিষ্ঠ বন্ধু করিশ্মা কাপুরও। সেখানে তাঁরা শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া মালাইকার প্রাক্তন প্রেমিক অর্জুন কাপুর, প্রাক্তন স্বামী আরবাজ খানও ঘটনাস্থলে যান। কন্যা অন্যান্য পান্ডেকে সহ অভিনেতা চাঙ্কি পান্ডেও শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মালাইকার প্রাক্তন স্বামী আরবাজ ছাড়াও খান পরিবারের অন্যান্য সদস্য সোহেল খান, সেলিম খান, সালমা খানও সেখানে গিয়ে এই শোকার্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ান। যদিও সলমন খান সেখানে যান নি।


তবে এই মৃত্যুর ঘটনাটিকে নিছক একটি আত্মহত্যার ঘটনা ধরে নিয়ে থেমে থাকতে রাজি নয় মুম্বই পুলিশ। ডিএসপি রাজ তিলক রোশন জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে বিষয়টিকে আত্মহত্যার ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ ঘটনার সমস্ত সম্ভাব্য দিক খতিয়ে দেখছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, দেহটির ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। পুলিশ এবং ফরেনসিক টিম ঘটনার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। জানা গিয়েছে, ঘটনাটি যখন ঘটে, তখন মালাইকা অরোরা মুম্বইতে ছিলেন না। তিনি পুনেতে গিয়েছিলেন। তাঁর বাবার মর্মান্তিক এই মৃত্যুর ঘটনা জানার পরই দ্রুত তিনি মুম্বইতে ফিরে আসেন।

এদিকে বাবার পরিচয় প্রকাশ্যে আসার পর মালাইকার ‘অরোরা’ পদবি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে যথেষ্ট চর্চা শুরু হয়েছে। কারণ মালাইকার বাবার পদবি ‘মেহতা’। আবার মালাইকা ও তাঁর বোনের পদবি ‘অরোরা’। মা হলেন জয়েস পলিকার্প। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে মালাইকা এবং তাঁর বোন অমৃতা ‘অরোরা’ পদবি পেলেন কোথা থেকে? তাহলে কি প্রয়াত অনিল কুলদীপ মেহতা মালাইকার সৎ বাবা ছিলেন? না হলে বাবার সঙ্গে মেয়ের বয়সের ফারাক মাত্র ১২ বছর কী করে হয়? মালাইকার বাবা এবং মায়ের সম্পর্কের মধ্যে কী এমন গোপন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে?

জানা গিয়েছে, মালাইকার বয়স যখন মাত্র ১১, তখনই তাঁর বাবা এবং মায়ের মধ্যে আইনি বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তাঁর মা জয়েস পলিকার্প দুই মেয়ে মালাইকা এবং অমৃতাকে নিয়ে চেম্বুরে চলে যান। তিনি একজন মালয়ালি খ্রিস্টান। আর অনিল ছিলেন পাঞ্জাবি হিন্দু। অনিল পেশায় একজন নাবিক ছিলেন। তিনি ভারতীয় মার্চেন্ট নেভিতে বহুদিন চাকরি করে অবসরগ্রহণ করেন।