বাচিকচর্চা কেন্দ্র ‘বাক্’-এর রজতজয়ন্তী বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বীরেন্দ্রমঞ্চে তাঁরা দর্শকদের উপহার দিলেন একটি অনন্য স্মরণীয় সন্ধ্যা। দু’টি পর্বে বিভক্ত এই অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ট্রাজেডি ‘ম্যাকবেথ’-এর অংশবিশেষের পাঠাভিনয়। ‘রাজা ও রাণী’ শিরোনামে বিশেষ অংশটির ভাষান্তর করেছেন বিশিষ্ট নাট্যশিল্পী অশোক মুখোপাধ্যায়। আর এটিরই শ্রুতি-দৃশ্য অভিনয়ে ছিলেন বাচিকশিল্পী রত্না মিত্র এবং অশোক মুখোপাধ্যায়।
মঞ্চে অভিনয়ের জন্য একদা এই নাটকটির বাংলা অনুবাদ করেছিলেন বাবু গিরিশচন্দ্র ঘোষ। ১৮৯৯ সালে গিরিশচন্দ্র অনূদিত এই বাংলা বইটি প্রকাশিত হয় ম্যাকবেথ নামে। প্রসঙ্গত, রবীন্দ্রনাথের ‘জীবনস্মৃতি’তে আমরা উল্লেখ পাই শেক্সপিয়ারের সঙ্গে কবির বিশেষ পরিচয় ১২ বছর বয়সে। সেই সময় শিক্ষকের নির্দেশে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিদিনই তাঁকে ম্যাকবেথ ছন্দে অনুবাদ করতে হতো। পরবর্তী কালে এই তর্জমা হারিয়ে গেলেও, তখন সকলেই এমনকি বিদ্যাসাগর মহাশয়ও এই অনুবাদের প্রশংসা করেছিলেন। বলা যায়, বাঙালির শেক্সপিয়ার চর্চায় ম্যাকবেথের একটি বিশেষ ভূমিকা আছে।
অশোক মুখোপাধ্যায়ের নাটকটির অংশবিশেষ অনুবাদ খুবই স্বচ্ছন্দ এবং সাবলীল। দ্বৈত পাঠাভিনয়ে তা অনায়াসে মূর্ত হয়ে ওঠে। শ্রুতি-দৃশ্য এই অভিনয়ের বিশেষত্ব কুশীলবদের চরিত্র অনুযায়ী পোশাক ও মঞ্চবিন্যাস। অশীতিপর তরুণ অশোক মুখোপাধ্যায়ের অভিনয় বা চলনভঙ্গির ঋজুতা এবং বিশিষ্ট আবৃত্তিকার রত্না মিত্রের কন্ঠক্ষেপ অথবা হাতের মুদ্রা বা সামান্য গতিভঙ্গিমার বিভঙ্গে, চরিত্রদুটির সঙ্গে সহজেই একাত্ম হয়ে যান দর্শক ও শ্রোতা। উপস্থাপনার এই বিশেষ ধারায় শ্রুতির সঙ্গে যেহেতু যুক্ত হয়েছে দৃশ্য, সেহেতু এই ক্ষেত্রে কুশীলবদের পোশাক, মঞ্চসজ্জা এবং আলোর ব্যবহারেরও যোগ্য সঙ্গতে অভিনয় বিশেষ মাত্রা পেয়েছে।
সেদিনের আরও একটি পরীক্ষামূলক উপস্থাপনা ‘দহন অনিঃশেষ’। শতবর্ষ-উত্তীর্ণ ভিন্নধর্মী তিন ব্যক্তিত্ব সত্যজিৎ রায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবং সলিল চৌধুরীর কবিতা ও গান নিয়ে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য জানলেন ‘বাক্’-এর সদস্যবৃন্দ। এই কোলাজের ভিত্তিভূমি উত্তাল চল্লিশের দশক, যেখানে এই তিন দিকপালের সৃজনে প্রতিবিম্বিত হয়েছে মন্বন্তর, বঞ্চনা ও প্রতিরোধের জাগরণ। সমগ্ৰ অনুষ্ঠান ভাবনা ও পরিচালনায় ছিলেন সংস্থার কর্ণধার রত্না মিত্র।