‘দর্শকদের প্রশংসায় স্পর্ধা বাড়ছে আমার’

পুজোয় মুক্তি পেয়েছে ‘টেক্কা’। বক্স অফিসের হিসেব বলছে ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী প্রায় তিন কোটি টাকার ব্যবসা করেছে এই ছবি। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘টেক্কা’তে একেবারে অন্য লুকে, ভিন্ন চরিত্রে দেখা গেছে রুক্মিণী মৈত্রকে। দর্শকদের বক্তব্য এছবির ভরকেন্দ্র আসলে ‘এসিপি মায়া’ অর্থাৎ রুক্মিণী। তাঁর অভিনয় মানুষকে অবাক করে দিয়েছে। নির্দেশক নিজে বলছেন, রুক্মিণীর প্রশংসা তাঁর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। ২০১১ সাল থেকে তিনি চেয়েছেন রুক্মিণীকে দিয়ে অভিনয় করাতে। শেষ পর্যন্ত ‘টেক্কা’ সেই সুযোগ তৈরি করে দিল।

কিন্তু রুক্মিণী নিজে কী বলছেন এব্যপারে ? ‘টেক্কা’ ছবির প্রিমিয়ারে অফ হোয়াইট শাড়িতে তাঁর স্বভাবসিদ্ধ হাসিমুখে যখন হাজির হলেন রুক্মিণী, চাঁদের আলোর মতোই স্নিগ্ধ লাগছিল তাঁকে দেখতে। কিন্তু পর্দায় তাঁর চরিত্র সম্পূর্ণ এর বিপরীত। ছোট করে ছাঁটা চুল, সানগ্লাসে ঢাকা চোখ, কিছুটা টম বয় ধাঁচের রুক্মিণী এখানে, মোটেই তার আর-পাঁচটা ছবির মতো নন।

মায়াকে দেখে দর্শকদের কী প্রতিক্রিয়া ?


দর্শকরা আমাকে এভাবে গ্রহণ করায় আমি খুবই উচ্ছ্বসিত। ছবির প্রিমিয়ার সন্ধেবেলায় হলেও, মর্নিং শো-গুলোয় হাউসফুল গেছে বলে খবর পাচ্ছি। ‘মায়া’কে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচুর মানুষের প্রশংসাসূচক কমেন্ট পাচ্ছি। এটা দারুণ একটা অনুভূতি। এর আগে যখন ‘বুমেরাং’ ছবিটি করেছি, তখন আমার রোবট-অবতার ‘ইশা’কে যেভাবে মানুষ ভালোবেসেছিলেন, সেটা থেকেই বলতে পারেন একটা সাহস পেয়েছিলাম ‘মায়া’র মতো চরিত্র করার। পুজোয় যে-ধরনের ছবি হয়, সেদিক থেকে অমি বলব মায়াকে একটু অন্যরকমই ভেবেছেন সৃজিত। কিন্তু দর্শকরা মায়াকে এতটা ভালোবাসা দিলেন যে, আমি আপ্লুত।

এখনও ছবি রিলিজের আগে কি একটা নার্ভাসনেস কাজ করে রুক্মিণীর ?

অবশ্যই। ‘টেক্কা’ ছবিটা কমপ্লিট হওয়ার পরেও আমি দেখিনি। দেখেছি প্রিমিয়ারে। সেখানে দর্শকদের ভালো লাগেছে দেখে বেশ একটা স্পর্ধা তৈরি হচ্ছে, আবার নতুন কিছু করার।

বর্তমান সময়ে আরজি করের ঘটনায় পুলিশের ভাবমূর্তি কিছুটা খর্ব হয়েছে। ‘এসিপি মায়া’ কি সেই ইমেজ কিছুটা পরিবর্তন করতে পারলেন ?

সিনেমা সমাজের বাস্তব ঘটনা থেকেই উঠে এলেও, দিনের শেষে মানতেই হবে সিনেমা কিন্তু সমস্ত সমাধানের পথ দেখায় না। ‘টেক্কা’র ক্ষেত্রে এটুকু বলতে পারি, ‘মায়া’ একজন মহিলা অফিসার হওয়া সত্ত্বেও- জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশনকে পাত্তা দেয় না। তাই সে তার সবটুকু শক্তি, সবটা সাহসকে কাজে লাগিয়ে দেয় অপরাধ দমন করতে। এছবিতে পুরুষত্বের প্রতীক হল মায়া। সে সবল, রাফ অ্যান্ড টাফ হলেও, একটা মানবিক মন বেরিয়ে আসে চরিত্রটার মধ্যে থেকে। সেই জন্যেই সে মায়া।

কিছু পেশায় কি জেন্ডার আইডেন্টিটিটা ম্যাটার করে? 

না। আমরা যে-কোনও ফিল্ডেই কাজ করি না কেন, সেটা ন্যায়ের ক্ষেত্রটাতেই হোক বা পুলিশ বা শিক্ষক- সবথেকে আগে যেটা ম্যাটার করে সেটা হল মানুষ-সত্তাটাকে বাঁচিয়ে রাখা। ‘মায়া’ সেটাই করেছে। বাকিটা দর্শকরাই বিচার করবেন।

রুক্মিণীর কি সফ্ট চরিত্রের পরিবর্তে একটু রাফ অ্যান্ড টাফ ভূমিকাই পছন্দ ?

আমার তো যে-কোনও অদ্ভূত, একটু কোয়ার্কি, একটু ম্যাড চরিত্রই পছন্দ (হাসি)। আমার সাহসটা আসলে একটু বেশি। কখনও ন্যাড়া হয়ে যাই, বা চুল একদম ছোট করে ছাঁটি। এরপর দেখবেন হাঁটু অবধি চুল। সেটার ঝলকও শিগ্গিরিই পাবেন দর্শকরা। কখনও রোবট, কখনও পুলিশ কখনও আবার বাঙালির আইকনিক নটী- সব মিলিয়ে এই ভ্যরিয়েশনটাই আমার দারুণ লাগে।

পর্দায় নারী চরিত্রগুলো কি খুব দ্রুত বদলাচ্ছে ?

আমার মনে হয় এই পরিবর্তনের সময়টা এসে গেছে। খোলা চুলের গ্ল্যামারাস নায়িকা কেন শুধু হবে! সমাজে মেয়েরা তো সকলে একরকম হয় না। কেউ মানসিকভাবে খুব স্ট্রং, কেউ বেশি ইমোশনাল, কেউ মায়াময়ী। সব মিলিয়ে মেয়েরা তাদের নিজের মতোই।

পরের ছবি নটী বিনোদিনী নিয়ে কতটা আশাবাদী ?

এই ছবির ট্রেলার সমস্ত প্রেক্ষাগৃহে দেখানো শুরু হয়ে গেছে। কিছুদিনের মধ্যে অফিশিয়াল লঞ্চ হলেই সবার ফোনে ফোনে ঘুরবে এই ট্রেলার। দর্শকদের উৎসাহ দেখে আমিও যথেষ্ট আশাবাদী নটী বিনোদিনী নিয়ে। আমিও ছবিটি রিলিজ হওয়ার অপেক্ষায় আছি।