খুব কম সময়ের ব্যবধানে অনেকগুলো চরিত্রে অভিনয় করে ফেললেন অনির্বাণ চক্রবর্তী। দুটো ওয়েব শো এবং চারটি ছবিতে নানা রূপে দেখা গেল তাঁকে। এক কথায় বাঙালি দর্শকদের মনে বেশ একটা পাকাপাকি ঠাঁই করে নিয়েছেন আনির্বাণ। তাঁর এই সাফল্য নিয়ে কী বলছেন অভিনেতা, জেনে নেওয়া যাক।
ডিসেম্বরে তিনটে ব্যাক টু ব্যাক রিলিজ, জানুয়ারিতে আবার তিনটে। আপনি তো সেরগেই বুবকার মতো নিজেই নিজের রেকর্ড ভাঙছেন!
না না সেরকম কিছু নয়, এটা নিতান্তই একটা কাকতালীয় ঘটনা (হাসি)। ২০২৪-এর ডিসেম্বরের ২০ তারিখে তিনটে রিলিজ হয়েছে। দুটো ছবি ‘খাদান’ এবং ‘চালচিত্র’, আর ওয়েব সিরিজ ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’। জানুয়ারিতেও তিনটে রিলিজ আছে, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের ‘অপরিচিত’ এবং সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’। সেই সঙ্গে ওয়েবে মুক্তি পাচ্ছে পুরীতে তৈরি হওয়া একেনবাবুর নতুন সিজন, ‘পুরোপুরি একেন’। লাস্ট দেড় বছর ধরে করা কাজগুলো সব দু’মাসের মধ্যে রিলিজ হয়ে যাচ্ছে, এটাই হল আসল কারণ।
এতগুলো আলাদা রকমের চরিত্র, কখনও কখনও তো পনেরো দিনেরও বিরতি পাওয়া যায় না। একটা চরিত্র ভেঙে বেরিয়ে অন্যটাতে— এই সুইচ অন সুইচ অফে অসুবিধা হয় না ?
না অসুবিধে তো হয়ই না বরং আমি খুব এনজয় করি। অনেক সময় শ্যুটিং ওভারল্যাপ হয়, তখন দেখা যায় পর পর দু’দিন একটা চরিত্র করে, পরের দুটো দিন অন্য চরিত্র করতে হচ্ছে। আমি যেহেতু অভিনয় করা ছাড়া দৈনন্দিন জীবনে আর অন্য কিছুতে যুক্ত নই, আড্ডা বা পার্টিতেও আমি থাকি না- ফলে চরিত্রগুলো নিয়ে ভাবা বা নিজের প্রস্তুতিতেই বেশি সময় দিই। প্রস্তুতি ছাড়া সেট-এ যাই না।
স্টেজ থেকে আপনার অভিনয়ের শুরু। আপনার পরবর্তী জার্নিটায় মঞ্চাভিনয় কীভাবে আপনাকে সাহায্য করেছে?
আমি আসলে খুব ছোট থেকেই মঞ্চে অভিনয় করি। অভিনয় আমার পেশা ছিল না, আমি পড়াতাম একটি কলেজে। কিন্তু স্টেজে অভিনয়ে কখনও ছেদ পড়েনি। বর্তমানে সংখ্যাটা কমে গেলেও, এখনও করি। আমার যেটুকু অভিনয় শেখা, সেটা মঞ্চের মাধ্যমেই হয়েছে।
কিন্তু প্রয়োগের ক্ষেত্রে মঞ্চাভিনয় আর স্ক্রিনে অভিনয়ের মধ্যে কিছু টেকনিকাল ফারাক রয়েছে। যদিও কমন সেন্সের মাধ্যমে অনেকটাই ম্যনেজ করে নেওয়া যায়, তবু আমি বরাবর নানা জিনিস, শেখার চেষ্টা করেছি ডিওপি বা অন্যদের থেকে। বিশেষ করে টেকনিকাল টার্মগুলো, লেন্সের ভ্যারিয়েশন প্রভৃতি শট দেওয়ার সময় যা কাজে লাগে। জিজ্ঞেস করতে কখনও লজ্জা পাইনি, ওভাবেই এখনও শিখে চলেছি।
‘একেনবাবু’ এবং অনির্বাণ নামদুটো প্রায় সমার্থক হয়ে গেছে। এই ‘একেনবাবু’ হয়ে ওঠার প্রসেসটা কেমন ছিল?
আমার জীবনের প্রথম প্রধান চরিত্র ‘একেনবাবু’। এটা যখন আমায় করতে করতে ডাকা হল, সত্যি বলতে কী এই চরিত্রটার কথা বা ছাপা অক্ষরে গল্পগুলো যে রয়েছে- সেটা আমার জানা ছিল না। চিত্রনাট্য শুনে আমি মনে মনে লোকটির একটা আদল তৈরি করে অভিনয় করলাম। যে-চরিত্রটা একটু বেশি কথা বলে, হাত পা বেশি নাড়ায়, খানিকটা ছেলেমানুষী আছে। এভাবেই শুরু।
ক’দিন পরেই মুক্তি পাবে পুরীতে শ্যুট হওয়া নতুন একেন। এবারটা নিয়ে, মোট আটটা সিজন আর দুটো ছবি- সব মিলিয়ে ১০ বার আমার একেনের ভূমিকা করা হয়ে গেল। মজার ব্যপার হল দশবার এটা প্লে করতে দশ বছরও যায়নি।
খেয়াল করবেন, আমাদের গোয়েন্দা চরিত্রগুলো কিছুটা হিরোইক। একেন কিন্তু একেবারেই তেমন নন। বরং আমি খুব আবছা একটা মিল পেয়েছি ‘করমচাঁদ’-এর সঙ্গে। ওরকম আনমনা, ভুলো একটা ট্রেট আমি একেনবাবুর মধ্যে দেখেছি। প্রতিবার একেন করার সময় ছোট ছোট কিছু বৈশিষ্ট্য আমি যোগ করতে করতে গেছি।
‘খাদান’-এ ‘মান্ডি’র চরিত্রটা করলেন। এটা একেবারে বাণিজ্যিক মেইনস্ট্রিম সিনেমা, যেখানে হিরোকে মানুষ লার্জার দ্যান লাইফই দেখতে চায়। এই ধরনের ছবিকে আপনি কীভাবে দেখেন ?
আমি আগের বছরও একটা বাণিজ্যসফল ছবি করেছিলাম ‘প্রধান’। আমার সে অর্থে কোনও ছুঁৎমার্গ নেই যে, আমি শুধু নির্দিষ্ট একটা টাইপ মেনেই কাজ করব। চরিত্রটা পছন্দ হওয়াই গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি বাণিজ্যিক ছবি সফল হওয়া খুব জরুরি। কারণ ব্যবসায়িক সাফল্য এলে তবেই ইন্ডাস্ট্রিতে সেটা রোল করবে। কোনও ইন্ডাস্ট্রিই একধরনের ছবি বানিয়ে কিন্তু সার্ভাইভ করতে পারবে না।
‘অপরিচিত’ ছবিটা রিলিজের মুখে। একে থ্রিলার তার ওপর শার্লক হোমসের শহরে শ্যুটিং! অভিজ্ঞতাটা কেমন ?
মূল লন্ডন শহরে কিন্তু এটা শ্যুট হয়নি। লন্ডন থেকে ট্রেনে এক ঘন্টা দূরত্বে অল্ডারশট বলে একটা জায়গায় শ্যুট হয়েছে।
এই জায়গাটার এমন একটা ঠান্ডা, ভেজা স্যাঁতসেঁতে, মেঘলা মেঘলা ভাব ছিল, যা থ্রিলারের পটভূমি হিসাবে আদর্শ। ছবিটা আসছে ১০ জানুয়ারি।
টালিগঞ্জের বহু নির্দেশকের সঙ্গেই একাধিকবার করে কাজ করা হয়ে গেল আপনার। এর দরুন আলাদা করে কী প্রাপ্তি হয়?
সৃজিতের সঙ্গে সিরিজ আর ছবি নিয়ে আমার সাতটা কাজ হয়ে গেল। জয়দীপদার সঙ্গে দশটা কাজ হয়েছে। প্রতিমের শেষ তিনটি কাজই আমি পরপর করেছি। একজন অ্যাক্টর ও ডিরেক্টর যদি বারবার একসঙ্গে কাজ করেন, তখন দু’জনের বোঝাপড়াটা অনেক সহজ হয়ে যায়। নির্দেশক বোঝেন এই অভিনেতা কী করতে পারেন, নতুন কী চরিত্র দিয়ে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে। এই টিউনিংটা খুব সাহায্য করে আমায়।
সৃজিতের ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’ ছবিটার বিষয়ে কী বলবেন?
‘এক রুকা হুয়া ফ্যায়সলা’-র মতোই বারোটি চরিত্র এই ছবিতেও প্রাধান্য পেয়েছে। গল্পটাকে ওঁর নিজের মতো করে ইন্টারপ্রেট করেছেন সৃজিত। কলকাতায় যদি ঘটনাটা ঘটে, তাহলে কেমন হবে- এভাবে সৃজিত অ্যাডাপ্ট করেছেন। একটা খুনের মামলা যেটার কোনও কনক্লুশনে পৌঁছনো যাচ্ছে না। এক সময়ে জুরিবোর্ডকে এরকম মামলার ক্ষেত্রে বলা হতো যে, আপনারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একটা সম্মতিতে আসুন। এখন আর এই সিস্টেমের কোনও অস্তিত্ব নেই। তাই সমকালীন করতে, সৃজিত ঘটনাটার মূল্যায়ন করাচ্ছেন বারোজন আলাদা মানুষকে দিয়ে, যাদের ব্যাকগ্রাউন্ড আলাদা। আমি ‘আগরওয়াল’ বলে একটি চরিত্র করেছি, যিনি কলকাতায় বসবাসকারী একজন ব্যবসায়ী।